Monday , 1 July 2024
শিরোনাম

ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিনের প্রস্তাবিত কমিটিতে বিতর্কিতদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন আ’লীগ

ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিনের প্রস্তাবিত কমিটিতে বিতর্কিতদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন আ’লীগ

স্টাফ রিপোটার: ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের (দুই মহানগর) প্রস্তাবিত কমিটি জমা দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের অন্তর্গত ৭৫ টি ওয়ার্ড ২৪ টি থানা কমিটি জমা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত ১৬ জুন রাতে দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি কাছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন আহমেদ এ কমিটি জমা দেন। এই কমিটি জমা দেয়ার পর থানা-ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। তবে প্রস্তাবিত কমিটিতে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে ওঠে ত্যাগী ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সে দিন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি এবং দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবিরের নাম ঘোষণা করা হয়। সেই কমিটি ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়। অর্থ্যাৎ এই নেতৃত্বের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে সময় লাগে প্রায় এক বছর। অথচ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালে। অবশেষে চার বছর পর উত্তরের ২৬টি থানা ও ৬৪ টি ওয়ার্ড এবং দক্ষিণের ২৪টি থানা ও ৭৫ টি ওয়ার্ডের কোনো কমিটিই চূড়ান্ত করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়। যদিও দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, থানা ও ওয়ার্ড সম্মেলনের ৪৫ দিনের মধ্যে ঘোষণা করতে হয় নতুন কমিটি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ ফারুক খান বলেন, প্রস্তাবিত কমিটি জমা দেওয়া হয়েছে। আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছি,পর্যালোচনা করছি। তিনি বলেন, মহানগর ছাড়া থানা অথবা ওয়ার্ড পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিরা যোগ্যতা অনুসারে মূল্যায়িত হবেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক এলাকা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ। রাজপথে আন্দোলনের নামে বিরোধীদলগুলোর বিশৃঙ্খলা মোকাবিলা ও দলের বৃহত্তর কর্মসূচি বাস্তবায়নে তারা সম্মুখ সারির যোদ্ধার মতো ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের থানা ও ওয়ার্ড শক্তিশালী করতে কমিটি গঠনের তাগিদ দিয়েছে দলের হাইকমান্ড। তবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের থানা ও ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটিতে মামলার আসামি, বিএনপিপন্থি, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশমঞ্চ ভাঙচুরকারী, দখলদারদের ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণখান থানায় পদ পেতে যাচ্ছেন এ কে এম মাসুদুজ্জামান মিঠু। তার বিরুদ্ধে চাদাঁবাজি, অস্ত্র দিয়ে নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখানোর লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের কাছে।
সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের মধ্যেই এসব কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তবে কমিটির খসড়ায় শেখ হাসিনার সমাবেশে হামলাকারীর নামও রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি গঠনের কার্যক্রম চালাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের প্রস্তাবিত কমিটি ১৬ জুন কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। যেকোনো সময় আওয়ামী লীগের থানা-ওয়ার্ড কমিটি জমা দেওয়া হবে। অভিযোগ উঠেছে, এসব কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের বদলে বিতর্কিতরা প্রাধান্য পাচ্ছেন। কোথাও মাইম্যান (নিজস্ব বলয়) তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। আবার কোথাও হচ্ছে কমিটি বাণিজ্য। অভিযোগ উঠেছে,ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রস্তব করা হয়েছে সারোয়ার হাসান আলোর যে পচা মদ পানের কারনে স্টোক করে চোখ নস্টহয়ে গেছে,একসময় যুবদল নেতা তার বাবা বিএনপির রাজনিত সাথে জড়িত ছিলো ওয়ারী এলাকার সবার মুখে মুখে একজন অন্ধলোক কিকরে থানা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক হবে,যাকে দুইজন লাগে ধরে নিতে।২০০৩ সালে আরিফ নামে একজনকে হত্যা করে,ডাকাত শহিদের সহোযোগি হিসাবে কাজ করতো এই সারোয়ার হাসান আলো,ওরফে অন্ধ আলো।এখানে দীর্ঘ দিনের পরিক্ষিত ত্যাগি নেতা চৌধরী আশিকুর রহমান লাভলু ও হাজী আবুল হোসেনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।শাহবাগ থানার ২০নং ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটিতে সভাপতি পদে মকবুল হোসেনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে সক্রিয় না থাকলেও এক কাউন্সিলরের কাছের লোক বলে কমিটিতে রাখা হয়েছে। একই ওয়ার্ডে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে শাওনের নাম, যার বিরুদ্ধে দলের নাম ভাঙিয়ে নানা অপরাধ করার অভিযোগ রয়েছে। শাহবাগ থানা কমিটিতে প্রস্তাবিত সভাপতি মো: শহিদ ও সাধারণ সম্পাদক জি এম আতিক। ৪৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে সভাপতি মো: জমির আলী এবং সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম আশরাফ। জমির আলী ফেন্সি ব্যবসায়ী ও এলাকায় সন্ত্র¿াসী হিসেবে পরিচিত। তিনি নাজিম মুন্না গ্রুপের এক সময়ের কিলার হিসেবে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আশরাফ যুবলীগে সাধারণ সম্পাদক থাকা সময়ে গোলাপবাগ মাঠের পাশে টর্চার সেলে নিয়ে সাধারণ মানুষকে মারধর করে অর্থ আদায় করতো। তার কর্মকান্ড এলাকার মানুষ এখনো আতঙ্কে থাকে। তিনি মোরছালিন হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি চিলেন তিনি। বর্তমানে বিএনপির নেতা ও ৪৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাদল সরকারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে প্রস্তাব করা হয়েছে শেখ এনায়েত করিম বাবলু। তিনি একসময় সাংস্কৃতিক জোট করতেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী সভাপতি মান্নাফী কোটায় তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। মতিঝিল থানা অন্তর্গত ওয়ার্ড় হচ্ছে ৩ টি। এই ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে ৮-৯ ও ১০। ৮ নং ওয়ার্ডে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে মাসুম। তিনি একজন মাদকাসক্ত হিসেবে এলাকায় পরিচিত। ৯ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন ওয়াহিদুর রহমান চৌধুরী ওয়াহিদ। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক জায়গা দখল ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ। ইতিমধ্যে মতিঝিলের দিলকুশায় একটি জায়গা দখল করে রেখেছেন তিনি। কোনদিন ছাত্রলীগ বা যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থাকলেও ৯নং ওয়ার্ড কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।সুত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকের নাম প্রস্তাব করা হয়ে একসময়ের আলোচিত পুলিশের সহকারি-কমিশনার হত্যাকরি ফাঁসির হাতথেকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়েছে ছাত্রসমাজের সাবেক সভাপতি বর্তমানে বাংলাবাজার এলাকার জামাতের সকল পাবলিকেশন থেকে নিয়মিত মশোয়ারা নেন আরিফুল ইসলাম ছোটন।ছোটন পুরাতন ঢাকার একজন মুর্তআতঙ্কের নাম।এটি করেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফীর ছোট ছেলে দক্ষিণ সিটির ৩৮ নাম্বার ওয়ার্ডের কাউন্সিলার ইমতিয়াজ আহমেদ গৌরবের কোঠায়। ১০ নং ওয়ার্ড় সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে হিরককে। তিনি আন্ডার ওয়াল্ড জিসান গ্রুপে অন্যতম সদস্য। তার বিরুদ্ধে এলাকায় হত্যা মামলা চাঁদাবাজি মামলা ফুটপাতে দোকান এবং মাদক ব্যবসা। পল্টন থানা আওয়ামী লীগের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে সাবেক কাউন্সিলর পপি। তিনি ক্যাসিনো কর্মকান্ডের জন্য কাউন্সিলর পদ থেকে বহিষ্কার হন। পল্টন থানার অন্তর্গত ১৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে জয়ের। জয় হচ্ছে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। বেশ কয়েকবার মাদক সহ পল্টন থানায় গ্রেফতার হয় এবং একাধিক মামলা রয়েছে। তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন সাহেবের কোর্টায়।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অন্তর্গত তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ক্ষোভ জানিয়েছেন পদ প্রত্যাশী নেতারা। তারা কেন্দ্রীয় নেতা এবং মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে এ বিষয়ে ক্ষোভ জানাচ্ছেন। তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের পদপ্রত্যাশী একাধিক নেতা জানান, কমিটিতে কারা থাকছেন তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো না হলেও দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মাধ্যমে সবাই জেনে গেছেন। প্রস্তাবিত তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সভাপতি হিসেবে আছেন নুরুল ইসলাম মোল্লা সুরুজ ও সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন মুহিবুল হাসান। মুহিবুল হাসান বর্তমানে নগর কমিটির সদস্য পদে আছেন। তবে তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ৫৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাসির উদ্দিন বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু আমাকে আউট করে থানা কমিটি দেয়া হচ্ছে বলে শুনতে পেয়েছি। কিন্তু যাদেরকে দেওয়া হচ্ছে তারা অযোগ্য। থানা কমিটির সামলানোর সক্ষমতা তাদের নেই। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবাই অবাক হয়েছে। হাসি ঠাট্টা তৈরি হয়েছে এলাকায়।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন,প্রস্তাবিত কমিটিতে বিতর্কিতদের স্থান পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, অভিযোগ ওঠায় কিছু নাম ইতোমধ্যে পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও পরিবর্তন হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন,ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটি জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যারা পরীক্ষিত নেতা তাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাউন্সিলদেরও রাখা হয়েছে। যারা অনেক পুরাতন এবং আগের কমিটিতে ছিলেন তাদের রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অধীনে ২৬ থানা ও ৬৪টি ওয়ার্ড রয়েছে। আর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অধীনে ২৫ থানা ও ৭৫টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড রয়েছে। প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। কোনো কোনো ওয়ার্ড কমিটির বয়স ১০ বছরের অধিক। ২০২১ ও ২০২২ সালে থানা ও ওয়ার্ড শাখা কমিটির সম্মেলন করেছেন নগর আওয়ামী লীগের নেতারা। সম্মেলনে কমিটি দেওয়ার কথা থাকলেও তা গত দুই/তিন বছরের বেশি সময় ধরে প্রকাশ করতে পারেনি নগরের শীর্ষ নেতারা। এর পর মাঝে অন্তত পাঁচবার সময় পেছানো হয়েছে। মাঝে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের অজুহাতেও সময় বাড়ানো হয়েছে। ভালো পদের আশায় ওয়ার্ড ও থানার অনেক নেতা নির্বাচনি মাঠে আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করেছেন ঠিকই; তবে তারা দলীয় পরিচয় দিতে পারেননি।

Check Also

স্বচ্ছতার সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নতুন অর্থবছরে মন্ত্রিসভার প্রথম ও নিয়মিত বৈঠক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার (১ জুলাই) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x