মো:আলরাজী(স্টাফ রিপোর্টার)
সারাদেশে ডিমের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কমেছে চাহিদা। ফলে পোলট্রির রাজধানীখ্যাত গাজীপুর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডিমের সরবরাহ কমেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন জেলার পোলট্রি খামারিরা।
খামারিরা বলছেন, তারা নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলায় ডিম সরবরাহ করতেন। পোলট্রি খাদ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে গত কয়েকদিন ডিমের দাম বাড়ায় তারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। তবে দুদিন ধরে ওইসব এলাকা থেকে কেউ কিনতে না আসায় প্রতি একশো ডিমে ৫০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। এতে তারা ফের লোকসানের মুখে পড়ছেন।
এদিকে, গাজীপুরের পাইকারি বাজারে ডিমের দাম কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। ভোক্তা পর্যায়ে এখনো ৫৫-৬০ টাকায় প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে।বুধবার (১৭ আগস্ট) গাজীপুর মহানগরীর হাড়িনাল এলাকায় ফ্রেশ ডিমের আড়তের মালিক নূরে আলম জানান, সোমবার একশো ডিম ১ হাজার ৩০ টাকা করে কিনেছি। এরসঙ্গে ভাড়া ও লেবার খরচ রয়েছে। আমার আড়তে ১৫ হাজার ডিম অবিক্রীত রয়েছে। গত দুদিনে প্রতি একশো ডিমে ৫০-৭০ টাকা কমায় আগে কেনা ডিমগুলো লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হবে। তাই নতুন করে আর আড়তে ডিম আনছি না। কয়েকদিন বাজার পর্যবেক্ষণ করে দোকানে মাল উঠাবো।
কালিগঞ্জের জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের বৌন্না এলাকার পোলট্রি খামারি মঞ্জুর ব্যাপারী বলেন, পোলট্রি খাদ্যের ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় কিনতে হয়, যা আগে কেনা হতো ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। কয়েকদিন ডিমের দাম বাড়তি থাকায় কিছুটা লাভের মুখ দেখলেও ফের দাম কমার কথা শুনে আমরা হতাশ হয়েছি। লোকসান দিয়ে পোলট্রি খামার চালানো যাবে না।একই ইউনিয়নের ছাতিয়ানী এলাকার রেদওয়ান পোলট্রি ফার্মের মালিক আমজাদ হোসেন বলেন, পোলট্রি খামার টিকিয়ে রাখতে হলে প্রতিটি ডিম খামারিকে ১২-১৩ টাকায় বিক্রি করতে হবে। তা না হলে এ শিল্প টিকে থাকবে না। খামারিরা পোলট্রি শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন।
তিনি বলেন, গত সোমবার ফার্মের ১০০ লাল ডিম বিক্রি করেছি ১ হাজার ৩৫ টাকায় আর সাদা ডিম বিক্রি করেছি ৯৮০ টাকায়। তাতে প্রতি পিস ডিমের দাম ১০ টাকারও কম দাঁড়ায়।
আমজাদ হোসেন আরও বলেন, আমার ১১ হাজার মুরগি ছিল। লোকসান দিতে দিতে এখন মাত্র সাড়ে তিন হাজার মুরগি আছে। লোকসান অব্যাহত থাকলে এ ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পোলট্রি খাদ্যের দাম বাড়লেও সেই অনুপাতে ডিমের দাম বাড়েনি। কয়েকদিন ধরে ডিমের দাম বাড়লেও ফের কমতে শুরু করেছে। এতে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দিনের পর দিন ওষুধ ও খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, শিল্পায়নের প্রসার এবং ঋণের চাপে গাজীপুর সদর উপজেলা, টঙ্গী, জয়দেবপুর, কালিয়াকৈর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর উপজেলার অধিকাংশ পোলট্রি খামারি তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে জেলায় পোলট্রি খামার বলতে কিছুই থাকবে না বলে জানান খামারিরা।
গাজীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রতি বছর ডিমের চাহিদা ৯১ কোটি পিস। প্রতিদিন গড়ে ডিম উৎপাদন হচ্ছে ৩১ লাখ ৬ হাজার ৬৬৬ পিস। জেলায় ছোট-বড় খামার রয়েছে মোট ৬ হাজার ৬৭১টি। এর মধ্যে লেয়ার মুরগির খামার ৪ হাজার ১০৬টি ও ব্রয়লার মুরগির খামার ২ হাজার ৫৬৫টি। ডিম উৎপাদনের জন্য লেয়ার খামারে মুরগির সংখ্যা ১ কোটি ৫০ লাখ। যেগুলো থেকে বছরে ১১৪ কোটি পিস ডিম পাওয়া যায়। জেলার চাহিদা মিটিয়েও উদ্ধৃত ডিম রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয়।গাজীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এস এম উকিল উদ্দিন বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে পোলট্রি খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ভুট্টা আমদানি কমে যাওয়ায় এর দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এছাড়া সয়াবিনের (সয়াবিনের খইল) দাম বেড়ে গেছে অনেকাংশে। যে কারণে এসবের প্রভাব ডিমের বাজারে পড়েছে। ফলে ডিমের দাম বেড়ে গেছে। তবে সংকট কেটে গেলে ডিমের দাম দ্রুতই কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে, কালিগঞ্জ ও কাপাসিয়ার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ১৫ দিন আগেও ডিমের হালি ছিল ৩০-৩৫ টাকা, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। মুরগির ডিমের পাশাপাশি হাঁসের ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা বাজারে গিয়ে হতাশ হচ্ছেন।
বাংলাদেশ পোলট্রি রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব খ ম মহসিন বলেন, পোলট্রি খাদ্যের দাম স্বাভাবিক হলে ডিম ও মুরগির মাংসের দামও কমতে থাকবে। যদিও খাবারের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পোলট্রি খামারিরা দিশেহারা।