সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিদের যে অপতৎপরতা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তার সঙ্গে বিএনপির অপতৎপরতা একই সূত্রে গাঁথা বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, বিএনপির কারণেই জঙ্গির উত্থান ঘটেছে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের মধ্যেও জঙ্গিগোষ্ঠী রয়েছে। এসব দলের নেতারা আফগানিস্তানের তালেবানের মতাদর্শে বিশ্বাস ও লালন করে। তারা দেশটাকে আফগানিস্তান বানাতে চায়।
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে মন্ত্রণালয়ে সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, আপনারা জানেন, বিএনপি সারা দেশে সমাবেশের নামে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে। তারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে জঙ্গিরাও আগের তুলনায় তৎপর হয়ে উঠেছে। এদেশের জঙ্গি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রধানপৃষ্ঠপোষক বিএনপি। আমাদের দেশে জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে বিএনপির আমলে।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে, বাংলা ভাইকে মাঠেই নামিয়েছিল বিএনপি। সেই বাংলা ভাইকে পুলিশি সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল। তখন বিএনপি ছিল ক্ষমতায়। বাংলা ভাই অপারেশন ফিল্ড কমান্ডার হলেও নেপথ্যে গডফাদার ছিল রুহুল কুদ্দুস দুলু, রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, আলমগীর কবীর, নাদিম মোস্তফা ও ব্যারিস্টার আমিনুলসহ অনেকেই। তারা ছিল পেছনের গডফাদার। আর বাংলা ভাই ফিল্ডে অপারেশন চালাত। এভাবেই জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান ও বিস্তৃত ঘটিয়েছিল বিএনপি।
বিএনপির সময়ে দেশের ৫০০ জায়গায় বোমা ফুটিয়ে জঙ্গিরা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছিল বলেও উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, এমনকি জঙ্গিদের এই কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিএনপি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে যখন জঙ্গিদের দমনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছিল, তখন খালেদা জিয়া বক্তব্য রেখেছিলেন যে, ‘কিছু লোককে ধরে আনা হয়, আটক করে রেখে দেওয়া হয়, তারপর তাদের চুল-দাড়ি লম্বা হয়, এরপর তাদের জঙ্গি আখ্যা দেওয়া হয়। ’
ড. হাছান বলেন, জঙ্গিদের যখন গ্রেফতার করা হয়, যখন পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে অনেক জঙ্গি নিহত হয়েছে, তখন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও তাদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। এভাবে বিএনপির কারণেই জঙ্গিদের উত্থান ঘটেছে। সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিদের যে অপতৎপরতা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তার সঙ্গে বিএনপি অপতৎপরতা একই সূত্রে গাঁথা।
মহাসমাবেশ বানচাল করতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকার আজগুবি মামলা দিচ্ছে বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা খণ্ডন করে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেখুন, তারা যাতে সমাবেশ নির্বিঘ্নে করতে পারেন, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সম্মেলন ৮ ডিসেম্বরের বদলে ৬ ডিসেম্বর করেছে। ৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এরপর সেই মঞ্চ-প্যান্ডেল গুটিয়ে ফেলা হলে বিএনপি যাতে সময় নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মঞ্চ বানাতে পারে। সে কারণে ছাত্রলীগের সম্মেলন নির্ধারিত তারিখ থেকে দুই দিন এগিয়ে আনা হয়েছে। কোনো সম্মেলন পিছিয়ে দেওয়া সহজ হলেও এগিয়ে আনা সহজ না। কারণ এগিয়ে আনার ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা থাকে। কিন্তু আমরা সেই কাজটি করেছি।
হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে আমরা যখন সমাবেশ করতাম, তখন তাতে গ্রেনেড ও বোমা হামলা চালানো হতো। আমাদের দলীয় কার্যালয়ের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হতো। আমাদের সহজে সমাবেশ করতে দেওয়া হতো না। রাসেল স্কোয়ারে আমরা ২০ জন নিয়ে দাঁড়ালে পুলিশ হামলা চালাতো। সেই ছবিগুলো আপনারাই সংগ্রহ করেছেন। ‘আমাদের প্রয়াত নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ওপর যেভাবে পুলিশ লাঠিপেটা করেছিল, যেভাবে আমাদের জ্যেষ্ঠ নেতা মতিয়া চৌধুরীকে টানা হেঁচড়া করা হয়েছিল, গত ১৪ বছরে তাদের কোনো নেতার ওপর লাঠিপেটা করা হয়নি, কিংবা টানা হেঁচড়া করা হয়নি। সরকার সহায়তা করেছিল বলেই তারা এভাবে নির্বিঘ্নে সমাবেশ করেছিল। ’
নয়াপল্টনে বিএনপি সমাবেশ করতে যে জিদ ধরে আছে, কিন্তু সরকার চাচ্ছে তারা সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করুক, এ ক্ষেত্রে সমাধান কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, তাদের (বিএনপি) সমাবেশ করার সুবিধার কথা ভেবেই সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দিয়েছে। তারা যেই সমাবেশ করার কথা বলেছে, ১০ লাখ মানুষ জড়ো হবে। কিন্তু সোহরাওয়ার্দীতে ১০ লাখ মানুষ ধরার জায়গা নেই। কিন্তু ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় মাঠ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। তারা যে ধরনের সমাবেশ করতে চায়, সেক্ষেত্রে পূর্বাচলের বাণিজ্য মেলার মাঠ ছাড়া আর কোনো জায়গা নেই। তারপরও সরকার সৎ উদ্দেশে তাদের সমাবেশ করার সুবিধার্থে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দিয়েছে। কারণ নয়াপল্টনের সামনে ৩০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ জড়ো হতে পারবে। কিন্তু তারা যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চায়, তাহলে সরকার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।