চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে বিএম কনটেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষ। এছাড়া দুর্ঘটনার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
রোববার সন্ধ্যায় প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক মেজর (অব) শামসুল হায়দার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে নগদ সহায়তা প্রদান করা হবে। এছাড়া যারা গুরুতর আহত হয়েছেন কিংবা অঙ্গহানির শিকার হয়েছেন তাদেরকে ৬ লাখ টাকা করে এবং আহতদের ৪ লাখ টাকা করে প্রদান হবে।
বিএম কনটেইনার মালিক পক্ষ আরও জানান, এই মর্মান্তিক অগ্নিদুর্ঘটনায় মারা যাওয়া প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মচারীর পরিবারে শিশু থাকলে প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তার পরিবারকে বেতনের সমপরিমাণ টাকা কর্তৃপক্ষ প্রদান করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এছাড়া উপার্জনক্ষম সদস্য থাকলে চাকরির ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে সীতাকুণ্ডে সোনাইছড়ী ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে শনিবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৯জন ফায়ার সার্ভিসকর্মী।
রোববার বিকালে ফায়ার সার্ভিসের গণমাধ্যম শাখা থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ফায়ার সার্ভিসের গুরুতর দুই কর্মীকে চট্টগ্রাম থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আনা হচ্ছে। এ ছাড়াও গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও অন্তত ১৫ জন।
তাদের মধ্যে কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মী গাউসুল আজম ও সীতাকুণ্ডু স্টেশনের রবিউলকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনা হয়েছে। গাউসুলের শরীরের ৮০ শতাংশ এবং রবিউলের ৫০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার ২৩ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সেই আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে দমকল বাহিনী কর্মীদের।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত আগুন নেভাতে চেষ্টা করছে ২৬টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের টিম। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী থেকে অফিসাররা যোগ দিয়েছেন। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর ২৫০ জন সদস্য সেখানে উদ্ধার অভিযানে কাজ করছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, কনটেইনার ডিপোটিতে বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক ‘হাইড্রোজেন পার অক্সাইড’ ছিল। হাইড্রোজেন পার অক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
সূত্রে জানা যায়, কেমিক্যাল কনটেইনার থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগুন লাগার পর পর কন্টেইনারগুলো একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে কন্টেইনার ডিপোর আশে পাশের ৪-৫ কিলোমিটার এলাকায় ব্যাপক কম্পনের সৃষ্টি হয়। প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় শতাধিক বিভিন্ন বাড়ি-ঘর ও মসজিদের দরজা এ জানালার কাঁচ ভেঙে যায়। এ ঘটনায় জনমনে আতংকের সৃষ্টি হয়।
বিস্ফোরণে পুরো এলাকায় রাসায়নিকের বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে। এতে উদ্ধারকর্মীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের নিরাপদে নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের আরও ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। তবে ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।