ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কে দোরাইস্বামী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার “কঠিন” কিন্তু “সাহসী” সিদ্ধান্তের ফলে দীর্ঘতম সেতু নির্মাণে বাংলাদেশের কৃতিত্বের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, পদ্মা সেতু একই সাথে ঐতিহ্যবাহী বাংলার সংস্কৃতির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।
তিনি বলেন, “আমরা সবাই বাঙালি সংস্কৃতির বিষয়ে এ কথা জানি ‘এইপাড় ও ওই পাড়’ (নদীর দুই পাড়), তাই পদ্মা বাংলা ভূমির দুটি ‘পাড়’ (দুই পাড়) থাকার অর্থই প্রকাশ করে।
দোরাইস্বামী বলেন, একটি বড় প্রকল্প হওয়া সত্ত্বেও, পদ্মা সেতু শুধুমাত্র ইট ও স্টিলের নিরিখে একটি বিশাল কাঠামো নয় বরং এটি হচ্ছে প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপারের মানুষের সংস্কৃতি ও আবেগের প্রতীকী সংযোগকারী।
তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতীয় হাইকমিশনে সাংবাদিকদের বলেন,“সেতুটি ব্যবসার চেয়েও অনেক কিছুর সংযোগকারী; এটি মানুষের সংযোগকারী, এটি আবেগের সংযোগকারী এবং এটি বাংলার সংস্কৃতির সংযোগকারী।”
সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের চার দিন আগে ভারতীয় হাইকমিশনার এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এটি ভারতের বাঙালিদের জন্যও একটি ‘শুভক্ষণ’।
তিনি বলেন, “অভিনন্দন বাংলাদেশ! আমি এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রত্যেক বন্ধুকে অভিনন্দন জানাই।”
হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশের পক্ষে নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করা কঠিন কাজ ছিল এবং এটি শেখ হাসিনার ‘অব্যাহত ও দৃঢ় সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমি বিশেষভাবে বলতে চাই, ভারতীয় হিসেবে আমরা ভালভাবে অনুভব করি যে, এটি ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) ‘অব্যাহত ও দৃঢ় সাহসী সিদ্ধান্ত।”
দোরাইস্বামী বলেন, পদ্মা সেতু শুধু দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিকেই নয়, বরং উপ-অঞ্চল এবং স্পষ্টতই ভারতকেও সংযুক্ত করবে।
তিনি বলেন, “সেই দৃষ্টিকোণ থেকে, দীর্ঘকাল ধরে উপ-অঞ্চল জুড়ে সংযোগ বাড়ানোর সুযোগের অপেক্ষায় থাকা দেশ হিসাবে ভারতে আমরা আনন্দিত।”
হাইকমিশনার বলেন, যখন বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালের প্রথম দিকে বিদেশী ঋণ নিয়ে এই কাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল, তখন “আমরা (ভারত) ছিলাম প্রথম দেশ, আমরা যেভাবে সম্ভব এই প্রকল্পের সহায়তা দেয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম।
কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যখন নিজস্ব (অভ্যন্তরীণ) অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন তখন ভারত আবারও ‘তাঁর সিদ্ধান্তের প্রতি জোরালো সমর্থন জানায় এবং আমরা সরবে এবং প্রকাশ্যে আমাদের সমর্থন জানাই।’
হাইকমিশনার বলেন, শেখ হাসিনার এই প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণিত হয়েছে এবং নয়াদিল্লি এই বড় অগ্রগতির ফলস্বরূপ ‘সংযোগ, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং সহজ ভ্রমণের’ সুবিধার প্রত্যক্ষ করার জন্য উন্মুখ হয়ে রয়েছে।
দোরাইস্বামী বলেন, শুধু বাংলাদেশ ও ভারত নয়, বিশেষ করে নেপালও পদ্মা সেতুর কারণে বাংলাদেশে দ্রুত ঢুকতে পারবে এবং “আমি মনে করি এটি দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।”
সেতুটি বাংলাদেশে আরও ভারতীয় বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে কিনা জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘শত ভাগ’ এবং এর ব্যাখ্যায় বলেন, স্পষ্টতই যোগাযোগ সহজ ও সুলভ হলে ‘বাংলাদেশে আরও ব্যবসা বৃদ্ধি করা সহজ হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বিদেশী ঋণ বা যেকোনো ধরনের অনুদান বাতিল করে অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসাবে প্রদান করেছে।বাসস