আম পাড়া ও বাজারজাতের জন্য শুরু হয়েছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। পরিপক্ব হতে শুরু করেছে আম। চলছে আম পাড়ার প্রস্তুতি। এ নিয়ে আমের রাজধানী খ্যাত রাজশাহীতে উৎসাহ আর উদ্দীপনার শেষ নেই। ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন রাজশাহীর আমচাষী ও ব্যবসায়ীরা। এখন কবে আসবে বাজারে পাকা আম সবাই রয়েছেন সেই অপেক্ষায়।
তবে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য, শীঘ্রই হবে অপেক্ষার অবসান। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল আলিম জানিয়েছেন, সুমিষ্ট গোপালভোগ আম চলতি মাসের ১৮ থেকে ২০ তারিখের মধ্যেই বাজারে আসবে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, আগামী ১২ মে জেলা প্রশাসন, ফল গবেষণা কেন্দ্র এবং আমচাষিসহ সংশ্লিষ্টরা মিলে ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করা হবে। কোন আম কবে নামাতে পারবেন চাষিরা সবকিছু জানিয়ে দেওয়া হবে। আর সে অনুয়ায়ী গাছ থেকে শুরু হবে আম পাড়া।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল জলিল জানান, আম পাড়ার সময় বেঁধে দেওয়ার আগে কোনোভাবেই আমগাছ থেকে নামানো যাবে না। খুব শীঘ্রই আমচাষি, ব্যবসায়ী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ফল গবেষণাকেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট সবাই বসে একমত হওয়ার পরই সময় নির্ধারণ করা হবে। আগামী সম্ভাব্য ১২ মে সভা করার পর গুটি, গোপালভোগ, খিরসপাতসহ সব ধরনের আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করা হবে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল আলিম বলেন, এ মাসের ২০ তারিখের পর থেকে সবাই আমের স্বাদ নিতে পারবেন। তবে ভালো আম পেতে আরও একটু অপেক্ষা করতে হবে। আমচাষি, ব্যবসায়ী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ফল গবেষণা কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট সবাই বসে একমত হওয়ার পরই রাজশাহী জেলা প্রশাসন গাছ থেকে আম পাড়ার সময় বেঁধে দেবে। সেই সময় অনুযায়ী গাছ থেকে আম ভাঙা হলে এবং সেই আম বাজারজাত ও খাওয়া হলে কোনো ঝুঁকি থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ফল একটু আগে ও পরে পাকতে পারে। প্রচণ্ড গরমের কারণেও অনেক আগেই গোপালভোগ আম পাকে। লিচুর ক্ষেত্রেও একইরকম হয়। এছাড়া বাদুড়ের আক্রমণের কারণে অনেক লিচুচাষি আধা-কাঁচা লিচু পাড়ছেন। এসব লিচু মিষ্টিও নয়; আবার দামও কম।
পবা উপজেলার ভালাম এলাকার আমচাষি টিপু সুলতান বলেন, গোপালভোগ আম পাড়তে আরও ১৫ থেকে ২০ দিনের মতো সময় লাগবে। মাসের শেষের দিকে এ জাতের আম বাজারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। গুটি জাতের আম এখনো পাকা দেখা যায়নি। গুটি আমের সঙ্গেই গোপালভোগ আম পাড়া শুরু হয়।
রাজশাহীতে আমের সবচেয়ে বড় মোকাম বানেশ্বর হাট। বানেশ্বরের আমের আড়তদার আবদুল আউয়াল বলেন, গোপালভোগ আর গুটি জাতের আম একসঙ্গে বাজারে আসে। আমরা বাগান কিনে রেখেছি। সব ধরনের আমের ব্যবসা করার অভিজ্ঞতা আছে। চলতি মাসের ২৫ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে গোপালভোগ বাজারে আসবে বলে আশাবাদী।
জেলা প্রশাসনের ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী আম পাড়ার সময় নির্ধারণ হয়। এখনো কোনো তারিখ প্রকাশ করেননি তারা। খুব শীঘ্রই তারিখ বেঁধে দেওয়া হবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন জানান, রাজশাহীতে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১২ মেট্রিক টন ফলন হয়। অর্থাৎ ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন আম হয়। আর সে অনুযায়ী চলতি মৌসুমে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সেটিই নির্ধারণ করা হয়েছে।