আব্দুল জব্বার পাবনাঃ
পাবনার বেড়া সাথিঁয়া সুজানগর পেঁয়াজ চাষের জন্য বিখ্যাত। তিন উপজেলার বেশিরভাগ পেঁয়াজ বিক্রি হয় কাশিনাথপুর হাটে। আজ ২৫ ডিসেম্বর রবিবার কাশিনাথপুর হাটে মুড়িকাটা পেঁয়াজ প্রতি মন ৯০০থেকে ১০০০ টাকা বিক্রি হয়।
আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম নিয়ে হতাশায় ভুগছেন পাবনার পেঁয়াজ চাষিরা। চারা পেঁয়াজ বাজারে আসার আগে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করে গত কয়েক বছর লাভ পেলেও এবার দাম কম হওয়ায় হতাশ দেশের সর্ববৃহৎ পেঁয়াজ উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে পরিচিত পাবনার চাষিরা। পাবনায় এটি ‘মূলকাটা’ পেঁয়াজ হিসেবে পরিচিত। চলতি বছর প্রতিমণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা দরে। গত বছর এর দাম ছিল ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা।
পাবনার কাশিনাথপুরের পেঁয়াজ চাষি আব্দুর রহিম জানান, চাষ, সার,লাঙ্গল শ্রমিকের মুজুরিসহ ৪০ হাজার টাকা প্রতি বিঘায় মুড়িকাটা পেঁয়াজে আবাদ খরচ হয়েছে। ফলে বিঘাপ্রতি পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ৪২ হাজার টাকার। এমন পরিস্থিতিতে তাদের বেশি দামে বীজ ও অন্যান্য সামগ্রী কিনে চারা পেঁয়াজ আবাদ করতে হচ্ছে।
প্রতিমণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায়। এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে ৪২ হাজার টাকার বেশি পাওয়া যাচ্ছে না।’ এমন পরিস্থিতিতে কৃষকের স্বার্থে দেশে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের দাবি জানান তিনি।
সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মমিন বলেন, ‘গত বছর এই সময় এক মণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে। এবার এর দাম ৯০০ টাকা থেকে ৯৫০ টাকা।’
চাষিরা বলছেন, নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসলেও এখনো পাবনার বাজারে পুরনো পেঁয়াজ রয়ে গেছে। নতুন পেঁয়াজের চাহিদা কম থাকায় কৃষকরা আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না। মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম নিয়ে যখন হতাশ পাবনার চাষিরা তখন চারা পেঁয়াজ আবাদ করতে তাদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
চট্টগ্রাম ঢাকার ব্যাপারি গহের আলী যানান আগাম জাতের মুড়িকাটা পেয়াজ উঠলেও কৃষকের ঘরে এখনও পুরান পেয়াজ রয়ে গেছে। সেজন্য আশানুরূপ দাম পাচ্ছে না কৃষক। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন যদি বাইরের পেঁয়াজ আমদানি না করা হয় তবে পেঁয়াজের দাম বাড়বে।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ বছর পাবনায় ৮ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১,০৯,৩৫৫ মেট্রিকটন মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪,৪৬২ মেট্রিকটন মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী বলেন, ‘মুড়িকাটা পেঁয়াজ কাটা শুরু হয়েছে। চলবে জানুয়ারি পর্যন্ত। কৃষকের ঘরে প্রায় ১৫ শতাংশ পুরনো পেঁয়াজ থাকায় বাজারে পুরনো পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।’ মুড়িকাটা পেঁয়াজ ঘরে তোলার পাশাপাশি কৃষকরা চারা পেঁয়াজ চাষ করেছেন। এ বছর পাবনায় ৪৪ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে ৬ দশমিক ৯০ লাখ মেট্রিক টন চারা পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. সাইফুল আলম বলেন, গত কয়েক বছর ধরে পাবনায় পেঁয়াজের আবাদ বেড়েছে। এ বছরও তাই হবে। পেঁয়াজ আবাদ করে কৃষক লাভবান হবেন আশাকরি।