আব্দুল জব্বার পাবনাঃ
শীতকালীন টমেটো চাষে লাভবান হচ্ছে পাবনা সুজানগর উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের কৃষকেরা। মৌসুমের মাঝামাঝিতে এসেই তাদের খরচের টাকা উঠে গেছে। এখনও জমি থেকে টমেটো উঠছে। আরও প্রায় মাসখানেক টমেটো উঠবে। এই সময়ের মধ্যে আরও লাভের আশা করছেন কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সাগরকান্দী ইউনিয়নের খলিলপুর, চরখলিলপুর এবং কালিকাপুর, নাজিরগঞ্জ পূর্ব গ্রামে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে এবছর টমেটো চাষ করেছেন কৃষকেরা। চলতি বছরে এ অঞ্চলে ৩৫০ হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া আর সঠিক সময়ে সার-বিষ প্রয়োগ করায় অধিকাংশ জমিতেই টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে।
সাগরকান্দি গ্রামের কৃষক সেলিম মন্ডল বলেন, এক বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করতে সার, বীজ ও শ্রমিকসহ খরচ হয় ২৫ থেকে ২৭ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে। উৎপাদন খরচ বাদে প্রতি বিঘা জমির টমেটো বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতি বছর ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লাভ করতেছি বিঘা প্রতি। যার কারণে অন্য ফসল চাষ করা ছেড়ে দিয়ে টমেটো চাষের দিকে বেশি আগ্রহী হয়েছি।
মোরালীপুর গ্রামের কৃষক শাওন মন্ডল বলেন, টমেটো চাষের প্রথম দিকে ভালোই দাম পাওয়া যায়। অনেক সময় ব্যবসায়ীরা পুরো জমির টমেটো কিনে নেয়। দুই-তিন মাসের মধ্যে টমেটো নিয়ে জমি ছেড়ে দেয়। তবে বেশির ভাগ চাষী নিজেরাই টমেটো ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। তিনি আরো বলেন, টমেটো ব্যবসায়ীরা মূলত বাইরের। তারা এখানে এসে থাকেন। এর পরে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে টমেটো কিনে ট্রাকে ভর্তি করে নিয়ে যায়।
একই গ্রামের কৃষক মানিক শেখ বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতি বিঘা জমিতে ২০০ থেকে সাড়ে ৩০০ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে। হাটবাজারে টমেটোর দামও বেশ ভালো। বাজারে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হয়ে যায়। এই টমেটো চাষ করে অনেক ভালো দিন পার করছি।
স্থানীয় ব্যাবসায়ীরা বলেন, এই চরাঞ্চলের জমি থেকে কৃষিপণ্য ভ্যান গাড়িতে করে আনতে হয়। টমেটোর ভ্যান নিয়ে এই রাস্তায় চলতে অনেক কষ্ট হয়। গাড়ি উল্টে পড়ে যায় ফলে সঠিক সময়ে কৃষিপণ্য বিক্রি না করতে পারায় অনেক লোকসান গুনতে হয়। সরকার যদি এই প্রত্যন্ত অঞ্চল দিয়ে একটা পাকা রাস্তা করে দেয়, তাহলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হয়।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইফুল আলম বলেন, এ মৌসুমে জেলাজুড়ে টমেটোর চাষ হয়েছে। কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। আগামীতে তাই টমেটো চাষের লক্ষ্যমাত্রা বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এখানকার কৃষকরা পরিশ্রম করতে পারেন। কৃষি বিভাগ থেকেও এখানকার কৃষকদেরকে নানাভাবে সহযোগীতা করা হয়।