ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকলো পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ঐতিহাসিক জয়ের ইতিহাস তৈরি করলো বাংলাদেশ।
শুধু জয় বললে ভুল হবে। এই ম্যাচে তাদেরই মাটিতে পাকিস্তানকে রীতিমতো বিধ্বস্ত করে ছেড়েছে টাইগাররা। জয়ের জন্য মাত্র ৩০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১০ উইকেটের বিশাল জয়টি পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম। এ জয়ে ২৪ বছরের অপেক্ষা ঘুচলো বাংলাদেশের।
এই ম্যাচে একটি দুর্দান্ত রেকর্ডও করেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানকে মাত্র ১৪৬ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ। টাইগারদের বিপক্ষে টেস্টে এটিই পাকিস্তানের সর্বনিম্ম স্কোর। এর আগে ২০০৩ সালে মুলতানে টাইগারদের কাছে ১৭৫ রানে অলআউট হয়েছিল পাকিস্তান।
৩০ রানের লক্ষ্য তাড়ায় স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে থাকেন দুই টাইগার ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম। সাদমানের ৯ আর জাকিরের ১৫ রানের সুবাদে জয় অর্জিত হয় বাংলাদেশের।
আগা সালমানকে সুইপ করে চার জাকির হাসানের। তাতেই জয় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের। রাওয়ালপিন্ডিতে স্বাগতিক পাকিস্তানকে বাংলাদেশ হারাল ১০ উইকেটে। টেস্টে বাংলাদেশের এটিই প্রথম ১০ উইকেটে জয়।
এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩ টেস্ট খেলে বাংলাদেশের প্রাপ্তি ছিল ২০১৫ সালে খুলনা টেস্ট ড্র। ১৪তম টেস্টে এসে বাংলাদেশ পেল ঐতিহাসিক জয়। পাকিস্তান নবম প্রতিপক্ষ, যাদের টেস্টে হারাল বাংলাদেশ। বাকি থাকল শুধু ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশের বাইরে বাংলাদেশের এটি মাত্র সপ্তম জয়, সব মিলিয়ে ২০তম।
৬ উইকেটে ৪৪৮ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান, সেটি ছিল টেস্টের দ্বিতীয় দিন। শেষ বেলায় ১২ ওভার ব্যাটিংয়ের চ্যালেঞ্জ দারুণভাবে সামলেছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার জাকির ও সাদমান। এরপর থেকে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে দেখা গেছে বাংলাদেশ দলের দাপট—ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েও। সাদমানের লড়াকু ৯৩ রানের পর মুশফিকের ১৯১ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে বাংলাদেশ পায় ৫৬৫ রানের বড় সংগ্রহ। এরপর সাকিব ও মিরাজের ঘূর্ণিতে বিপাকে পড়ে পাকিস্তান, দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ১৪৬ রানেই। তাতে বাংলাদেশে সামনে আসে ৩০ রানের লক্ষ্যের আনুষ্ঠানিকতা। যেটি বাংলাদেশ পেরিয়ে গেল কোনো উইকেট না হারিয়েই। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে প্রথম জয় এলো বাংলাদেশের। সেটিই কী অবিশ্বাস্য! কী দারুণ রেকর্ড গড়ে!
১৯১ রানের ইনিংসে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন মুশফিকুর রহিম। আর মিরাজ জিতেছেন ম্যাচের সেরা বোলারের পুরস্কার।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মুশফিক দেন ম্যাচসেরার প্রাইজমানি বন্যার্তদের দেওয়ার ঘোষণা, ‘আপনারা জানেন যে বাংলাদেশে বন্যা চলছে। আমি এই পুরস্কারের অর্থ দিতে চাই দেশের বন্যা দুর্গতদের জন্য। আমি দেশে থাকা সব মানুষকে অনুরোধ করতে চাই, তারা যেন আর্থিক সহায়তা ও অন্যান্য কাজে সাহায্য করেন।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৪৪৮/৬ (ডিক্লে)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫৬৫
পাকিস্তান ২য় ইনিংস: ১৪৬ (লিড ২৯)
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩০) ৬.৩ ওভারে ৩০/০ (জাকির ১৫ *, সাদমান ৯ *)
ফল: বাংলাদেশ ১০ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: দুই ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে।