আবুল কালাম আজাদ (রাজশাহী) :- চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের (গোমস্তাপুর, নাচোল ও ভোলাহাট) উপনির্বাচনে নায়িকা মাহিয়া মাহি নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চেয়ে ইতিমধ্যে গণসংযোগ শুরু করছেন। গত সোমবার বিকালে নাচোল রেলস্টেশনে এবং মঙ্গলবার বিকালে গোমস্তাপুরের রহনপুর বাজারে আসন্ন উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়ে গণসংযোগ করেন তিনি ।
এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছেন।
বুধবার নিজের ফেসবুক পেজে একটি নির্বাচনি পোস্টার পোস্ট করেন মাহি। মুহূর্তেই তার পোস্টারটি ভাইরাল হয়ে যায়।
তবে মাহির এমন কাণ্ডে বিব্রত তৃণমূল আ.লীগ নেতা কর্মীরা । কারণ চলতি বছরের অক্টোবরের দিকে রাজশাহী-১ (তানোর, গোদাগাড়ী) আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়ে সেই এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ ও গণসংযোগ শুরু করেন মাহি।
কিন্তু হঠাৎ করে গত সোমবার থেকে আবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের উপনির্বাচনে গণসংযোগ ও পথসভা শুরু করেন তিনি। এ সময় নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশা ও ভোট চেয়ে বক্তব্য দেন তিনি।তাই মাহির এমন কর্মকাণ্ডে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের গোমস্তাপুর, নাচোল, ভোলাহাট উপজেলায় তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভালোভাবে নেননি।
হঠাৎ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপনির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে সক্রিয় হওয়ায় তা ভালোভাবে দেখছেন না তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।তাদের দাবি, আসন্ন ১ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকেই দেওয়া হোক নৌকার মনোনয়ন।
নাচোল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের বলেন, রাজনীতি করার একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়া রয়েছে। তা অনুসরণ করে মাহিয়া মাহি আওয়ামী লীগে আসার পর এসব কর্মকাণ্ড করলে তা মানানসই ছিল। যেসব ব্যক্তি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় তাদের নৌকার মনোনয়ন দিলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করব।
হঠাৎ করেই মাহিয়া মাহির মনোনয়ন প্রত্যাশায় সক্রিয় হওয়া নিয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ন রেজা যুগান্তরকে বলেন, মাহিয়া মাহি চাঁপাইনবাবগঞ্জ আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। তার গণসংযোগে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিল না।
নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, দেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীন ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। তাই এ দলের পক্ষে যে কেউ-ই মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে আমরা আশা করি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নিশ্চয়ই রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা করেই নৌকার মনোনয়ন দেবেন।
তিনি বলেন, মাহিয়া মাহির সঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীদের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি যেমন আমাদের কাউকে চেনেন না, তেমনি আমরাও তাকে কখনো রাজনীতির মাঠে দেখিনি। নির্বাচনের এক মাস আগে হঠাৎ করেই মাঠে সক্রিয় হয়েছেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক সদস্য বলেন, রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে সেটি আওয়ামী লীগের জন্য বিপদসংকেত বয়ে আনবে বলে আমরা মনে করি। এখানে অনেকেই রয়েছেন, যারা নিজ নিজ কর্মগুণে দলে সক্রিয় অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। আশা করি, তাদের মধ্যেই কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুহা. জিয়াউর রহমান বলেন, মনোনয়ন চাওয়া নাগরিকের একটি অধিকার। যারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে তাদের যে কেউ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারে। মাহি সম্ভবত আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক কমিটিতে রয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে তিনি যদি রাজনীতে আসতে পারেন তবে আসুক না। জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে যে কেউ রাস্তায় নামতে পারে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।
এর আগে নির্বাচন নিয়ে অভিনেত্রী মাহি বলেন, আমি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে মনোনয়ন কিনব।
তিনি আরো বলেন, আমার জন্য দোয়া করবেন। যেই স্বপ্ন নিয়ে রাজনীতিতে আমার পদার্পন আল্লাহ যেন আমার সেই স্বপ্ন পূরণ করেন। আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। নারী ও শিশুদের জন্য নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই।
গাজীপুরের ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ রাকিব সরকারকে বিয়ের পর ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় এই নায়িকা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। কিছু দিন আগে তিনি আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং রাজশাহী বিভাগের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।