ব্রিটেনে দীর্ঘ ৭০ বছর রাজকার্য পরিচালনাকারী রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাকিংহাম প্যালেস কর্তৃপক্ষ দিনটি নির্দিষ্ট করে জানাবে।
ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে হচ্ছে সেই ঐতিহাসিক গির্জা যেখানে ব্রিটেনের রাজা এবং রানিদের মুকুট পরানো হয়। এখানেই ১৯৫৩ সালে রানি হিসেবে এলিজাবেথের অভিষেক এবং ১৯৪৭ সালে প্রিন্স ফিলিপকে বিয়ে করেছিলেন এলিজাবেথ।
১৮ শতক থেকে অ্যাবেতে কোনও রাজার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান হয়নি। তবে ২০০২ সালে সেখানে রানির মায়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়েছিল। সেখানে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন ২০ হাজারের বেশি মানুষ।
রানির জীবন ও সেবামূলক কাজকে স্মরণ করতে রাজপরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সেখানে জড়ো হবেন বিশ্বনেতারাও। যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীরাও সেখানে থাকবেন।
দিনটি শুরু হবে যখন রানির কফিনবাহী গাড়িবহর (রয়্যাল নেভির স্টেট গান ক্যারেজ) ওয়েস্টমিনস্টার হল থেকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে নিয়ে যাওয়া হয়।
রানির কফিনটি ১১ শতকে মধ্যযুগীয় আদলে গড়া কাঠের ছাদের নিচে একটি উচুঁ প্ল্যাটফর্মে রাখা হবে। বিশেষ স্থানটিকে বলা হয় ক্যাটাফাল্ক। প্ল্যাটফর্মের প্রতিটি কিনারায় রয়্যাল সেনাসদস্যরা দাঁড়িয়ে থাকবেন।
বাকিংহাম প্যালেস থেকে একটি ধীরগতির পথযাত্রার মাধ্যমে ওয়েস্টমিনস্টার হলে নিয়ে আসা হবে তাকে। সেখানে দেয়া হবে সামরিক কুচকাওয়াজ। থাকবেন রাজপরিবারের সদস্যরা।
এই ধরনের রাজকীয় গাড়িবহর সবশেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৭৯ সালে। সে সময় প্রিন্স ফিলিপ্সের চাচা লর্ড মাইন্টব্যাটেনের কফিন নিয়ে এগিয়ে যান ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ১৪২ মেরিনসেনা।
রাজপরিবারের সদস্যরা ও নতুন রাজা প্রিন্স চালর্সও এই বহরের সামনের দিকে থাকবেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে ওয়েস্টমিনস্টারের ডিন ডেভিড হোয়েল অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন। এবং ক্যান্টারবুরির আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি সেখানে ধর্মীয় বক্তব্য দেবেন। দেশটির নতুন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসও সেখানে ধর্মীয় উপদেশ (সারমন) পড়ে শুনাবেন।
এর পর অ্যাবে থেকে রানির কফিন নিয়ে যাওয়া হবে হাইড পার্ক কর্নারের ওয়েলিংটন আর্কে। সেখান থেকে কফিনবাহী বহর উইন্সরের পথে যাত্রা করবে।
উইন্সরের জর্জ চ্যাপেলে রাখা কফিনে আবারও শ্রদ্ধা জানাবেন রাজপরিবারের সদস্যরা।
সেন্ট জর্জ চ্যাপেলের ভেতর কিং জর্জ ফোর মেমোরিয়াল চ্যাপেলে চিরনিন্দ্রায় শায়িত হবেন রানি।
ব্রিটিশ ইতিহাসে দীর্ঘতম রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে রানি মারা গেছেন স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়।
স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসেলে তার পরিবারের সদস্যদের মাঝে শান্তিপূর্ণভাবে মারা যান।
তার মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে মাত্র ২৫ বছর বয়সে ব্রিটিশ রাজকার্যের দায়িত্ব গ্রহণকারী রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ৭০ বছর সিংহাসন পরিচালনার অনন্য ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটেছে।
যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে তার মতো দীর্ঘ সময় সিংহাসনে থাকার রেকর্ড আর কারও নেই। ৯৬ বছর বয়সে রাজকার্য পরিচালনাও একটি অনন্য সফলতা।
ব্রিটেন ছাড়াও তিনি ছিলেন কানাডা, অস্ট্রিলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ ১৪টি দেশ ও একাধিক অঞ্চলের রানি। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীন ছিল এমন ৫৪টি দেশের জোট কমনওয়েলথের প্রধান ছিলেন তিনি।