মাহে রমজানে রাত্রিকালে এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে যে নামাজ আদায় করা হয়, একে ‘তারাবি নামাজ’ বলা হয়।
আরবি ‘তারাবিহ’ শব্দটির মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা। তারাবি নামাজ পড়াকালে প্রতি দুই রাকাত বা চার রাকাত পরপর বিশ্রাম করার জন্য একটু বসার নামই ‘তারাবি’। দীর্ঘ নামাজের কঠোর পরিশ্রম লাঘবের জন্য প্রতি দুই রাকাত, বিশেষ করে প্রতি চার রাকাত পর একটু বসে বিশ্রাম করে দোয়া ও তসবিহ পাঠ করতে হয় বলে এ নামাজকে ‘সালাতুত তারাবিহ’ বা তারাবি নামাজ বলা হয়।
ফকিহরা তারাবির নামাজকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলেছেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তারাবির নামাজে অংশ নিতেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তা ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় জামাতে অংশ নেননি। তবে তিনি ঘরে তারাবির সময় নামাজ আদায় করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে তারাবির জামাতে অংশ না নিলেও উম্মতকে তারাবির প্রতি উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও পরকালের আশায় রমজানের রাতে কিয়ামুল লাইল (তারাবি) আদায় করবে, তার অতীতের পাপ মার্জনা করা হবে।’ (নাসায়ি, হাদিস : ২২০৫)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখবে এবং তারাবি আদায় করবে, সে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী ও শহীদদের কাতারভুক্ত বলে গণ্য হবে।’ (সহি ইবনে হিব্বান)
তারাবি নামাজে কোরআন খতম করার নিয়ম রয়েছে। যদিও রমজানে তারাবির নামাজের মর্যাদাবিষয়ক হাদিসে কোরআন খতমের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ নেই। তবে অন্য হাদিস ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আমল দ্বারা তারাবির নামাজে কোরআন খতমের গুরুত্ব প্রমাণিত হয়। তা এভাবে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে অধিক পরিমাণ কোরআন তিলাওয়াত করতেন এবং অন্যদের কোরআন তিলাওয়াত করতে উদ্বুদ্ধ করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রমজানের প্রতি রাতে জিবরাঈল (আ.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে কোরআন শোনাতেন। (সহিহ বুখারি) এসব হাদিসে অন্যকে কোরআন শোনানো এবং তা শোনার তাগিদ পাওয়া যায়।
কোনো সন্দেহ নেই, খতম তারাবি মর্যাদার বিষয়। তবে কারো কোনো অপারগতা থাকলেও তা বিবেচনা করতে হবে। তাই কেউ কোনো কারণে খতম তারাবি না পড়লে তাকে গালমন্দ করা যাবে না। কেননা যে আমল সরাসরি কোরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়, তার জন্য কারো মন্দ ধারণা পোষণ করা ও বাজে মন্তব্য করা অনুচিত।