৬ ই জুন,২০২৪, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ বিষয়ক সেমিনারের ৯৩৬ তম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। জানিপপ কর্তৃক আয়োজিত জুম ওয়েবিনারে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জানিপপ-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ড.মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও। সেমিনারে মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পি এইচ ডি গবেষক বি সি এস এডুকেশন ক্যাডার এর সদস্য সহকারী অধ্যাপক বাবু রণজিৎ মল্লিক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে সংযুক্ত ছিলেন ইউএন ডিজএ্যাবিলিটিজ রাইটস্ চ্যাম্পিয়ন ও প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার ও উন্নয়নের প্রবর্তক আবদুস সাত্তার দুলাল। সেমিনারে বিশেষ অতিথিবৃন্দ হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর কেন্দ্রীয় মহিলা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিসেস আকলিমা আক্তার, মিসেস সংগীতা বিশ্বাস, কাজী ফারজানা ইয়াসমিন, পিএইচডি গবেষক এবং কোর্স টিউটর, ইউনিভার্সিটি সাইন্স মালয়েশিয়া, বিশিষ্ট গণমাধ্যম কর্মী ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির মিডিয়া ও জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও বিশিষ্ট নারী উদ্যোগক্তা মিসেস পারভীন আক্তার। সেমিনারে গেস্ট অফ অনার হিসেবে সংযুক্ত ছিলেন, তেজগাঁও কলেজ এর প্রভাষক জনাব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকার ও নাট্যব্যক্তিত্ব সন্দীপন কুমার বিশ্বাস, জানিপপ এর ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার শারমিন সুলতানা শিমু, শাকিব হোসেন ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির একদল শিক্ষার্থী। সভাপতির বক্তব্যে ড. কলিমউল্লাহ বলেন, জাতির পিতা আমাদেরকে প্রজা থেকে নাগরিকে রূপান্তরিত করেছেন। সেমিনারের মুখ্য আলোচক পি এইচ ডি গবেষক রণজিৎ মল্লিক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উচ্চারণের সাথে সাথে যে ইতিহাস উঠে আসে তাতে রয়েছে স্বাধীন দেশ। বঙ্গবন্ধুর বড় কীর্তি বাংলাদেশের নির্মাণ একটি গোষ্ঠীর জন্য। একটি রাষ্ট্র নির্মাণ করেছেন বঙ্গবন্ধু নাগরিকদের স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার জন্য। নৃতাত্ত্বিক জাতি গোষ্ঠীগতভাবে এই ভূখণ্ডে অবস্থান করেছিল বাঙালী । ১৯৭১ এর আগে বাঙালি স্বাধীন ছিল না ।বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতা এবং সাহসের কারণেই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশে রূপ নিয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ মুসলমান হিসেবে একটি দেশ পেয়েছিল হয়তো কিন্তু তাতেও বঙ্গবন্ধু আত্মতৃপ্ত ছিলেন না। বঙ্গবন্ধু সেখানে উত্তরোপনেবেশিক শব্দটি বারে বারে ব্যবহার করেছেন। বাঙালির জন্য একটি নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছেন। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিকভাবে ছিলেন অনেক দূরদর্শী ।তিনি বাংলার স্বাধীনতার জন্য ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। যদিও আপত দৃষ্টি থেকে অর্থনৈতিক মুক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল কিন্তু এটি ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের একটি মূল ভিত্তি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনাব আব্দুস সাত্তার দুলাল বলেন, বঙ্গবন্ধু যে বাংলার নেতা এবং বাংলাদেশের জন্য নেতা তা নয়। ভারতীয় স্বাধীনতা নিয়ে তিনি কাজ করেছেন এবং উপমহাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে তিনি রাজনীতি করেছেন। তারই ক্রমধারায় তিনি বাংলার স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি একটি জাতির স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার কথা ভেবেছেন। ১৯৭০ এর নির্বাচন যদি গ্রহণযোগ্যতা পেতো তাহলে হয়তো বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় আসতেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার রূপরেখা পরিবর্তন হতো ।আমরা পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তান একত্রে স্বাধীন থাকতাম। কিন্তু সর্বোপরি পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের দূরত্বের দিকটাই ছিল সবচেয়ে বেশি কঠিন স্বাধীনতা ধরে রাখার জন্য। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতা অন্যভাবে হলে হয়তো বাংলাদেশ আজ জাতির পিতা কে হারাতো না। বঙ্গবন্ধু থাকলে বাংলাদেশের যে অভ্যন্তরীণ কষ্ট তা হয়তো থাকতো না। বাংলাদেশের নাগরিকের বর্তমান অবস্থা হতো শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দপূর্ণ। সেমিনারের বিশেষ অতিথি সংগীতা বিশ্বাস বলেন, বঙ্গবন্ধু কখনও মিথ্যার সাথে আপোষ করতেন না এবং মৃত্যু ভয়ে ভীতু ছিলেন না। তিনি ছিলেন এক অমিত তেজী সিংহ হৃদয়ের পুরুষ। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন , বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে মেনে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হবে। পি এইচ ডি গবেষক কাজী ফারজানা ইয়াসমিন বলেন , বঙ্গবন্ধু শুধু একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন না তিনি নেতা হয়ে উঠেছিলেন ।জনতার কাছে মানুষ হয়ে উঠতে পেরেছিলেন ।বর্তমানে রাজনীতিবিদদের আহ্বান করেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে নেতা হয়ে ওঠার। বিশিষ্ট নারী উদ্যোগক্তা পারভিন আক্তার বলেন ,বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যেন আমরা এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম উভয়েই জানতে পারি এই পরিবেশ আমাদের সৃষ্টি করতে হবে। সেমিনারের গেস্ট অব অনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন , বঙ্গবন্ধু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে তার বিপক্ষে কথা বলতেন। তৎকালীন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের পক্ষে তিনি ধর্মঘট করেন। এখানে জাতির পিতার উদারতা প্রকাশ পায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত জানিপপ এর ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার শারমিন সুলতানা শিমু বলেন, আমরা পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে হেরে গিয়েছিলাম হাজার হাজার বাঙালি উপস্থিত থাকার পরেও শুধু জাতীয়তাবোধ জ্ঞান না থাকার কারণে। তখন বাঙালির অনুভূতি ছিল এমন – রাজায় রাজায় যুদ্ধ বাঁধে উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। এই জাতীয়তা বোধের আদর্শ এবং অনুভূতিই বঙ্গবন্ধু আমাদের মধ্যে বপন করেছেন। যার বদৌলতে আমরা আজ স্বাধীন বাঙালী হিসেবে নিজেদের আত্মপ্রকাশ করতে পারি। জানিপপ এর ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার শাকিব হোসেন বলেন, স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ,চিকিৎসা ,শিক্ষা ও কাজের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দ্বিতীয় বিপ্লবের ঘোষণা দিয়েছিলেন । যার লক্ষ্য ছিল দুর্নীতি দমন , ক্ষেতখামার ও কলকারখানার উৎপাদন বৃদ্ধি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠা। এই লক্ষ্যে দ্রুত অগ্রগতি অর্জনের জন্য ঐদিন জাতির পিতা সকল রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী মহলকে ঐক্যবদ্ধ করে একমঞ্চ তৈরি করেছিলেন । যার নাম দিয়েছিলেন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ “বাকশাল” । সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন, গোপালগঞ্জস্থ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক প্রশান্ত কুমার সরকার।