গতকাল ৮ এপ্রিল শুক্রবার ২০২২ খ্রিঃ চাঁদপুর প্রেসক্লাব কমিউনিটি সেন্টারের হলরুমে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি এমপি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, সংবাদপত্র এই জগৎটা আমার পরিবারের একটা অংশ হিসেবেই ভাবি। চাঁদপুরের সাংবাদিকদের সঙ্গেও আমার স্বাভাবিক ভাবেই সব সময় অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক রয়েছে। চাঁদপুরের সংবাদপত্র যথেষ্ট বড় একটা জেলা শহর হিসেবে এতগুলো খবরের কাগজ নিয়ে বের হওয়া এটি একটি খুব বড় জিনিস এবং যেভাবে প্রেসক্লাব তাদের কাজকর্ম চালায় তাদেরকে নিয়ে আমাদের প্রশংসা করতে হয়। সংবাদপত্র জগৎটা এমন আসলে বস্তুনিষ্ঠতা তার বাহিরে কোন জায়গা নেই। যে কোনো কিছুকে সঠিকভাবে সঠিক তথ্য তুলে ধরা সেটা খুব প্রয়োজন। আর আমাদের আজকে এগিয়ে যেতে হলে সঠিক তথ্যটা সবার দরকার। সেই কারণে সংবাদপত্র জগৎটা সেই গুরু দায়িত্ব সেটা পালন করে। একই সঙ্গে সংবাদপত্র পড়ে পড়ে মানুষ অনেক কিছু শেখে। শুধু তথ্য পায় তা না। অনেক কিছু আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়। আমাদের দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সেটা তুলে ধরা হয়। আমাদের যে কৃষ্টি তা তুলে ধরা হয়। আমাদের আত্মপরিচয় তার অনেক কিছু এর মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসে। কাজেই একজন সংবাদপত্রের অনেক রকমের দায়িত্ব আছে। আমি আশা করব চাঁদপুর প্রেসক্লাব সে দায়িত্ব অতীতে যেমন নিষ্ঠার সাথে পালন করেছে আগামী দিনেও করবে। আজকের নতুন যারা দায়িত্ব পেয়েছেন মিলন এবং রিয়াদ এই দুজন আগামী একটি বছর তারা সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিবেন আশা করি। তাদের প্রতি শুভকামনা রইল।
এছাড়া তিনি আরো বলেন, আমি একটা দল করি কিন্তু আমি দলবাজি করছি না। আমি স্পষ্ট বলছি বাংলাদেশের গত একশত বছরের এ ভূখন্ডের ইতিহাস জানতে হবে। আমি যদি রাজনীতি করি আমার জানতে হবে। আমি যদি সাংবাদিকতা করি আমার জানতে হবে। আমি যদি প্রশাসন চালাই আমার জানতে হবে। আমি যেই কাজ করি এ দেশের ইতিহাস জানতে হবে। ইতিহাস জানা ছাড়া ইতিহাসের গতি প্রকৃতি জানা ছাড়া এ কাজগুলো ঠিকমতো করা যায় না। সেটা বুঝতে হলে পক্ষ কে বিপক্ষ কে বুঝতে হবে। এদেশের মাটির সঙ্গে, সংস্কৃতির সঙ্গে, ইতিহাসের সঙ্গে, ঐতিহ্যের সঙ্গে, ভাষার সঙ্গে, সাহিত্যের সঙ্গে, মানুষের বোধ গম্যের সঙ্গে, মানবিকতার বোধের সঙ্গে, কার সম্পর্ক। আমাদের এই রাজনীতিতে দুইটা ধারায় স্পষ্ট। একটা খুব সংকীর্ণ তথাকথিত ধর্মীয় ধারা যেটা ধর্মকে আসলে ব্যবহার করে। আর আরেকটি হচ্ছে একটি উদার গণতান্ত্রিক ধারা এ দুটি ধারা একশত বছর ধরে আমরা অন্তত দেখতে পাই খুবই স্পষ্ট। উদার মানবাদিকতার মানুষেরা এই দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থেকেছে এ দেশ এগিয়ে গেছে। এদেশের মানুষের স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হয়েছে। আর যখনই তার উল্টো দিকের মানুষ দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থেকেছে বা তাদের ভাষায় ক্ষমতায় আসছে। তখনই এদেশ পেছনদিকে হেঁটেছে ভুতের পায়ের মতো। এটা যেন আমরা ভুলে না যাই। কাজেই আমরা অনেক জিনিসে নিরপেক্ষতা চাই। নিরপেক্ষতা মানে কখনো কখনো নিরপেক্ষতা কিন্তু অন্যায়কারীর পক্ষ নেয়া হয়ে যায়। যখন সুস্পষ্টভাবে একটি পক্ষ অন্যায় করছে আরেকটি পক্ষ অন্যায় করছে না ন্যায়ের পক্ষে আছে তখন যারা নিরপেক্ষতার নামে মাঝ পথ দিয়ে হাটে কোন দিকে যায় না। তিনি কিন্তু সত্য নয় তুলে ধরছে না। তিনি সত্য-ন্যায়ের হাতকে শক্তিশালী করছে না। নানান ভাবে প্রকৃতপক্ষে অন্যায় কে কোন না কোনভাবে উস্কে দেওয়া হচ্ছে তা দিয়ে। কাজেই নিরপেক্ষতা শব্দটার সেটা কিন্তু সব সময় ভালো নয়। আমি সত্যের পক্ষে সবসময় পক্ষপাতিত্ব করব। আমি সত্যের পক্ষে সবসময় পক্ষপাতিত্ব করব। সেখানে নিরপেক্ষতার প্রশ্ন নেই। আমার স্বাধীনতার প্রশ্নে, আমার গণতন্ত্রের প্রশ্নে, আমার বাঙালিয়ানার প্রশ্নে, আমার জাতিসত্তার প্রশ্নে, আমার জাতিয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রশ্নে, আমি সবসময় পক্ষপাতিত্ব করব আমার এলাকার মানুষের প্রশ্নে, আমার এলাকার উন্নয়নের প্রশ্নে, আমার এলাকার এগিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে, আমার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে, আমি পক্ষপাতিত্ব করবো কোন নিরপেক্ষতার জায়গা নেই। অতএব যে কোন সরকার আসলে হবে না। আসতে হবে জনগণের সরকার। আসতে হবে শেখ হাসিনার সরকার। আমরা নারীর অধিকারের কথা বলি আর নারীবিদ্বেষী সরকার কে ভোট দিব। তারপর আবার নারীর অধিকার চাইবো সোনার পাতায় পাটি হয় না। আমি সততা চাইবো। আবার অসৎ মানুষকে ক্ষমতায় বসাবে সোনার পাতায় পাটি সততা চাইবো হয় না।
এছাড়াও তিনি বলেন, একই সাথে বলবো আজকে সমাজে শুধু বাংলাদেশে নয় সারা পৃথিবীতে আজকে সমাজে সৎ থাকা খুব কষ্টকর বিষয়। অনেক অসত্যতার ভিড়ে অনেক নেকি জিনিসের ভিড়ে সৎ থাকাটা অনেক কষ্টকর বিষয় হয়ে যায়। সে কষ্টকর কাজটাও কষ্ট করে অনেকে ধরে রেখেছেন এবং তারা রাখবেন। কারণ তাদের রক্তে ও সততার বাইরে যাওয়ার কোনো পথ দেখায় না। তাদেরকে তাদের রক্ত তাদের সৎপথের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ দেয় না। সেই রকম মানুষ যারা আছেন তাদের সঙ্গে থাকা, তাদের সততাকে তুলে ধরা, তাদের দিকে কাঁদা ছুরে না মারা, তাদেরকে অন্যায় ভাবে অভিযুক্ত না করা। সেটাও কিন্তু সততার পক্ষে একটা অবস্থান। কাজেই আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা যদি এই সমাজটাকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। তাহলে আমাদের সততার পক্ষে থাকতে হবে। বিপক্ষে নয়। আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে। অনেক ষড়যন্ত্র আছে যতই ষড়যন্ত্র হোক বাংলাদেশের মানুষ সঠিক পথে থাকবে। সঠিক জায়গায় ভোট দিবে এবং সঠিক সরকার কে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।
চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আবদুর রহমান গাজী ও গীতা পাঠ করেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লক্ষণ চন্দ্র সূত্রধর।