যারা পরিবেশ ও প্রকৃতি বিনষ্ট করছে তাদের দেশ-জাতির শত্রু বলে অভিহিত করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
হাছান মাহমুদ বলেন, প্রকৃতির ওপর যে অত্যাচার আমরা করছি, এরপরও কিন্তু পরিবেশ আমাদের প্রতি বিরূপ হয়নি। শিল্পপতিসহ যারা শিল্প উৎপাদনের জন্য পরিবেশ ও প্রকৃতি মাথায় না রেখে নদীকে গলা টিপে মারছে, তারা দেশ-জাতি এবং মানুষের শত্রু। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
শুক্রবার (২২ এপ্রিল) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বিশ্ব ধরিত্রী দিবস ২০২২’ উপলক্ষে ‘পৃথিবীকে রক্ষা করতে বাস্তুসংস্থানসমূহ নিরাপদ করি’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য রাখেন তিনি। আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটি এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এই পৃথিবীর মালিক কিন্তু শুধু আমরা নই, ছোট্ট পিঁপড়া থেকে শুরু করে অন্য প্রাণীরাও এর মালিক। পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ আমাদের প্রয়োজনে আমরা ব্যবহার করছি। কিন্তু ভবিষ্যতের প্রয়োজন নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। একসময় ডাইনোসর পৃথিবী দাপিয়ে বেড়িয়েছে। সেই ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আজকে পৃথিবী উষ্ণ হচ্ছে। এই যে তাপমাত্রা বাড়ছে এটা আমাদের কারণে বাড়ছে। শুধু তাপমাত্রা নয়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, বরফ গলছে, আরো অনেক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। এগুলো পৃথিবীর উষ্ণায়নের কারণে ঘটছে। পরিবেশ রক্ষায় দেশের মানুষ সচেতন নয়। ঢাকা শহরে দুই কোটি মানুষ বাস করে। সবাই মনে করে, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব শুধু ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের। এইভাবে তো একটা শহর কোনোভাবে বসবাস উপযোগী রাখা সম্ভব না।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি নিজে কখনো পলিথিন ব্যবহার করি না। পলিথিন বন্ধে একটা আইন আছে, কিন্তু এখন সবকিছুতে পলিথিন দেওয়া হয়। মানুষ যদি পলিথিন না নিতো তাহলে পলিথিন আসতো না। মানুষকে সচেতন করতে হবে। না হলে কোনো কিছুই রক্ষা পাবে না। পরিবেশ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই স্পিড সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব।
গণমাধ্যমে ধরিত্রী দিবসের প্রতিবেদন না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ধরিত্রী দিবস নিয়ে দু’একটি ছাড়া কোনো পত্র-পত্রিকা, এমনকি টেলিভিশনেও কোনো প্রতিবেদন দেখলাম না। তাতে আমি হতাশ হয়েছি। দেশের কোনো জায়গায় আগুন লাগলে এমনভাবে ফলাও করে দেখায় যেন সারা দেশ আগুনে পুড়ছে। পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হলে অন্য সংবাদের আর গুরুত্ব থাকে না।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও উপ কমিটির সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, জলবায়ু ক্ষতির প্রভাব মোকাবিলা, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য নিরাপদ এবং বাসযোগ্য আগামী নিশ্চিত করতে পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ কমিটির চোরম্যান অধ্যাপক বজলুল হক খন্দকারের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সেন্ট্রাল ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আতিক রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ উপাচার্য অধ্যাপক নাসরিন আহমেদ, বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সাইন্স অ্যান্ড ইন্ডস্ট্রিয়াল রিসার্সের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আফতাব আলী শেখ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।