ঢাকার সর্ববৃহৎ বেসরকারি তেজগাঁও কলেজে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে। কলেজের আওয়ামীপন্থী অধ্যক্ষ ড. হারুন-অর-রশিদ ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে কলেজে যোগদান করেননি। তাছাড়া তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে ১২ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হোন কলেজের উপাধ্যক্ষ আনজুমান আরা।
খোঁজ নিয়ে যানা যায়, আওয়ামীপন্থী দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষককরা নিজেদের অপরাধকে আড়াল করতে নিজেদের অনুগত ছাত্রজনতার আন্দোলনের বাঁধাদানকারী শিক্ষককদের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে বসানোর জন্য দাবি তোলার অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে তারা শিক্ষার্থীদের দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ব্যানারে আওয়ামী এই দোসরদের পদায়নের চেষ্টা করছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, এদের মধ্যে অধ্যক্ষ হারুন-অর-রশিদের আস্থাভাজন সিএসই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিনুল হক, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারি অধ্যাপক এরশাদুল ইসলাম সৈকত, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ইংরেজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সিক্তা দাশ, টুরিজম ও হসপিটালিটি বিভাগের প্রভাষক ও বিভাগীয় প্রধান আজিজুর রহমান এবং ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক খোরশেদ আলম বাপ্পীসহ অনেকে যারা গত ১৫ বছর ধরে কলেজে উন্নয়ন কমিটি, চাকরি পরীক্ষা ও নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে সরাসরি জড়িত।
আওয়ামীপন্থী অধ্যক্ষের আস্থাভাজান অধ্যাপক আমিনুল হক একাধারে অভ্যন্তরীন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ, কলেজের আইটি বিভাগ, সিইডিপি প্রজেক্টসহ কলেজের অধিকাংশ উন্নয়নমূলক কাজের কমিটিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আছেন। এই প্রত্যেকটি বিভাগে তার বিরুদ্ধে দুনীতির বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাছাড়া নিজ ক্ষমতাবলে সহোদর এক ভাইকে কলেজের শিক্ষক বানিয়েছেন এবং আরেক ভাইকে শিক্ষার্থীদের বেতন সংগ্রহের অ্যাপস নগদ এর সহযোগী বানিয়েছেন।
অন্যদিকে আরেক আওয়ামী সহযোগী এরশাদুল ইসলাম সৈকত, যিনি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন অধ্যক্ষের একান্ত ইচ্ছা ও সিলেকশনে, যদিও কমিটির মেয়াদ পার হয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে কলেজের টাকা আত্মসাত, নিয়োগে প্রভাব খাটানো এবং যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ভিন্নমতের শিক্ষকদের প্রমোশন আটকানোসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
আরেক শিক্ষক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ছিলেন বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিরোধী। তার প্রভাবে কোন শিক্ষার্থী সরাসরি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এমনকি যে সকল শিক্ষক বা শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন, তাদের লিস্ট তিনি অধ্যক্ষের কাছে পাঠাতেন। তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ হলো কলেজে ভিন্নমতের শিক্ষকদের নামে বেনামে নালিশ করা এবং অপমান ও অপদস্ত করা, তাছাড়া উন্নয়ন কমিটির নামে কলেজ ফান্ডের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
সিক্তা দাশ প্রভাব খাটিয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান হয়েছেন এবং তিনি কলেজের ডিবেটিং ক্লাবের মডারেটর। অভিযোগ রয়েছে, তিনি টিসিডিসি এর বর্তমান ও প্রাক্তন সদস্যের দিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রভাব বিস্তার করে অধ্যক্ষের অনুগত কাউকে প্রভাবশালী পদে বসাতে চাচ্ছেন। তিনিও টিসিডিসি এর ব্যানারে কলেজে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের কোনো কার্যক্রম করতে দেন নি। এর জের ধরে ক্লাবের বর্তমান কমিটির এক সহ সভাপতি গত জুলাই মাসের শেষ দিকে পদত্যাগও করেছেন বলে জানা গেছে।
আজিজুর রহমান অধ্যক্ষের সরিষাবাড়ি জোনের বিশ্বস্ত লোক। প্রভাষক হয়েও হোটেল এন্ড টুরিজম বিভাগের চেয়ারম্যান পদটি বাগিয়ে নিয়েছেন। অধ্যক্ষের দুনীতির অন্যতম সহযোগী হিসেবে কলেজে পরিচিত মুখ। যার এক চাওয়াতেই কলেজে লাখ লাখ টাকা অনুমোদন হয়ে যায়।
তাছাড়া খোরশেদ আলম বাপ্পীসহ অনেকের বিরুদ্ধে কলেজের টাকা নয়-ছয়ের অভিযোগ রয়েছে, যারা কলেজে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত।
এছাড়া সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক রাশেদুজ্জামান লিটু এক সময় বিএনপির রাজনীতি করলেও বর্তমানে আওয়ামী শিক্ষকদের সাথে হাত মিলিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে উসকে দিয়ে উপাধ্যক্ষ পদটি নিজে বাগিয়ে নিতে চাচ্ছেন, আর এতে সহায়তা করছে কিছু আওয়ামীপন্থী শিক্ষক। জনাব লিটু বুয়েটের সানী হত্যা মামলার আসামি ছিলেন বলে জানা গেছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে চাকরি বানিজ্য ও নারী কেলেংকারীর মতো ভয়াবহ অভিযোগ রয়েছে।