মোঃ রাজন আহম্মেদ,ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি:
ঢাকার ধামরাইয়ে স্বল্প পুঁজিতে লেবু চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে বেকারত্ত দূর করেছে অনেক যুবক ও দরিদ্র কৃষক। সরকারী ভাবে ছোট-খাট সমস্যা দুর ও পৃষ্ঠ-পোষকতা পেলে বিদেশে লেবু রফতানীকরে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রাঅর্জন সম্ভব। যাদবপুর ও বালিয়াএ দুই ইউনিয়নের কৃষকরা বাড়ির উঠান থেকে শুরু করে রাস্তার ধার, পরিত্যক্ত, উঁচুসহ এলাকার পুরো কৃষিজমিতেই চাষ করছেন লেবু।পাঁচ হাজার চাষির পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করেন এই লেবু চাষের মাধ্যমে।এখান কার উৎপাদিত লেবু রফতানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে।
ধামরাই পৌরসভা থেকে ২৬ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তরের দুটি ইউনিয়নের নাম যাদবপুর ও বালিয়া। এ দুটি ইউনিয়নে বেশির ভাগ জমিতেই লেবু চাষ করা হয়। যে দিকেই দু চোখ যায়, শুধু লেবু ক্ষেত দেখা যায়। এখানকার কৃষকদের প্রধান আয়ের এর উৎসই হচ্ছে লেবু চাষ। স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ কৃষকই লেবু চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ধামরাই আশপাশের এলাকার মানুষ যাদবপুর ও বালিয়াকে ‘লেবুর ইউনিয়ন’ বলে ডাকেন। এ ছাড়াও ধামরাইয়ের আমতা, গাংগুটিয়া, চৌহাট ও কুশুরা ইউনিয়নেও ব্যাপকভাবে লেবুর চাষ হচ্ছে। ধামরাইয়ে তিন ধরনের লেবুর চাষ হয়ে থাকে, যা স্থানীয়ভাবে এলাচি, কলম্বো ও কাগজিলেবু নামে পরিচিত। এলাচি জাতের লেবু আকারে বড় ও সুগন্ধী, বিচি কম এবং সারা বছরই ফলন হয়। যাদবপুর ইউনিয়নের গাঁওতারা, আমছিমুর, আমরাইল, গ্রোমগ্রাম, পাইচাল, হরিদাসপুর ও বালিয়া ইউনিয়নের বাস্তা, টেটাইল, পূর্ব বালিয়া গ্রামের প্রায় ৫ হাজার প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক তিন হাজার ১৫ একর জমিতে লেবু চাষ করেছেন। উপজেলা কৃষিবিভাগের তথ্যানুসারে, এবছর ধামরাই উপ জেলার
বালিয়া,যাদবপুর,গাংগুটিয়া,আমতা,বাইশকান্দা ,সোমভাগ, সানোড়া, কুশুরাসহ মোট ১১টি ইউনিয়নে প্রায় ৬২১ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হয়েছে। এলাকার অনেক বেকার যুবক সহ বিভিন্ন পেশার লোকজন ব্যক্তিগত ও বানিজ্যিক ভাবে,আবার নিজের জমি চাষের পাশাপাশি অন্যের জমি ইজারা নিয়েও স্বল্প পুঁজিতে লাভ জনক ভাবে লেবুচাষ করছেন। একবার লেবুর চারা লাগিয়ে ১০/১২বছর ফসল পাওয়া যায়। বাজারে চাহিদা থাকায় ও ভাল দাম পাওয়ায় দিন দিন ধামরাইতে লেবুচাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাছে লেবু ধরা শুরু করলে বছরে প্রায় ১২ বার লেবু সংগ্রহ করা যায়। টেটাইল গ্রামের লেবুচাষি নুরুল ইসলাম জানান, এ বছর তিনি ২৫ বিঘা জমিতে লেবুর চাষ করেছেন। গত দুই বছর লেবু চাষে তেমন লাভ না হলেও এবার তার সাত থেকে আট লাখ টাকা লাভ হবে। তিনি আরও জানান, ঢাকার কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের লেবু কিনে নেওয়ার পর বাছাই করে সেই লেবু মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করে থাকেন। সরকারের কাছে তার দাবি, কৃষকরা যাতে সরাসরি বিদেশে লেবু রফতানি করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা গ্রহণের। উপজেলা কৃষি মো:আরিফুল হাসান জানান, উঁচু জমিতে লেবু চাষকরলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।সেদিক থেকে ধামরাইয়ের যাদবপুর, বালিয়া, কুশুরা, গাংগুটিয়া ও চৌহাট ইউনিয়ন লেবু চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এসব ইউনিয়ন থেকে প্রতিবছর কয়েকশ’ কোটি টাকার লেবু রফতানি হচ্ছে।