এবারের নির্বাচনে ২৩টি পদে ১১টি প্যানেল ও স্বতন্ত্রসহ ২৪৭ জন, সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধির পাঁচটি পদে ৫৮ জন, প্রতিটি হল সংসদের ১৫টি করে পদে ১৭টি হলে ৫৯৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের রাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে ১৮ জন, জিএস পদে ১৩ জন ও এজিএস পদে ১৬ জন এবং বাকি ২০টি পদে ২০০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রাকসু ও সিনেটে মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ১১ হাজার ৩০৫ জন এবং ছাত্র ১৭ হাজার ৫৯৫ জন।
রাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। প্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের মাঝে বইছে উত্তেজনা ও উচ্ছ্বাস। আবাসিক হলে, বিভাগে, ক্যাফেটেরিয়া ও প্রতিটি আড্ডায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু রাকসু নির্বাচন। শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন জানাচ্ছেন।
নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি ঠেকাতে ভোটারদের ‘থ্রি ডাইমেনশনাল সিকিউরিটিতে (তিন স্তরের নজরদারি)’ রাখা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল বুধবার দুপুরে সিনেট ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘প্রথমে ভোটার/শিক্ষার্থী যে আইডি কার্ড নিয়ে আসবে, সেটির সত্যতা যাচাই করা হবে। এরপর ভোটারের ইউনিক আইডি ছবিযুক্ত ভোটার কার্ডের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। ছবির সঙ্গে ভোটারের মিল নিশ্চিতের পর সন্দেহ হলে কার্ডের গোপনীয় কিউআর কোড স্ক্যান করে চূড়ান্তভাবে যাচাই করা হবে।’ ব্যালট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভোটার সংখ্যার অতিরিক্ত একটি ব্যালটও ছাপা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব বিভাগে প্রশ্নপত্র তৈরি হয়, সেখান থেকেই ব্যালট পেপার তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে আটটি ধাপ পেরিয়ে ব্যালট প্রস্তুত করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভোট গণনার জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক ওয়েমার্ক রিডার মেশিন সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো ফলাফল সেন্টারে স্থাপন শেষে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। এসব মেশিন থেকে ১৫ থেকে ১৭ ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল দেওয়া সম্ভব হবে।’
রাকসু নির্বাচনে মমতাজউদ্দিন কলাভবন, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ কলাভবন, সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবন, জাবির ইবনে হাইয়ান ভবন, জামাল নজরুল ইসলাম ভবন, সত্যেন্দ্রনাথ বসু ভবন, জগদীশচন্দ্র একাডেমিক ভবনে দুটি ও জুবেরী আন্তর্জাতিক অতিথি ভবনের একটিসহ মোট ১৭টি কেন্দ্রে ৯৯০টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হবে।
এর আগে লিখিত বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রাকসুর নির্বাচনের সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ভোটগ্রহণের দায়িত্বে থাকবেন ২১২ জন শিক্ষক। এর মধ্যে ১৭ জন প্রিসাইডিং অফিসার, বাকিরা সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং ৯১ কর্মকর্তা পোলিং অফিসারের দায়িত্বে থাকবেন।’ তিনি বলেন, ‘একেক জন ভোটারকে ৪৩টি ভোট দিতে হবে। এতে সময় লাগবে ১০ মিনিট। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় রাবি নিজস্ব প্রক্টরিয়াল বডির পাশাপাশি ৬ প্লাটুন বিজিবি, ১২ প্লাটুন র্যাব এবং ২ হাজারের অধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে গোপন বুথ ছাড়া সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার করা হবে।’ এছাড়া ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ১০০ সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
এছাড়া নির্বাচনে সাইবার স্পেসে গুজব প্রতিরোধে আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি টিম যৌথভাবে সোশ্যাল মিডিয়া মনিটর করছে। সকালে জুবেরীভবন সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল মাঠে নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের ব্রিফিংয়ে সভাপতির বক্তব্যে আরএমপি কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। এ নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অধীনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি তাদের সহযোগিতার জন্য দায়িত্ব পালন করবেন।’
গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শেষ হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, বুধবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম ছিল। বিনোদপুর, কাজলা, প্রধান ফটক, চারুকলা, স্টেশন বাজারসহ বিভিন্ন ফটকে পুলিশ ছিল। বেলা পৌনে ১১টায় পরিবহন মার্কেটের সামনে ক্রিকেট খেলছিলেন একদল শিক্ষার্থী। তাদের একজন ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী তাইফুজ্জুমান তপু বলেন, ‘নির্বাচনের অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। সকলের প্রত্যাশা, সুষ্ঠু নির্বাচনে যোগ্য নেতৃত্ব আসুক।’
এদিকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে রাবি ছাত্রদলের ক্রীড়া সম্পাদক মেহেদী হাসানকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। মেহেদী হাসান ‘স্বতন্ত্র’ এজিএস প্রার্থী শাহ পরানকে সমর্থন জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় ছাত্রদল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ২৯ জুলাই রাকসুর ১৪তম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।