গণমাধ্যম মালিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের সম্পর্ক ও তাদের মধ্যকার বিরোধ উত্থাপন ও নিষ্পত্তি, নিম্নতম বেতন হার নির্ধারণ, গণমাধ্যমকর্মীদের কল্যাণ ও চাকরির শর্ত ও কর্মপরিবেশসহ গণমাধ্যমকর্মীদের আইনি সুরক্ষা দিতে ‘গণমাধ্যমকর্মী চাকরি শর্তাবলি বিল-২০২২’ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ উত্থাপিত এ বিলে গণমাধ্যমকর্মীদের সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ৪৮ ঘণ্টা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সোমবার (২৮ মার্চ) বিকেলে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে তথ্যমন্ত্রী এ বিল উপস্থাপন করেন। পরে বিলটি অধিকতর যাচাই বাছাই করার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
বিলে বলা হয়, সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ৪৮ ঘণ্টার অতিরিক্ত কাজ করালে ওভারটাইম দিতে হবে। এছাড়া কোনো গণমাধ্যমকর্মীর বয়স ৫৯ বছর হলে বা ২৫ বছর চাকরি পূর্ণ করার পর অবসর নিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে অবসরগ্রহণকারীকে গণমাধ্যম মালিক প্রত্যেক পূর্ণ বছরের জন্য ৩০ দিনের মূল বেতন দিতে হবে।
বিলে আরও বলা হয়েছে, গণমাধ্যমকর্মীদের শ্রেণি বিভাগ ও শিক্ষানবিশি: কাজের ধরন ও প্রকৃতির ভিত্তিতে গণমাধ্যমে নিয়োগকৃত গণমাধ্যমকর্মী শ্রেণি হবে অস্থায়ী বা সাময়িক, শিক্ষানবিশ এবং স্থায়ী চাকরি। নিয়োগপত্র ও পরিচয় প্রদান: কোনো গণমাধ্যম মালিক নিয়োগপত্র না দিয়ে কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে পারবেন না। নিয়োগকৃত গণমাধ্যমকর্মীকে ছবিসহ পরিচয়পত্র দিতে হবে।
গণমাধ্যমকর্মীর বেতনকাল ও বেতন পরিশোধের সময়: কোনো গণমাধ্যমকর্মীর বেতনকাল ১ মাসের অধিক হবে না এবং পরবর্তী মাসের প্রথম সাত দিনের মধ্যে বেতন পরিশোধ করতে হবে। কতিপয় ক্ষেত্রে কর্মকাল গণনা: কোনো গণমাধ্যমকর্মী কোনো গণমাধ্যমে পূর্ববর্তী ১২ মাসের বাস্তবে অন্যান্য ২৪০ দিন কাজ করে থাকলে ১ বৎসর এবং অন্যূন ১২০ দিন কাজ করে থাকলে তিনি ৬ মাস ওই গণমাধ্যমে অবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করেছেন মর্মে গণ্য হইবে।
মৃত্যুজনিত সুবিধার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে: যদি কোনো গণমাধ্যমকর্মী কোনো মাধ্যমে মালিকের অধীনে অবিচ্ছিন্নভাবে কোনো এক বছর চাকরি থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তাহলে গণমাধ্যম মালিক মৃত গণমাধ্যমকর্মীর কোনো মনোনীত ব্যক্তিকে বা মনোনীত ব্যক্তির অবর্তমানে তার উত্তরাধিকারীকে তার প্রত্যেক পূর্ণ বছরের বা উহার ৬ মাসের অধিক সময়ের চাকরির জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ দিনের এবং গণমাধ্যমে কর্মরত অবস্থায় কর্মকালীন দুর্ঘটনার কারণে পরবর্তীতে মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৪৫ দিনের বেতন দিতে হবে।
কর্মঘণ্টা: সকল গণমাধ্যমকর্মীকে কোনো গণমাধ্যমে সপ্তাহে অন্যূন ৪৮ ঘণ্টা কাজ করাতে পারবে। উপধারা-১ এ যাই থাকুক না কেন কোনো গণমাধ্যমকর্মীকে নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত কাজে নিয়োজিত করা যাবে, তবে ৪৮ ঘণ্টার অতিরিক্ত সময় কাজের জন্য তাকে বিধি মোতাবেক অধিকাল ওভারটাইম ভাতা দিতে হবে।
ছাঁটাই ও ছাঁটাইকৃত গণমাধ্যম কর্মীর পুনঃনিয়োগ: কোনো গণমাধ্যমে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সংখ্যক গণমাধ্যমকর্মী থাকলে উক্তরূপ অতিরিক্ত গণমাধ্যমকর্মীকে চাকরি হতে ছাঁটাই করা যাবে, তবে ওই বিষয়ে সরকারকে অবিলম্বে ও লিখিতভাবে অবহিত করতে পারবে। সেক্ষেত্রে কোনো গণমাধ্যমকর্মী কোনো গণমাধ্যম মালিকের অধীনে অবিচ্ছিন্নভাবে কমপক্ষে ১ বছর চাকরি করে থাকেন, তাহলে তাকে ছাঁটাই করার ক্ষেত্রে দুর্টি শর্ত মানতে হবে। (ক) ছাঁটাইয়ের কারণ উল্লেখ করে তাকে এক মাসের লিখিত নোটিশ দিতে হবে অথবা ১ মাসের মূল বেতন দিতে হবে। (খ) ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রত্যেক বছর চাকরির জন্য ৩০ দিনের মূল বেতন দিতে হবে।
অব্যাহতি: নিবন্ধিত চিকিৎসক কর্তৃক প্রত্যয়িত সনদ দ্বারা শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতা বা অব্যাহত ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে যে কোনো গণমাধ্যমকর্মীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে। অব্যাহতিপ্রাপ্ত কোনো গণমাধ্যমকর্মী অন্যূন ১ বছরের অবিচ্ছিন্ন চাকরি সম্পন্ন করলে গণমাধ্যম মালিক তাকে তার প্রত্যেক পূর্ণ বছরের চাকরির জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ দিনের মূল বেতন দেবেন।
প্রসূতিকালীন সুবিধা: কোনো নারী গণমাধ্যমকর্মী প্রসূতি ছুটির জন্য নিবন্ধিত চিকিৎসক কর্তৃক প্রদত্ত সনদসহ আবেদন করলে গণমাধ্যম মালিক প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ছুটি আরম্ভের তারিখ অথবা সন্তান প্রসবের উদ্দেশ্যে আতুরঘরে প্রবেশের তারিখ থেকে ৬ মাসের ছুটি পাবেন। সকল গণমাধ্যমে নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে আইনে।
চাকরি থেকে অবসর: কোনো গণমাধ্যমে নিয়োজিত কোনো গণমাধ্যমকর্মীর বয়স ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে তিনি চাকরি থেকে স্বাভাবিক অবসর নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে কোনো গণমাধ্যমকর্মী ২৫ বছর চাকরি পূর্ণ করার পর যে কোনো সময় তার সম্ভাব্য অবসর গ্রহণের ৩০ দিন পূর্বে লিখিত নোটিশ দিয়ে স্বেচ্ছায় অবসর নিতে পারবেন। তবে কোনো স্থায়ী গণমাধ্যমকর্মী চাকরি থেকে অবসর নিলে গণমাধ্যম মালিক অবসর গ্রহণকারী কর্মীকে প্রত্যেক পূর্ণ বছরের চাকরির জন্য অবসর সুবিধা হিসেবে ৩০ দিনের মূল বেতন দেবেন। ওই অর্থ এই আইনের অধীনে গণমাধ্যমকর্মীকে প্রদেয় অন্যান্য সুবিধার অতিরিক্ত হবে।