আঁচ মিলেছিল কয়েক দিন আগেই। এবার তা সত্যি প্রমাণ করে খারকিভে নতুন করে হামলা শুরু করেছে রুশ সেনারা। ইউক্রেন সরকার জানিয়েছে, বুধবার দেশটির উত্তরাঞ্চলের ওই শহরে রুশ বাহিনীর গোলাবর্ষণে সাত জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
চলতি সপ্তাহের শুরুতেই উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছিল খারকিভের পূর্ব দিকে জড়ো হয়েছে রুশ সেনার বিশাল কনভয়। কয়েকশো ট্যাঙ্ক, ‘ইনফ্যান্ট্রি কমব্যাট ভেহিকল্’, ‘আর্মড পার্সোনেল ক্যারিয়ার’, ট্রাক ও অন্যান্য যুদ্ধযানের প্রায় ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ বহর দেখে আন্দাজ করা হয়েছিল, খারকিভ দখল করেই পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনে ঢুকতে চাইছে রুশ বাহিনী।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সেনা অভিযানের ঘোষণার পরেই পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস (দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে একত্রে এই নামে ডাকা হয়) সীমান্ত এবং বেলারুশ সীমান্ত থেকে খারকিভ দখলের অভিযান শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখনও ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর দখলে পুরোপুরি সাফল্য পায়নি রুশ সেনারা।
একই ভাবে রাজধানী কিয়েভ-সহ ইউক্রেনের উত্তর, উত্তর-পূর্বে অন্য বড় শহরগুলো দখল করতে ব্যর্থ হয়েছে রুশ বাহিনী। চেরনোবিল, চেরনিহিভের মতো শহর দখল করেও সেগুলো ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হয়েছে তাদের। এমনকি, ডনবাস এলাকাতেও নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব পায়নি রুশ সেনারা।
এমন পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে ‘সিরিয়ার কসাই’ নামে পরিচিত জেনারেল আলেকজান্দার দর্নিকভের হাতে পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনে সেনা অভিযানের দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন পুতিন। অতীতে সিরিয়ার যুদ্ধে বহু অসামরিক নাগরিককে খুনের অভিযোগ রয়েছে ওই রুশ জেনারেলের বিরুদ্ধে। বুচা, মারিওপোল-সহ বিভিন্ন শহরে গণহত্যার পেছনেও দর্নিকভের ‘ভূমিকা’ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ইউক্রেন।
কে এই জেনারেল দভরনিকভ?
দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার দিন থেকেই তার কপালে ‘কসাই’ খেতাব জোটে। এরপর সিরিয়ার আলেপ্পোতে হামলার সময়ও কসাই হিসেবেই তাকে চিনত লোকে। এবার ইউক্রেনে থাকা রাশিয়ান বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হয়েছেন দভরনিকভ। ১৯৯৯ ও ২০০০ সালে তার নেতৃত্বেই রাশিয়ান মোটর রাইফেল ডিভিশনই চেচনিয়ার রাজধানী গ্রজনিতে হামলা চালিয়েছিল।
চেচেন যুদ্ধে রাশিয়ান বাহিনীর নিক্ষিপ্ত রকেট আর্টিলারি, নিষিদ্ধ ক্লাস্টার বোমা, ও ক্রুজ মিসাইলের আঘাতে গ্রজনির কয়েক হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিলেন। পুরো শহর পরিণত হয়েছিল ধ্বংসস্তূপে।
বর্তমানে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মারিওপোলের ক্ষেত্রেও রাশিয়া একই রণকৌশল অবলম্বন করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইউক্রেন কর্র্তৃপক্ষ দাবি করেছে, রাশিয়ান বাহিনী ইতিমধ্যে কয়েক হাজার সাধারণ নাগরিককে হত্যা করেছে এবং শহরের প্রায় প্রতিটি ভবনে নিজেদের হামলার নিদর্শন রেখেছে।
২০১৫ সালে সিরিয়ায় রাশিয়ান বাহিনীর দায়িত্ব দভরনিকভের হাতে তুলে দেন ভ্লাদিমির পুতিন। দায়িত্ব পেয়ে সিরিয়ান প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের গদি রক্ষা করেন দভরনিকভ। পরে বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি আলেপ্পোর দখল নিতেও সমর্থ হন তিনি। আলেপ্পোতেও গ্রজনির যুদ্ধকৌশল ব্যবহার করেছিলেন দভরনিকভ। ইউক্রেনিয়ান লে. জেনারেল রোমানেনকো বলেন, ‘তার পথে কোনো কিছুই বাধা হয়ে উঠতে পারে না। তিনি পুরনো সোভিয়েত কৌশল ও রাশিয়ান কৌশল দুটোই ব্যবহার করেন’।