জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও জোট। এ সময় সাড়ে ১২ হাজার টাকার বদলে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৩ থেকে ২৫ হাজার টাকা করা এবং আন্দোলনে তিন শ্রমিক নিহত হওয়ার দাবি করে বিচার চেয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সকালে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও জোটের নেতাদের বিক্ষোভ মিছিলটি তোপখানা সড়কের কদম ফোয়ারা অংশ থেকে পুরানা পল্টন মোড় ঘুরে যায়। বেলা পৌনে ১১টার দিকে পল্টন মোড়ের দিক থেকে প্রথমে মিছিল নিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে আসে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট। পরে সংগঠনটি প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করে।
সমাবেশে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের নেতারা বলেন, শ্রমিকেরা ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা প্রত্যাখ্যান করেছেন। অবিলম্বে সর্বনিম্ন মজুরি ২৩ হাজার টাকা ঘোষণা করার দাবি জানানো হয়। এতে শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি খালেকুজ্জামান লিপন ও সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বেলা ১১টার দিকে পুরানা পল্টন থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আসে বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন নামের একটি সংগঠন। তারাও ১২ হাজার ৫০০ টাকার ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে। এ সমাবেশে সংগঠনের নেতা তোফাজ্জল হোসেনের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াসিন ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত।
অন্যদিকে শ্রমিক ফেডারেশনের দাবি শ্রমিকদের মজুরি ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে। প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশে শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা বলেন, শ্রমিকেরা ন্যায্যভাবে যখন মজুরির জন্য আন্দোলন করছেন, তখন সরকার মালিকদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের ওপর গুলি চালাচ্ছে।
ফেডারেশনের নেতারা আন্দোলনে নিহত তিন শ্রমিকের কথা উল্লেখ করে বিচার চান। নিহত তিনজন হলেন—শ্রমিক আঞ্জুয়ারা, রাসেল ও ইমরান। শ্রমিক নেতারা বলেন, ‘গত ২২ অক্টোরব মজুরি বোর্ডে মালিকদের ১০ হাজার ৪০০ টাকার প্রস্তাব ছিল শ্রমিকদের প্রত্যাশার সঙ্গে তামাশা।’
সমাবেশে শ্রমিক নেত্রী তাসলিমা আকতার বলেন, ‘আমরা ঘোষিত মজুরি প্রত্যাখান করছি। আজ পেঁয়াজ, আলু, চাল ডালসহ প্রত্যেক পণ্যের মূল্যে এতটা বেড়েছে, শ্রমিকরা বেঁচে থাকতে পারছে না। এ জন্য আমরা সরকারের কাছে মজুরি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু সরকার এর ধারে-কাছে না গিয়ে মালিকদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে শ্রমিক হত্যা করছে।’
সমাবেশে শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের পরিশ্রমের ওপর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এগিয়ে যাচ্ছে। সেই শ্রমিকদেরই ন্যায্য দাবি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সারাদেশের পোশাক শ্রমিকেরা এ অবিচার মেনে নেবে না।
উল্লেখ্য, গত ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় মজুরি বাড়ানোর দাবিতে পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করে আসছেন। এরপর নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করে সরকার। এতে সন্তুষ্ট না হয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা। এখন পর্যন্ত ভাঙচুর ও সহিংসতার অভিযোগে এ পর্যন্ত র্যাব ২৭ জনকে আটক করেছে। আন্দোলন চলাকালে শ্রমিক পুলিশ সংঘর্ষে এ পর্যন্ত মারা গেছেন তিন জন শ্রমিক।