নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(নোবিপ্রবি) এর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার উল আলমকে নিয়ে জাতীয় দৈনিকে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
২০ এপ্রিল (বুধবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের বিবৃতিতে এ বিষয়ে জানানো হয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশিত হলে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, উপাচার্য অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার উল আলমকে নিয়ে একটি দুষ্টচক্র প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, কল্পনাপ্রসূত, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিছু সংবাদ পরিবেশন করছে। তথাকথিত এসব প্রতিবেদনের শিরোনামের সাথে বিষয়বস্তুর কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। মূলত একটি স্বার্থান্বেষী মহল উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার জন্য এ ধরনের বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করছে। যা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০১৯ সালের জুনে। যোগদানের পর থেকে সততা এবং নিষ্ঠার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
উপাচার্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে এ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছেন। যার ফলে ইতিমধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত স্পেনের সিমাগো ইনস্টিটিউট র্যাংকিং-২০২২ এর তালিকায় দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ২য় স্থান অর্জন করেছে নোবিপ্রবি।
দীর্ঘ তিন বছর শিক্ষামন্ত্রনালয়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে নিয়োগ বন্ধ থাকার পর এ বছর ১৫৪ টি পদের বিপরীতে মাত্র ৫৪ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।এ নিয়োগের বিষয়ে জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে বিবৃতিতে বলা হয়।নিয়োগের বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়,সচ্ছতার ভিত্তিতে, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যারা শিক্ষাজীবনে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অর্জন করেছে শুধু তাদেরই নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। এ নিয়োগ নিয়ে নোবিপ্রবির সকল শিক্ষক-কর্মকর্তা এ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এখানে মনগড়া ও ভিত্তিহীন অভিযোগের কোনো সুযোগ নেই। নতুন এ নিয়োগের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম আরও বেগবান হবে।নতুন নিয়োগ নিয়ে শিক্ষকদের অসন্তোষের বিষয়টিও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বিবৃতিতে বলা হয়।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম নোবিপ্রবিতে নিয়োগের পর থেকে সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে অবস্থান করে থাকেন। তিনি প্রতিনিয়ত অফিস করেন। অফিস সময়ের বাইরেও তিনি দাপ্তরিক কাজ সুচারুরুপে সম্পন্ন করার স্বার্থে অতিরিক্ত সময় অফিস করেন।এছাড়াও কোভিডকালীন সময়ে উপাচার্য সশরীরে অফিস করেছেন, যা অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।উপাচার্য দাপ্তরিক জরুরি কাজে, বিভিন্ন সভায় ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সচিবালয়ে ইত্যাদি স্থানে গমন করেন। এছাড়া মাসের বাকি দিনগুলোতে তিনি ক্যাম্পাসেই অবস্থান করেন এবং নিয়মিত অফিস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের স্বার্থে প্রতিনিয়ত তিনি শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়াও উপাচার্য নোবিপ্রবিতে নিয়োগের পর থেকে এক টাকাও বাড়িভাড়া ভাতা বাবদ গ্রহণ করেননি।ডেপুটেশন পরবর্তী ২০১৯-২০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত নিয়মে অবিনিমেয় চেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে ৬০ হাজার টাকা ভাড়া পরিশোধ করা হয়। ২০২০ সালের জুন মাসে অবসর গ্রহণের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ করার ফলে নোবিপ্রবির অর্থ সাশ্রয়ের জন্য পূর্বের বাজেটের মধ্যে বাড়িভাড়া করা হয় এবং ২০২০-২১ পর্যন্ত ভাড়া বাড়ির মালিক বরাবর অবিনিমেয় চেকে পরিশোধ করা হয়। বর্তমানে ঢাকায় ভাড়া নেওয়া বাসাটি উপাচার্য ছেড়ে দিয়েছেন। একই বেতনে দুই জায়গায় বাড়িভাড়া পরিশোধ সম্ভব নয় বিধায় উপাচার্য শুরু থেকে নোবিপ্রবি বাংলোতে অবস্থান না করে অতিথি ভবনে অবস্থান করছেন।
নোবিপ্রবিতে ২০২০ সালে কোভিড-১৯ পরীক্ষা ল্যাব চালু হওয়ার পর ল্যাব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অতিথি ভবনে অবস্থান করার প্রেক্ষিতে উপাচার্য তার বয়স ও শারীরিক অবস্থার প্রেক্ষিতে বাংলোর একটি রুমে অবস্থান করেছিলেন। দায়িত্ব পালন অবস্থায় ২০২১ সালের মার্চ মাসে কোভিড পজিটিভ হয়ে দুই মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪তম একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে রিজেন্ট বোর্ডের একজন সদস্য মনোনয়নের জন্য উপাচার্যকে ক্ষমতা অর্পণ করা হয়।এ প্রেক্ষিতে উপাচার্য রিজেন্ট বোর্ডে একজন সদস্য নিয়োগ প্রদান করেন। এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।এ নিয়োগ নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য ৯ জন শিক্ষক লিখিত আপত্তি জানিয়েছেন মর্মে যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ বানোয়াট। এ সংক্রান্ত অফিসিয়াল কোনো চিঠি কর্তৃপক্ষের হাতে আসেনি।
হাইকোর্টের আদেশ অনুসারে বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুবোধ কুমার সরকারকে চেয়ারম্যান পদে পূনর্বহাল করা হয় এবং বর্তমানে তিনি উক্ত বিভাগের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন।প্রতিবেদনে ‘হাইকোর্টের আদেশ-নির্দেশনাও উপেক্ষা’ উল্লেখ করে যে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বিশ্বাবিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুন, আইন অনুসরণ করে ব্যবসা প্রশাসন অনুষদে ডিন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শুধু ব্যবসা প্রশাসন নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন নিয়োগই আইন অনুযায়ী হয়ে থাকে।‘ব্যবসা প্রশাসন অনুষদে ডিন নিয়োগে আইন লঙ্ঘনের’ যে বিষয়টি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক ভৌত ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। শিক্ষক-কর্মকর্তা ডরমেটরি, প্রভোস্ট কোয়ার্টার, কর্মচারী ডরমেটরি, নোবিপ্রবি কেন্দ্রীয় মসজিদ, নোবিপ্রবি মেডিকেল সেন্টার, সার্জেন্ট রুমি বিএনসিসি ভবন নির্মাণ শেষে উদ্বোধন করেন উপাচার্য। এছাড়াও দশতলা তৃতীয় একাডেমিক ভবনসহ (নির্মাণ কাজ চলমান) একাধিক স্থাপনা নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।অবকাঠামো উন্নয়নে স্থবিরতার যে বিষয়টি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তা কাল্পনিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে ‘অডিট রিপোর্টে নানা অনিয়ম’ শীর্ষক যে বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে তা সঠিক নয়। পূর্বের বিভিন্ন অডিট আপত্তি ছিল, যা বর্তমান উপাচার্য নিষ্পত্তির চেষ্টা করছেন।এছাড়াও স্বাভাবিক নিয়মে, স্বচ্ছতার ভিত্তিতে, সময় অনুযায়ী ও প্রাপ্যতা অনুসারে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেড পরিবর্তিত হয়ে থাকে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ইউজিসির নির্দেশনা অনুসরণ করে সকল আপগ্রেডেশন স্বাভাবিক নিয়মে সম্পন্ন হয়ে থাকে। এছাড়াও সকল আইন অনুসরণ করে ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কর্মচারীদের ঝুঁকি ভাতা, দায়িত্ব ভাতা, ড্রাইভারদের মোবাইল ভাতা, ইনক্রিমেন্ট, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল, গেস্ট হাউজ ভাড়া নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে সরকারি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সকল আইন সঠিকভাবে ও যথা নিয়মে অনুসরণ করে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
করোনা মহামারিতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে যা উপাচার্যের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শিক্ষকদের দক্ষতা ও আন্তরিক সহযোগিতায় সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও কোভিড ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে করোনাকালীন সময়ে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে নোবিপ্রবি। করোনা টেস্টে শতভাগ সাফল্যের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় নোয়াখালীসহ সারাদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত জার্নালসমূহে নোবিপ্রবি শিক্ষকদের আবিষ্কার ও মূল্যবান গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে, যা দেশের শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রকে আরও সমৃদ্ধ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির প্রতিবেদনেও নোবিপ্রবি দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালসমূহের সাথে র্যাংকিং-এ অনেক এগিয়ে গেছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বিভ্রান্তিকর ও বিকৃত সংবাদ মধ্যে যেন আর পরিবেশন করা না হয় সেই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমরা সকলে বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজ তথা দেশের প্রতি নিজেদের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০৪১ অর্জন করা সম্ভব।ভবিষ্যতে এ ধরনের ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশিত হলে আইনগত পদক্ষেত নিতে বাধ্য হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।