আজ বুধবার থেকে নিউইয়র্কে শুরু হয়েছে জাতিসংঘ পুলিশ সামিট অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটি শেষ হবে ১ সেপ্টেম্বর। ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন। গত শনিবার রাতে আইজিপি ও রবিবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা ত্যাগ করেন। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব আবু হেনা মোস্তফা জামান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব মুহম্মাদ আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ উপ-মহাপরিদর্শক নাসিয়ান ওয়াজেদ ও সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ মাসুদ আলম নিউইয়র্কে গেছেন বলে জানা গেছে।
এই প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মো. কামরুজ্জামান জানান, আইজিপি ‘ইউনাইটেড ন্যাশনস চিফ অব পুলিশ সামিটে (ইউএনকপস)’ অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ডেলিগেশনের সদস্য হিসেবে নিউইয়র্কে গেছেন তিনি। পুলিশ প্রধানকে জেএফকে বিমানবন্দরে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, নিউইয়র্কের কর্মকর্তা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। আইজিপির সফরের খবর পেয়ে তাঁকে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানাতে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন এবং দলমত-নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিমানবন্দরে ছুটে যান।
তিনি বলেন, আইজিপি ইউএনকপসে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি, জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতবিনিময় করবেন।
জানা গেছে, শর্তের বেড়াজালে মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ভিসা পান আইজিপি। তার ভিসা পাওয়া নিয়ে নানা আলোচনা চলছিল দেশ-বিদেশে। আদৌ ভিসা পাবেন নাকি পাবেন না তা নিয়ে সন্দিহান ছিল অনেকেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন, আইজিপি জাতিসংঘ পুলিশ সামিটে যোগ দেবেন। গত বৃহস্পতিবার সেই সুখবরটি পেয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, মার্কিন দূতাবাস থেকে জানানো হয়, জাতিসংঘের পুলিশ সামিটে অংশ নিতে যারা আবেদন করেছেন তাদের ভিসা প্রদান করা হয়েছে। তবে আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা থাকায় কিছু শর্ত থাকবে।
নাম প্রকাশ করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত ডিআইজি পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আইজিপির ভিসা পাওয়া যাবে কি যাবে না তা নিয়ে আমরা সন্দিহান ছিলাম। তিনি যাতে ভিসা পান সেই জন্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের হাইকমান্ড চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। একটি মহল চেয়েছিল আইজিপি যাতে যুক্তরাষ্ট্র যেতে না পারেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানোর পেছনেও এই সফর নিশ্চিত করার বিষয়টি কাজ করেছে। কিছুদিন আগে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি মিশেল জে সিসেসের সঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের বৈঠকেও আইজিপির সফর নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তারা সফরটি ইতিবাচক হিসাবে দেখেছেন।
তিনি বলেন, ভিসা দেওয়ার সঙ্গে বেশ কিছু শর্ত দেয়া হয়েছে। আইজিপি অনুষ্ঠানস্থল ছাড়া কোথাও যেতে পারবেন না। নিউইয়র্ক সিটিতে তার কর্মকাণ্ড সীমিত রাখতে হবে। সামাজিক, রাষ্ট্রীয় বা সরকারি-বেসরকারি কোন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন না। শর্ত ভঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে তার ভিসা বাতিল হবে বলেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলে দ্রুত সময়ে তিনি দেশে চলে আসতে হবে। তবে আইজিপির সঙ্গে যারা যাবেন তাদের বিষয়ে কোন শর্ত দেয়া হয়নি।
র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ)। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছেন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ, বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খান ও র্যাব-৭-এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ।