নিজস্ব প্রতিবেদক,
উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনের গণহত্যা ও নির্যাতন বন্ধের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আলেম-ওলামা ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বারেন বিদ্রোহের ৩২তম বর্ষপূর্তি স্মরণে এ বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ র্যালি অনুষ্ঠিত হয়৷
সকালে এ উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সেমিনারে সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোট ও সমমনা ইসলামী দলের নেতারা দাবি জানান যে, চীনের সঙ্গে সবধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন এবং তাদের পণ্য যেন বর্জন করা হয়।
এ ছাড়া দিনটির স্বরণে ‘বিবিএসএস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ এর আয়োজনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তৌফিক আহমেদ তফছির।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘চীন সরকার ১৯৯০ সালে উইঘুর মুসলিমদের উপর যে গণহত্যা চালিয়েছিলো তারা এখনও তা বজায় রেখেছে। আমরা চাই, উইঘুরদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করে তাদের সব নাগরিক অধিকার দেওয়া হোক।’
বাংলাদেশ সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বিএসএএফ) দিনটি উপলক্ষে মানববন্ধন এবং বাইক র্যালি করেছে। যেখানে শ’ খানেক মানুষ র্যালিতে অংশ নেন। যারা পোস্টার ও প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে উইঘুরদের ওপর চীনা নৃশংসতা তুলে ধরেন।
এ ছাড়া ‘জাগ্রত মুসলিম জনতা’র ব্যানারে নারায়ণগঞ্জে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। র্যালিটি নগরীর পাগলা থেকে শুরু হয়ে আলীগঞ্জ ক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।
এদিকে ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিষদ’ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিটিভি গোলচক্করের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে। যেখানে চীনের নৃশংসতার প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিকেলে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ ও আলোচনা সভার আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। চীনকে বিশ্ব থেকে একঘরে করে দেওয়ারও আহ্বান জানান সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
অন্যদিকে যশোরের চৌগাছায় জাতীয় ওলামা কল্যাণ পরিষদের ব্যানারে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বক্তারা বেইজিংয়ের এমন কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালের ৫ এপ্রিল চীনের চাপিয়ে দেওয়া এক সন্তান নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠে পূর্ব তুর্কিস্তানের (বর্তমানে জিনজিয়াং) সাধারণ মানুষ। যার নেতৃত্ব দেন যায়েদিন ইউসুপ।
১২ দিন ধরে চলা বারেন বিদ্রোহকে দমনে ভয়াবহ নৃশংসতার পথ বেছে নেয় চীনা প্রশাসন। তারা আকাশ ও স্থলপথে ২০ হাজার সৈন্য পাঠায়।
অভিযোগ রয়েছে- সৈন্যরা কয়েক হাজার মানুষকে জবাই করে হত্যা করে। গ্রেপ্তার করা হয় অন্তত সাড়ে সাত হাজার উইঘুরকে। যাদের দীর্ঘমেয়াদে কারান্তরীণ করে রাখা হয়।
চীনের কমিউনিস্ট শাসকরা সেখানেই থেমে থাকেননি। অভিযোগ রয়েছে- ২০১৬ সাল থেকে আবারও জিনজিয়াংয়ের উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছেন তারা। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও মানবাধিকার সংস্থা যাকে গণহত্যা বলে স্বীকৃতিও দিয়েছে।
এমন কর্মকাণ্ডের জন্য বিশ্বব্যাপী নিন্দা ও সমালোচনার মুখে পড়েছে চীন। এরই ধারাবাহিকতায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশেও এই ইস্যুতে নানা সময়ে চীনবিরোধী বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।