১১ ই জুন, ২০২৪, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ বিষয়ক সেমিনারের ৯৪১ তম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। জানিপপ কর্তৃক আয়োজিত জুম ওয়েবিনারে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জানিপপ-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও।
সেমিনারে মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পি এইচ ডি গবেষক অধ্যক্ষ মাসুদ আহমেদ।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে সংযুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর কেন্দ্রীয় মহিলা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিসেস আকলিমা জাহান।
সেমিনারের গেস্ট অব অনার হিসেবে যুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পি এইচ ডি গবেষক ও বি সি এস এডুকেশন ক্যাডার এর সদস্য বাবু রণজিৎ মল্লিক।
বিশেষ অতিথিবৃন্দ হিসেবে যুক্ত ছিলেন সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির গণিত বিভাগের প্রভাষক এলাচি আক্তার, নাট্যব্যক্তিত্ব সন্দীপন বিশ্বাস, বিশিষ্ট নারী উদ্যোগক্তা মিস্ নাঈমা ফেরদৌস, মিসেস পারভীন আক্তার ও গণমাধ্যম কর্মী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, জানিপপ এর ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার শারমিন সুলতানা শিমু, শাকিব হোসেন ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর একদল শিক্ষার্থী।
সভাপতির বক্তব্যে ড. কলিমউল্লাহ বলেন, জাতির পিতা সবসময় সকল সিদ্ধান্ত বিচক্ষণতার সাথে গ্রহণ করেছেন।
সেমিনারের মুখ্য আলোচক পি এইচ ডি গবেষক অধ্যক্ষ মাসুদ আহমেদ বলেন, ১৯৭২ সালের ১৯ জানুয়ারি গ্রেফতারের সময় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আমার মৃত্যু হলে আমার জনগণের লজ্জিত হওয়ার কারণ নেই, কিন্তু নতি স্বীকার করলে পুরো বিশ্ব লজ্জিত হবে”।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কখনো নতি স্বীকার করেননি। তার চরিত্রের একটি বিশেষ গুণ হলো, তিনি চেয়েছিলেন একটি রাষ্ট্রে হিন্দু মুসলমান ভেদাভেদে ভুলে সকলে একসাথে বাস করবে।
তিনি আরও বলেন, আজকের দিনে ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা কারামুক্ত হন। তিনি বঙ্গবন্ধুর মত নতি স্বীকার করেননি কখনো। তার জন্য আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক এবং স্বাধীন দেশে টিকে থাকতে পারছি।
শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর চিন্তা আদর্শ কর্ম সবকিছুই মেনে চলেন এবং তারই অনুসরণে দেশ পরিচালনা করছেন। তার জন্যই আমরা এখন একটি উন্নত দেশের দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিসেস আকলিমা জাহান বলেন, বঙ্গবন্ধু সবসময় নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের পাশে থাকতেন। কৃষকের পাশে থাকতেন, তাই তিনি বলেছেন , ” আমাদের চাষীরা হল সবচেয়ে দুঃখী এবং নির্যাতিত। তাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”
সেমিনারের গেস্ট অব অনার পি এইচ ডি গবেষক বাবু রণজিৎ মল্লিক বলেন, বঙ্গবন্ধুকে আমরা সবাই জানি। তার জন্ম বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এটি আমাদের জন্য ঐতিহাসিক ঘটনা। এখানে জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। যখনই যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি নিজ ইচ্ছায়, নিজ শক্তিতে এবং নিজ বিবেচনায় নিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের অধ্যায় ১৯৬৬ সালের ৬ দফা পেশ করার পর থেকে তা অগ্রসর এবং ফলপ্রসু হতে থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ দলেও বিদ্রোহ করেছেন এবং দেশের জন্য কাজ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম যেমন ছিলেন সাহিত্যের ক্ষেত্রে বিদ্রোহী এবং তিনি বিদ্রোহের সাথে তুলে ধরেছেন সাহিত্য । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তেমন রাজনীতিতে গড়ে তুলেছেন একটি বিদ্রোহী সত্তা। সচরাচর তথাকথিত রাজনীতির বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছেন বিদ্রোহী রাজনীতি, যার মাধ্যমে স্বাধীন দেশের জন্ম হয়েছে।
তিনি আরও বলেন,
নজরুলের সাহিত্যিক বিদ্রোহ যেমন তার কবিতার মাধ্যমে, রাজনীতির বিদ্রোহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফার মাধ্যমে। আর এর জন্য অনেক প্রচার ও প্রসার করতে হয়েছিল।
ছয় দফা কে কেন্দ্র করে তিন বছর জেলে থেকেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং এই জেলে থাকার সময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বাঙালি উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এরই মাধ্যমে ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ঘটে তাতে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু নাম দেওয়া হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন সাহিত্যের জন্য প্রতি সেক্টরে হাজির হয়েছেন, তেমনি শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির জীবনের প্রতিটি সেক্টরে হাজির হয়েছেন। একজন বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং অপরজন বাংলা রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির প্রভাষক এলাচি আক্তার বলেন, “বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্ব নন্দিত নেতা এবং বিশ্ব মানবতার মূর্ত প্রতীক”।
মিস্ নাঈমা ফেরদৌস বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলনের সময় রাজনৈতিক নেতা হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ সালে ভাষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই প্রথম প্রতিবাদ এবং ছাত্র ধর্মঘট এর সূচনা হয়, যা চূড়ান্ত রূপ নেয় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি।
ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর মিডিয়া ও জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে বিনির্মাণে যে অবদান রেখেছেন তা লক্ষাধিক শহীদ এবং মা-বোনের ইজ্জতের সমতুল্য।
জানিপপ এর ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার শারমিন সুলতানা শিমু বলেন , বঙ্গবন্ধু জনগণকে জনগণের সারিতে দাঁড়িয়ে অনুভব করেছেন।
বিশিষ্ট নারী উদ্যোগক্তা
পারভিন আক্তার বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আমারা প্রতিনিয়ত চর্চা করবো এবং অসহায়দের পাশে দাঁড়াবো।
জানিপপ এর ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার শাকিব হোসেন বলেন, ১১ জুন ১৯৭৩ সালের আজকের এই দিনের হাজার বছরে শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার রেল উন্নয়ন প্রকল্পে বাজেটে সাড়ে ১৭ কোটি টাকার প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং সেই সাথে যমুনার উপর সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতার পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন । এসব সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বোঝা যায় জাতির পিতা যোগাযোগের উপরে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছিলেন । জাতির পিতা সেই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন ।
সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন, গোপালগঞ্জস্থ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক প্রশান্ত কুমার সরকার।