পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ অরুনাচলে চীনের সাথে বিবাদপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় সেনা সংখ্যা নজিরবিহীনভাবে বাড়িয়েছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এই খবর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, চীনকে সীমান্তের স্থিতাবস্থা ‘একতরফাভাবে পরিবর্তন’ করতে দেবে না ভারত।
গত ৯ ডিসেম্বর অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যের বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় ও চীনা সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষের পর জয়শঙ্কর এমন মন্তব্য করেছেন বলে মঙ্গলবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। ভারত বলেছে, চীনা সৈন্যদের ভারতীয় ভূখণ্ড দখলে নেওয়ার চেষ্টার সময় ওই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল।
এদিকে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী— সীমান্ত পরিস্থিতি সাধারণভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। আর উভয়পক্ষ এই সমস্যার ব্যাপারে আলোচনা করছে।
ভারত এবং চীনের মাঝে প্রায় ৩ হাজার ৪৪০ কিলোমিটার বিতর্কিত সীমান্ত রয়েছে। যেখানে উভয় দেশের সৈন্যরা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) নামে পরিচিত ডি ফ্যাক্টো সীমান্তে যেকোনও ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার এড়াতে দীর্ঘদিনের প্রোটোকল মেনে চলেন। কিন্তু বিতর্কিত এই সীমান্ত এলাকায় চীন-ভারতের সৈন্যরা প্রায়ই সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন।
এর আগে, ২০২০ সালের জুন মাসে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চীনা-নিয়ন্ত্রিত তিব্বত মালভূমিতে ভারতীয় ও চীনা সৈন্যদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময় উভয় দেশের সৈন্যরা হাতাহাতি, কিল-ঘুষিতে জড়িয়ে পড়েন।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সীমান্তে চীনা সৈন্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের সামরিক বাহিনীর অন্তত ২০ সৈন্য নিহত হন বলে সেই সময় স্বীকার করে। যদিও চীন ওই সংঘাতের ঘটনায় তাদের কোনও সৈন্য হতাহত হয়েছে কিনা তা প্রকাশ করেনি।
তবে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে চীনের ৪০ জনের বেশি সৈন্য নিহত হয়েছিলেন বলে জানানো হয়। এই সংঘর্ষের পর উভয়পক্ষ মরুভূমি অঞ্চলে তাদের সৈন্য, অস্ত্র এবং সামরিক অন্যান্য রসদ বৃদ্ধি করেছিল।
ওই ঘটনার পর এক বছরের বেশি সময় পর অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যের বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় গত ৯ ডিসেম্বর উভয় দেশের সৈন্যদের সংঘর্ষ ঘটে। এতে উভয়পক্ষের কয়েকজন সৈন্য আহত হয়েছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী বলেছে, সংঘর্ষের পর উভয় দেশের সৈন্যরা দ্রুত ওই এলাকা থেকে চলে যান।
সোমবার ভারতীয় দৈনিক ইন্ডিয়া টুডের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় চীনা সৈন্যদের সাথে সংঘাতের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজ চীন সীমান্তে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এমন সৈন্য মোতায়েন রয়েছে; যা আগে ছিল না। চীনা আগ্রাসন মোকাবিলার জন্য এটি করা হয়েছে। একতরফাভাবে সীমান্তরেখা পরিবর্তনের যেকোনও প্রচেষ্টা মোকাবিলা করতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।