#নিজেকে রাশিয়ার পরাক্রমশালী সম্রাট পিটার দ্য গ্রেট এর সঙ্গে তুলনা করেছেন বর্তমান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। প্রেসিডেন্ট পুতিন তার বর্তমান কর্মকাণ্ডকে পিটার দ্য গ্রেটের সুইডেনের বিরুদ্ধে ১৮ শতকের যুদ্ধের সময় বাল্টিক উপকূল জয়ের সাথে তুলনা করেছেন।
বৃহস্পতিবার রুশ সম্রাট পিটার দ্য গ্রেটের ৩৫০ বছরের জন্মদিন উদযাপিত হয়েছে রাশিয়ায়। রাশিয়ার এই বিখ্যাত সম্রাট একসময় বিপুল পরিমাণ অঞ্চল দখল করেছিলেন। সে সময় সুইডেনের সঙ্গে যুদ্ধ করেন তিনি।
পিটারের গুণগান করতে গিয়ে এক সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, তিনিও পিটারের মতোই দেশের জমি পুনর্দখলের কাজে নেমেছেন। পিটার দ্য গ্রেট পরবর্তীকালে নিজের নাম সেন্ট পিটার্সবার্গ রাখেন। তার নামেই নামকরণ হয়েছে পুতিনের জন্মস্থান সেন্টপিটার্সবার্গের।
বৃহস্পতিবার রাশিয়ার তরুণ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ভ্লাদিমির পুতিন এই মন্তব্য করেন। রাশিয়ার সাবেক জার সম্রাট পিটার দ্য গ্রেট’র ৩৫০তম জন্মবার্ষিকীকে উৎসর্গ করে বৃহস্পতিবার রাজধানী মস্কোতে আয়োজিত একটি প্রদর্শনীর অনুষ্ঠান পরিদর্শন করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পরে সেখানে তরুণ উদ্যোক্তাদের তিনি বলেন, ‘সুইডেনের সঙ্গে যুদ্ধ করে তিনি (পিটার দ্য গ্রেট) কিছু দখল করেছিলেন। তিনি কারও কাছ থেকে কিছু দখল করেননি। তিনি ফিরিয়ে এনেছিলেন’।
প্রেসিডেন্ট পুতিন আরও বলেন, ‘পিটার দ্য গ্রেট যখন সেন্ট পিটার্সবার্গ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং এটিকে রাশিয়ার রাজধানী ঘোষণা করেছিলেন তখন ইউরোপের কোনো দেশই এই অঞ্চলটিকে রাশিয়ার অন্তর্গত বলে স্বীকৃতি দেয়নি। সবাই এটিকে সুইডেনের অংশ বলে মনে করত। কিন্তু অনাদিকাল থেকে ফিনো-ইউগ্রিক জনগণের পাশাপাশি স্লাভরা এখানে বসবাস করত’।
এই পর্যায়ে ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান আক্রমণের স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে পুতিন বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব (আমাদের যা আছে, তা) ফিরিয়ে নেওয়া এবং শক্তিশালী করা। হ্যাঁ, আমাদের দেশের ইতিহাসে এমন সময় এসেছে যখন আমরা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছি, কিন্তু সেটি শুধুমাত্র আমাদের শক্তি ফিরে পেতে এবং আরও এগিয়ে যাওয়ার জন্য’।
পুতিনের এই বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে সরব হয়েছে ইউক্রেন। তাদের বক্তব্য, এ কথা বলে পুতিন তার দখল করা অঞ্চলকে বৈধতা দিতে চাইছেন। কিন্তু বিশ্ব কূটনীতি তা মানতে পারে না। কূটনীতিকদের ঠিক করে নিতে হবে, কোথায় তারা সীমান্ত চিহ্নিত করবেন। রাশিয়ার দাবি এভাবে মুখ বুজে মেনে নেওয়া ঠিক হবে না।
প্রসঙ্গত, ১৭০০ সাল থেকে ১৭২১ পর্যন্ত হওয়া গ্রেট নর্দার্ন যুদ্ধে মস্কোর কাছে সুইডেনের পরাজয় রাশিয়াকে বাল্টিক সাগর অঞ্চলে নেতৃস্থানীয় শক্তিতে পরিণত করে। এতে করে ইউরোপীয় বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ তথা শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় রাশিয়া।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন আক্রমণের ফলে পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক কার্যত ভেঙে গেছে এবং এর পাশাপাশি ইউরোপের প্রতি পিটারের যে সখ্যতা ছিল সেটিকেও কার্যত খাটো করে দেখছে মস্কো কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে রাশিয়া বর্তমানে এই অঞ্চলে তার ভূখণ্ড সম্প্রসারণের দিকে মনোনিবেশ করেছে।
রাশিয়ানরা বৃহস্পতিবার জার পিটার দ্য গ্রেটের ৩৫০ তম জন্মদিন উদযাপন এমন এক সময় করেছে যখন ইউক্রেন সংঘাতের কারণে দেশটি বাকি বিশ্ব থেকে গভীরভাবে বিচ্ছিন্ন। মূলত তিন শতাব্দী আগেই রাশিয়াকে ইউরোপের কাছাকাছি আনার চেষ্টা প্রথম করেছিলেন জার পিটার।
১৬৭২ সালের ৯ জুন মস্কোতে জন্মগ্রহণ করেন পিটার দ্য গ্রেট। ক্ষমতায় আসার পর তিনি প্রথমে জার এবং তারপর ১৬৮২ সাল থেকে ১৭২৫ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত সম্রাট হিসাবে সমগ্র রাশিয়া শাসন করেছিলেন।
ওদিকে, গত কয়েকসপ্তাহ ধরে ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর সিভিয়েরোদোনেৎস্কে প্রবল লড়াই চলছে। রাশিয়া দাবি করেছিল, ওই অঞ্চল তারা দখল করে নিয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবারও ইউক্রেনের সেনারা দাবি করেছে, সেখানে ইউক্রেনের সেনারা তীব্র লড়াই চালাচ্ছে। শহরটি এখনো রাশিয়ার দখলে চলে যায়নি। বস্তুত, ডনবাসের একটি বড় অংশ এখন রাশিয়ার দখলে। তবে, সিভিয়েরোদোনেৎস্ক শহরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।