রংপুর: রংপুরের পীরগাছার দামুর চাকলা বাজারের নিকটে ২৭ মিটার দৈঘ্য ঝুঁকিপূণ ব্রীজ দিয়ে ভারী যান চলাচল ও অপরিকল্পিত ভাবে আলাইকুঁড়ি নদী খনন করায় পানির প্রবল স্্েরাতে ভেঙে পড়েছে একটি সড়ক সেতু।
গতকাল বুধবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পানির প্রবল স্রোতে সেতুটি ভেঙে যায়। সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় রংপুর পাওটানাহাট সড়কে প্রায় লক্ষ্যা মানুষ জন দুর্ভোগে পড়েছে।
সেতুটি ভেঙে যাওয়ায়, প্রতিনিয়ত স্কুলের শিক্ষার্থী,ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ক্ষেতে খামারে কাজ করা দিন মজুর বিপাকে পড়েছে।
এই সেতুটি কবে নির্মাণ করা হবে তা জানতে চাইলে উপজেলা প্রশাসন জানান, অল্প কয়েকদিনের মধ্যে একটি বেইলী ব্রীজ নির্মান করার প্রস্তুতি চলচ্ছে।
উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, রংপুর-পাওটানা সড়কের দামুর চাকলা বাজারের পশ্চিম পাশে আলাইকুমারী নদীর উপর ১৯৮২ সালে ২৭ মিটার দৈঘ্য একটি ব্রীজ নির্মাণ করা হয়। ২০২১ সালে তিস্তা পাওয়ার প্লান্টের সরঞ্জামবাহী অসংখ্য ভারী ট্রাক ওই ব্রীজের উপর দিয়ে চলাচলের কারণে ব্রীজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। সম্প্রতি উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ওই ব্রীজটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে একই স্থানে ৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৬ মিটার একটি ব্রীজ নির্মাণের টেন্ডার আহবান করা হয়।
জানা গেছে,বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নদীর খননকাজ করছে। সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় বরেন্দ্্র কর্তৃপক্ষের কাছে কৈফিয়ত চেয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।
এদিকে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই গত রোববার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ব্রীজের উপর দিকে একটি নৈশ্য কোচ ও একটি ভারী ট্রাক যাওয়ার পর ব্রীজে ফাটল দেখা দেয়। এর ৩০ মিনিট পর একাই ব্রীজটি ভেঙ্গে নদীর মধ্যে পড়ে যায়। ফলে ওই সড়ক দিয়ে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। তবে স্থানীয় লোকজন দাবি করছেন, হটাৎ অতি বৃষ্টির কারণে অতিরিক্ত পানির ঢলে নিচের মাটি সরে গিয়ে ব্রীজ ভেঙ্গে গেছে। ফলে চলাচলকারী লোকজন প্রায় ৩ কিলোমিটার ঘুরে সুন্দর বাজার থেকে চোত্তাপাড়া মধুরাম হয়ে দামুর চাকলা পর্যন্ত চলাছল করছে।
পীরগাছা উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বলেন,উপজেলার সিমান্ত এলাকায় কিছু দিনে আগে পাওয়ার প্লান্টের স্থাপন করা হয়েছে। এই পাওয়ার প্লান্টের স্থাপনের জন্য বিভিন্ন মালামাল নিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে ও বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নদী খনন করার ফলে এবং কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টির পানির স্রোতে ব্রীজটি ভেঙ্গে পড়েছে। তবে ওই স্থানে নতুন ব্রীজের জন্য টেন্ডারও হয়েছে। এখনোও ঠিকাদার নির্ধারন হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব ঠিকাদার নির্ধারন করে কাজ শুরু হবে।
সেতু এলাকার বাসিন্দা মিঠু মিয়া, ফারুক ও আজাদুল জানান, সেতুটি ভেঙে পড়ায় ইটাকুমারী, অন্নদানগর,টেপামধুপুর ভাইয়ের হাট ছাওলা, তাম্বুলপুর ও পারুল ইউনিয়নের অন্তত আড়াই লাখ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। উপজেলা সদর ও কাউনিয়াসহ পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর,রাজার হাট,গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় যাতায়াত করার একমাত্র সেতু এটি। সেতুটি ভেঙে পড়ায় সবাই ভোগান্তিতে পড়েছেন।
এদিকে,পাওটানা হাট থেকে আশা ভুট্টা ব্যবসায়ী আতাউর রহমান জানান, সেতটিু ভাঙায় ৩ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে। অনেকে কলাগাছের ভেলা দিয়ে কষ্ট করে যাতায়াত করছেন। এখনও এটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
গত সোমবার পীরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ মাহবুবার রহমান,উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হক সুমন, ভাইস চেয়ারম্যান আরিফুল হক লিটন, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান, উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাশার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সকালে প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও এখনো যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন ওই স্থানে দ্রুত বেইলী ব্রীজ নির্মানের দাবি স্থানীয় লোকজনদের।
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কবে নাগাদ সেতুটি মেরামত করা হবে তা নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। জরুরি ভিত্তিতে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
উপজেলা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারি প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ব্রীজের নিচ থেকে মাটি কাটা হয়নি। পানির ঢলের কারণে এমন অনাকাংখিত ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ইআইআরপি প্রকল্পের মাধ্যমে আলাইকুঁড়ি নদীর খননকাজ করছে। নদীর পানি ধরে রাখতে বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে বাঁধ। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে উজানে পানির চাপ বাড়ায় সবগুলো বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাবে ভেঙে গেছে সেতুটি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের পীরগাছার এক কর্মকর্তা জানান, রংপুর-পাওটানাহাট সড়কে স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৩ সালে সেতুটির ওপরের অংশ সংস্কার করা হয়। এরপর কোনও ধরনের সংস্কার করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক হাবিবুর রহমান খান বলেন, ব্রীজটি আগে থেকেই ঝুকিপূর্ণ ছিল। টেন্ডারও হয়েছে। এই ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় ভারী যানবাহন চলাচল এবং কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টির কারণে ভেঙ্গে গেছে।
এ বিষয়ে পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হক সুমন বলেন, সেতুটি ভেঙ্গে য়াওয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসক কে জানিয়েছি। এবং এই এলাকার মানুষের চলাচলের জন্য একটি বেইলী ব্রীজ এর আবেদন করেছি। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে বেইলী ব্রীজটি নির্মাণ করা হবে।