পাট শাক বা নালিয়া শাকের এত গুণ। পাট শাক (Jute Leaves) সকলের পরিচিত একটি খাদ্য যে শাকের মধ্যে অনেক প্রকার খাদ্য উপাদান রয়েছে। পাট শাককে গ্রামীণ ভাষায় নালিয়া শাক বলা হয়। এই শাক গ্রামাঞ্চলে বেশী পরিমাণে দেখা যায়।
পাট শাক সাধারণত বর্ষাকালে চাষ করা হয়। পাট শাক বাংলা বৈশাখ মাসের প্রথম দিক থেকে বাহির হয়। তখন এই শাক বাজারে অনেক মুল্যে বিক্রি হয়। পাটশাক বাঙ্গালীদের এক সুপরিচিত খাবার। কথিত আছে যে, পাট শাক বা নালিয়া শাক দিয়ে নাকি বৈশাখ মাসে সূচনা হয়।
বৈশাখ মাসে নালিয়া পাতার শাক এক সুপরিচিত খাদ্য। পাট শাক বা নালিয়া শাক সাধারণত দুই ধরণের দেখিতে পাওয়া যায়। এই শাকের পৃথক পৃথক স্বাদ আছে। পাটশাকের পাতার মধ্যে থাকা লাল রঙের পাতাটি মিষ্টি হয় আর সাধারণ রঙের পাতাটি তিক্ত হয়। কিন্তু বেশিরভাগ তিক্ত পাটশাক সকলে পছন্দ করেন।
পাট শাকের মধ্যে পুষ্টি উপাদান অনেক
পাট শাক বা নালিয়া শাক খাওয়ার ক্ষেত্রে কেহ অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু কেহ আবার এই শাককে প্রিয় হিসাবে গ্রহণ করেন। তবে পাটশাক বা নালিয়া শাক পাতার মধ্যে কি গুণ রয়েছে তা অনেকের জানা নেই। পাটশাক পুষ্টি গুণে পরিপূর্ণ ও যাহার মধ্যে ভরপুর পরিমাণে খাদ্য উপাদান আছে। সেই খাদ্য উপাদান আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় পুষ্টি গুণের চাহিদা পূরণ করে ও যার তুলনা নেই।
পাটশাক একটি মুখরোচক খাদ্য। এই শাক শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। পাট শাকে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য গুণ থাকে সেগুলি হল- পাটশাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রণ, ফরফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, নিয়াসিন, সেলেনিয়াম ও ভিটামিন বি৬ রয়েছে। পাটশাক বা নালিয়া শাকে উচ্চমাত্রায় ক্যারোটিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ থাকে যা শরীরে খাদ্য গুণ যোগান দিতে সাহায্য করে।
পাটশাক বা নালিয়া শাক পাতার মধ্যে কত পরিমাণ কি আছে সে গুলো নিম্নরূপ-
প্রতি ১০০ গ্রাম পাটশাকে-
জলের পরিমাণ- ৮৩.৫ গ্রাম।
খনিজ পদার্থ- ১.৩ গ্রাম।
খাদ্যশক্তি বা এনার্জি – ৬২ শতাংশ ক্যালোরি।
আমিষ/ প্রোটিন – ২.৬ গ্রাম।
শর্করা/সুগার – ১২.৬ গ্রাম ক্যালসিয়াম- ১১৩ মিলিগ্রাম।
এখন আমরা দেখবো যে পাট শাক কি কি রোগ মুক্ত করতে সহায়তা করে-
১/ হৃদ রোগের জন্য পাটশাক খুব উপকারী- পাট শাকে থাকা খাদ্য উপাদান মানব শরীরের রক্তে কোলেস্ট্ররেলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হওয়ার সম্ভবনা কমে যায়।
২/ ক্যানসার প্রতিরোধে পাটশাক কার্যকরী- পাট শাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকার কারণে শরীর থেকে টক্সিন মুক্ত করে রাখে। ফলে ক্যানসার হওয়ার সম্ভবনা কমে আসে।
৩/ হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্ত চাপ কমাতে পাটশাক ধারুন কার্যকরী- পাটশাকে পটাশিয়াম থাকার কারণে মানব দেহে রক্ত চলাচল করতে সাহায্য করে। এর কারণে দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও উচ্চ রক্ত চাপ বা হাই ব্লাড প্রেসারের ঝুঁকি কমায়।
৪/ অনিদ্রা দূর করিতে পাট শাকের ভূমিকা অনেক- এই পাট শাকের মধ্যে প্রচুর মাত্রায় ম্যাগনেশিয়াম থাকায় শরীরে দরকারি হরমোন যোগান দিতে সাহায্য করে ফলে দেখের স্নায়ুতন্ত্র সচ্চল ও শান্ত রাখে এবং অনিদ্রা দূর করিতে সাহায্য করে।
৫/ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পাটশাক অতুলনীয়-
পাট শাকের মধ্যে ভিটামিন-A,B,E,C থাকায় রোগের সাথে লড়াই করতে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। ভিটামিন-B রক্তে থাকা শ্বেতকণা গঠন করে এবং ভিটামিন-A ও E চোখ, হৃৎপিণ্ডের সাথে অন্যান্য অঙ্গের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে।
৬/ হাড় গঠনে পাট শাক উপকারী- পাটশাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রণ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম উপাদান গুলো হাড় গঠন করতে ও ক্ষয়রোধ করতে সহায়তা করে।
৭/ জীবন শক্তি বৃদ্ধিতে এই শাক অসাধারণ গুণ- এই শাকে ভরপুর মাত্রায় আয়রন থাকার জন্য রক্তে থাকা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলে।এই পাটশাকে থাকা আয়রণ শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং জীবন শক্তি বাড়িয়ে তুলে।
৮/ হজমশক্তি বৃদ্ধিতে পাটশাক বেশ কার্যকর- পাট শাকে প্রচুর খাদ্য আঁশ থাকে যাহা খাবার হজম করতে খুব কার্যকরী এবং শরীরের পুষ্টি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে দেহের কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হয়ে যায়।
৯/ বাতজনিত ব্যাথা নিবারণ করিতে পাটশাক আসলে এক ঔষধি- পাটশাক বা নালিয়া শাকে পর্যাপ্ত মাত্রায় ভিটামিন-E আছে। সেই জন্য শরীরে থাকা গেঁটেবাত, জ্বালাযন্ত্রণা এবং আর্থরাইটিস জনিত সমস্যার সমাধানে ইহা এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি বলা যায়।
১০/ বাড়তি শিশুর পথ্য হিসাবে পাট শাকে খাদ্য তালিকায় রাখা যায়- পাট শাকে বেশী পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে। যাহা বাড়তি শিশুর শ্রীবৃদ্ধির জন্য খাদ্য তালিকায় পাটশাক রাখা অত্যন্ত লাভদায়ক।