রাজধানীর ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা গভীর রাতে বোরকা পরে পালিয়েছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আক্রমণের ভয়ে তারা হল ত্যাগ করেন।
জানা গেছে, ওই দিন রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকা বিনতে হোসাইনসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেত্রীকে হল থেকে বের করে দেন শিক্ষার্থীরা।
একই সময়ে ঢাবির আরও কয়েকটি হল থেকে ছাত্রলীগ নেত্রীদের বের করে দেয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে ইডেন ছাত্রলীগ নেত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে গভীর রাতে বোরকা পরে হল থেকে পালিয়ে যান তারা দুই নেত্রী।
ভোর হওয়ার আগেই ইডেন কলেজের প্রায় সব নেতাকর্মীই হল থেকে পালিয়ে গেছেন। সকাল ৯টার দিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইডেনে সভাপতি-সেক্রেটারিসহ অন্য নেতাকর্মীদের কক্ষ ভাঙচুর করেছেন আন্দোলনকারীরা।
এ বিষয়ে জানার জন্য ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভাকে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘ভাই, খুব ঝামেলায় আছি। এসব নিয়ে পরে কথা বলব।’
এদিকে, রাতের ঘটনা থেকে উদ্ভূত চাপের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি ছাত্রীসহ বেশ কয়েটি ছাত্র হলকেও ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক, রোকেয়া হল, শামসুন নাহার হল, কবি সুফিয়া কামাল হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল এবং বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের প্রাধ্যক্ষরা শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে হলগুলোকে ছাত্র রাজনীতি মুক্ত করার অঙ্গীকারনামা দেন।
রাত ১১টার দিকে রোকেয়া হলে প্রথমে এই ঘোষণাটি দেয়া হয়। শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ নেত্রীদের হল থেকে বের করে দিয়ে প্রাধ্যক্ষের কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকারনামা গ্রহণ করেন, যাতে হলের অভ্যন্তরে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।
উল্লেখ্য, চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’। প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি’ বলা হয়েছে অভিযোগ করে রোববার রাত থেকে প্রতিবাদ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীজুড়ে। মঙ্গলবার সেই আন্দোলন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়লে ৬ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।