চীনের সঙ্গে ৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি আর্থিক মূল্যের ৩৪টি বিনিয়োগ চুক্তি করেছে সৌদি আরব। আজ বৃহস্পতিবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সৌদি সফরের দ্বিতীয় দিনে দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হয়েছে। চীন-সৌদির এই অর্থনৈতিক সমঝোতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সৌদি আরবের পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, গ্রিন হাইড্রোজেন, সৌর বিদ্যুৎ, তথ্যপ্রযুক্তি, জৈব প্রযুক্তি, যোগাযোগ, পরিবহন, আবাসন, চিকিৎসা, পর্যটনসহ আরও বেশ কয়েকটি খাতে অর্থ বিনিয়োগ করবে চীন।
তিন দিনের এক সরকারি সফরে বুধবার সৌদিতে গেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরুর পর এটি জিনপিংয়ের তৃতীয় বিদেশ সফর। সৌদিতে এটি তার দ্বিতীয় সফর। সর্বশেষ ২০১৬ সালে সৌদি গিয়েছিলেন তিনি।
চলতি সফরে সৌদির বাদশাহ সালমান এবং দেশটির যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ-বৈঠকের সূচি আছে জিনপিংয়ের। তারপর মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলসহ অন্যান্য অঞ্চলভুক্ত বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন তিনি।
সৌদি সরকারের বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ বিন আবদুল আজিজ আল ফালাহ বার্তাসংস্থা এসপিএকে বলেন, ‘সরকার সৌদির অর্থনীতি পুনর্গঠন ও সংস্কার করতে ভিশন ২০৩০ প্রকল্প নিয়েছে। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য জ্বালানি তেলের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অর্থনৈতিক খাতকে আরও উৎপাদনশীল ও শক্তিশালী করা।’
দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগের প্রচুর ক্ষেত্র রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পরিবহন, যোগাযোগ, আবাসন, পর্যটন, তথ্যপ্রযুক্তিসহ প্রচুর খাত আমাদের আছে- যেগুলোতে বিনিয়োগ প্রয়োজন। এসব খাতে আমরা অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগও চাইছি।’
‘চীনের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেক বছরের। কিন্তু গত কয়েক বছরে সৌদি আরব ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যের ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটেছে। পাশপাশি দুই দেশের সরকার ও জনগণের মধ্যকার আস্থা ও অংশীদারিত্বপূর্ণ মনোভাবও দৃঢ় হচ্ছে। তারই ফলাফল এসব (৩৪টি) চুক্তি।’
সৌদি সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে চীন ও সৌদির মধ্যে ৮ হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। আর এ বছর নভেম্বর পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য হয়েছে ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের।
ওদিকে, সৌদি-চীন বিনিয়োগ চুক্তিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের দীর্ঘকালীন মিত্র একটি দেশের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের এত বৃহৎ অর্থনৈতিক সমঝোতায় অসন্তোষ জানিয়েছে দেশটির সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিষদ ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের হোয়াইট হাউস প্রতিনিধি বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি- বিশ্বজুড়ে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে চীন অতিমাত্রায় তৎপর হয়ে উঠেছে।’
বুধবার সৌদি আরবে সফরে যান চীনের প্রেসিডেন্ট। বেইজিং এই সফরকে আরব বিশ্বে চীনের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক উদ্যোগ হিসেবে অভিহিত করেছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতে, এটি চীনের প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার একটি বড় উদাহরণ।
সৌদি আরব এবং চীনের মধ্যে এই দহরম-মহরম এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হল যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। ওপেক প্লাসের তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্তে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র ওই সিদ্ধান্ত বাতিলের আহবান জানিয়েছিল। ২০২০ সালের শেষদিকে ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় আসার পর ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক ও কলাম লেখক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এর জন্য সৌদি যুবরাজকেও বিচারের আওতায় আনার কথা বলেছিলেন। তবে সৌদি আরব তেল নিয়ে রাজনীতি শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ওই হত্যামামলা থেকে দায়মুক্তি দেয়। কিন্তু এরপরও সৌদি আরব রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ঘণিষ্ঠতা বাড়িয়ে চলেছে। আর এতে ব্যাপকভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র।