মোঃ সুইট হোসেন নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ
দেশের মধ্যে খাদ্য ভান্ডার হিসাবে পরিচিত উত্তরবঙ্গের নওগাঁ জেলা। নওগাঁয় উৎপাদিত ধান ও চালের সুনাম রয়েছে সারা দেশজুড়ে। দেশের অন্যতম বড় চালের মোকাম নওগাঁয় ভরা ইরি-বোরো মৌসুমে হঠাৎ করেই চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে প্রকারভেদে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চালের দাম ২শ থেকে ৩শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাইকারী এই দামের প্রভাব খুচরা বাজারেও পড়েছে।
শহরের খুচরা বাজারে চাল কিনতে আসা রিক্সা চালক রহিম উদ্দিন, দিনমজুর আব্দুল খালেকসহ অনেকেই বলেন, দিনশেষ দিনমজুরীর কাজ করে যে টাকা মজুরী হিসেবে পাই চাল কিনতে এসে তার পুরোটাই চলে যাচ্ছে। অন্যান্য বাজারতো দূরের কথা। এভাবে যদি প্রতিদিনই চালের দাম বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে আমরা নিম্ম আয়ের মানুষরা কোথায় গিয়ে ঠাঁই নিবো। আমাদের দিকে কি সরকারের সুদৃষ্টি কোন দিনই পড়বে না?
চালকল মালিকদের দাবি, ধানের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চাল উৎপাদনের খরচও বেড়ে গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে প্রতি মণ ধানের দাম ৮০ থেকে ২শ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। চাল উৎপাদনের পর খরচ সমন্বয় করতে গিয়ে দাম বাড়াতে হচ্ছে। ধানের দাম বাড়ার কারণে গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে পাইকারিতে প্রতি কেজি চালের দাম পাঁচ থেকে আট টাকা পর্যন্ত বাড়াতে হয়েছে।
পৌর চাল বাজারের খুচরা বিক্রেতা উত্তম সরকার বলেন, পাইকারি কেনার ওপর খুচরা দর ঠিক করা হয়। দাম বাড়ানো বা কমানো কোনো কিছুতেই খুচরা বিক্রেতাদের কিছুই করার থাকে না। বর্তমানে খুচরা বাজারে কাটারী চাল এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬৮টাকায় সেটি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭৫টাকায়, জিরাশাইল চাল এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০টাকায় সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০টাকায় ও গরীবের চাল হিসেবে খ্যাত স্বর্ণা-৫ চাল এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪২টাকায় সেটি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫০টাকায়। আর অন্যান্য চালের দাম তেমন একটা বৃদ্ধি পায়নি। তবে নিয়মিত ভাবে যদি সরকারের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করা হতো তাহলে এভাবে হুটহাট করে চালের দাম বৃদ্ধি পেতো না।
নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্রচাল ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, বোরো ও আমনের ভরা মৌসুমে সাধারণত চালের সরবরাহ বেশি থাকায় চালের দাম বছরের অন্য সময়ের তুলনায় চালের দাম কম থাকে। কিন্তু এবার ঈদের (ঈদুল ফিতর) পর থেকে বোরো মৌসুমের চাল বাজারে আসা শুরু করতেই চালের দাম না কমে উল্টো বাড়তির দিকে। গত দুই তিন সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতি দিনই চালের দাম বাড়ছে। অবস্থা এমন হয়েছে একদিন পরপর মোকামে প্রতি বস্তা চালের দাম ৫০ থেকে ৮০ টাকা করে বাড়ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দুই-তিন সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে ক্রেতাদের ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে চাল কিনে খেতে হবে। চালের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় খুচরা বাজারে কমেছে ক্রেতার সংখ্যা। সবাই অপেক্ষা করছে দাম কমার।
জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, চালের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হলো হঠাৎ ধানের দাম বেশি। বৈরি আবহাওয়ার কারণে নওগাঁসহ উত্তরাঞ্চলে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ধানের উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কার কারণে, বাজারে ব্যবসায়ীদের ধান কেনার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বেশি দামে ধান কেনার পর চাল উৎপাদনের পর খরচ সমন্বয় করতে গিয়ে চালের দাম বাড়াতে হচ্ছে।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বলেন, চালের দাম বৃদ্ধির সংবাদ আমি পেয়েছি। অতি দ্রুত চালের অস্থির বাজারকে স্থির করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হবে। সেই সাথে যে সব অসাধু ব্যবসায়ীরা অকারণে চালের দাম বাড়িয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।