সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছে ‘ওয়েবিল’। তবে এই পদ্ধতিতে ভাড়া নেওয়া কিছু পরিবহন এখনও চলছে ওয়েবিলে। অন্যদিকে বাড়তি ভাড়া আদায়ে কোনো কোনো পরিবহন পরিবর্তন এনেছে তাদের কৌশলে।
শুক্রবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর পুরান ঢাকা, শাহবাগ, মহাখালী ও বাড্ডাসহ কয়েকটি সড়ক ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
ঢাকার রাস্তায় কোন স্টপেজ থেকে বাস কখন ছাড়ল, বাসে কতজন যাত্রী ছিল ইত্যাদির হিসাব রাখতে অনেক গণপরিবহনে ওয়েবিল পদ্ধতি চালু করে। এরই মধ্যে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এই প্রথা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে।
শুক্রবার (১২ আগস্ট) বাড্ডায় দেখা যায়, আসমানী ও জাবালে নূর পরিবহন ওয়েবিল অনুসারে যাত্রীদের কাছে ভাড়া আদায় করছে। চেকার উঠে যাত্রীর সংখ্যা দেখে নির্ধারিত খাতায় লিখছেন। এ ব্যাপারে আসমানী পরিবহনের কন্ট্রেকটার কাছে জানতে চাইলে বলেন, ওয়েবিল বাতিল হয়েছে এমন নির্দেশনা তার জানা নেই। থাকলেও পূর্ব থেকেই তারা এ পদ্ধতিতেই ভাড়া আদায় করছেন। তিনি বলেন, টাকার হিসাব ঠিক রাখতেই ওয়েবিলে লিখে রাখছেন।
ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে মিরপুর রুটে চলা বিহঙ্গ পরিবহনে ওয়েবিলে অনুযায়ী ভাড়া কাটতে দেখা গেছে। যদিও পূর্বের নিয়মে চেকার দেখা যায়নি। তবে আগের স্টপেজ অনুসারেই ভাড়া দাবি করছে। যা কিলোমিটার হিসেবে বেশি।
যাত্রীরা বলছেন, তেলের দাম বাড়ার পর পরই ভাড়া বেড়েছে গণপরিবহনে। কোনো প্রকার সিদ্ধান্ত ছড়াই যে যা পাছে ভাড়া আদায় করছে। এখন ওয়েবিল প্রতি বাড়িয়েছে আরও পাঁচ টাকা।
বাসগুলোতে উঠে দেখা যায়, ভাড়ার তালিকা বাসের একাধিক জায়গায় থাকা বাধ্যতামূলক করা হলেও দেখা যায়নি কোথায়। দুই একটি বাসে একটি তালিকা চালকের লুকিং গ্লাসে বাঁধা। যেখান থেকে দেখা যায়না কিছুই।
এদিকে বাসে তালিকা দৃশ্যমান রাখা ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ডিজিটাল ভাড়ার তালিকা টানানোর নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন একজন আইনজীবী। গত জানুয়ারিতে দেওয়া আদেশে এক মাসের মধ্যে বিআরটিএকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই জানায়নি সংস্থাটি।
রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু তালেব বলেন, জানুয়ারিতে আদালত আদেশ দিলেও এখনও কোনো কিছু জানায়নি বিআরটিএ। অন্যদিকে ভাড়ার নামে যাত্রীদের পকেট কাটছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
বিআরটিএ নতুন ভাড়ার তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ হওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লায় চলাচলকারী ডিজেল চালিত বাস-মিনিবাসের যাত্রী প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ২০ পয়সা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী সড়ক ও জনপথ অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত দূরত্ব এবং সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, বিআইডব্লিউটিসি ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ থেকে প্রাপ্ত ব্রিজ টোল/ফেরি ভাড়ার তালিকা অনুসরণ করে যাত্রী প্রতি প্রত্যেক পারাপারে টোল/ফেরি ভাড়া (প্রযোজ্য ক্ষেত্র) নির্ধারণ করে ভাড়ার চার্ট প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রস্তুতকৃত ভাড়ার তালিকা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হলো।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর শনিবার (৬ আগস্ট) রাতে বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে দীর্ঘ বৈঠকে বাস-মিনিবাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। সিটি সার্ভিসে কিলোমিটার প্রতি বাড়ছে ৩৫ পয়সা। আর দূরপাল্লায় ৪০ পয়সা করে বাড়বে।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি জানিয়েছে, ঢাকা শহর ও শহরতলী রুটে চলাচলকারী গাড়ির ওয়েবিলে কোনো স্ল্যাব থাকবে না। রাস্তায় কোনো চেকার থাকবে না। এক স্টপেজ থেকে আরেক স্টপেজ পর্যন্ত গাড়ির দরজা বন্ধ থাকবে, খোলা রাখা যাবে না। রুট পারমিটের স্টপেজ অনুযায়ী গাড়ি থামাতে হবে।
একই সঙ্গে আরও জানানো হয়েছে, বিআরটিএর চার্ট অনুযায়ী ভাড়া আদায় করতে হবে- চার্টের বাইরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না। প্রতিটি গাড়িতে দৃশ্যমান স্থানে ভাড়ার চার্ট অবশ্যই টানিয়ে রাখতে হবে।
বলা হয়, কোনো পরিবহনের গাড়িতে বিআরটিএর পুনঃনির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত যাতে আদায় না করা হয়, সে বিষয়ে সভায় মালিকদের সমন্বয়ে ৯টি ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হয়। এসব টিম বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে থেকে সব অনিয়ম তদারকিসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
এর আগে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে বাসমালিকদের দাবির মুখে বাসভাড়া বাড়ায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। ৭ আগস্ট থেকে নতুন এ ভাড়া কার্যকর হয়।