ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ওয়াশিংটন সফরের সময় এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে অত্যাধুনিক বিবেচনা করা হলেও, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এটিকে ‘বেশ পুরোনো’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, মস্কো এটি মোকাবিলার একটি উপায় খুঁজে বের করবে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের অবসান চায় এবং এটি অনিবার্যভাবে একটি কূটনৈতিক সমাধানের সঙ্গে জড়িত।
এ লড়াই চালিয়ে যাওয়া আমাদের লক্ষ্য নয়। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব এই যুদ্ধের অবসান ঘটানোর। আমি এর চেষ্টা করছি এবং এটি যত তাড়াতাড়ি হয়, ততই ভালো। রয়টার্স, এবিসি নিউজ, বিবিসি।
পুতিনের এ মন্তব্যের পরপরই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, যে রাশিয়া যুদ্ধাবসানে জন্য কোনো আগ্রহই দেখায়নি। মূলত এই মুহূর্তে রাশিয়া যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে অর্থপূর্ণ কূটনীতিতে জড়িত থাকার জন্য কোনো আগ্রহই দেখায়নি।
রাশিয়া অবিলম্বে সৈন্য প্রত্যাহার করে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে। কিন্তু ‘তার অনুপস্থিতিতে আমাদের কিছু অর্থপূর্ণ প্রমাণ দেখতে হবে যে রাশিয়া আসলে একটি ন্যায্য এবং টেকসই শান্তি আলোচনার জন্য প্রস্তুত কিনা।’ ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘একটি দেশ অন্য দেশের ভূখণ্ড জোরপূর্বক দখলের অনুমোদনের ন্যায্যতা দেয় না।’
ইউক্রেনে রুশ সেনাদের অস্ত্র সরবরাহের কথা অস্বীকার উত্তর কোরিয়ার : ইউক্রেনে ভাড়াটে রুশ সেনাদের উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে বলে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাকে ‘অযৌক্তিক’ বলে নিন্দা জানিয়েছে উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছিলেন, ‘ইউক্রেনে যুদ্ধরত রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেটসহ যুদ্ধাস্ত্রের প্রাথমিক চালান পাঠিয়েছে পিয়ংইয়ং। আমরা নিশ্চিত হয়েই বলছি, গত মাসে উত্তর কোরিয়া এসব অস্ত্র পাঠিয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবি অস্বীকার করে উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘এ ধরনের খবর মিথ্যা ও অযৌক্তিক। এসবের ব্যাখ্যা দেওয়ার কোনো মানে হয় না। উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে অস্ত্র লেনদেন ইস্যুতে উত্তর কোরিয়া তার নীতিগত অবস্থানের কোনো পরিবর্তন করেনি।’ যুক্তরাষ্ট্র নিজেই ইউক্রেনে বিভিন্ন ধরনের প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহ করে রক্তপাত ও ধ্বংস ডেকে আনছে বলেও অভিযোগ করেছে উত্তর কোরিয়া। কেসিএনএ। রুশ বাহিনীকে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্রের চালান বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের সঙ্গে শুক্রবার একমত পোষণ করেছে যুক্তরাজ্য।
যে কৌশলে ইউক্রেন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যান জেলেনস্কি : ইউক্রেন থেকে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমিরি জেলেনস্কির ওয়াশিংটন যাত্রায় একেবারে ভিন্ন ধারার কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধের সম্মুখভাগ পরিদর্শনে যান জেলেনস্কি। এরপর সেখান থেকেই ওয়াশিংটনের উদ্দেশে যাত্রা । রাতভর ট্রেন যাত্রা শেষে পোল্যান্ড পৌঁছান। সেখানে মার্কিন বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে চড়েন জেলেনস্কি। উড়োজাহাজটির নিরাপত্তায় ছিল ন্যাটোর একটি গোয়েন্দা উড়োজাহাজ ও একটি এফ-১৫ যুদ্ধবিমান।
জেলেনস্কির সফরের বিষয়টি বুধবার ভোরের আগ পর্যন্তও নিশ্চিত করা হয়নি। ততক্ষণে মার্কিন কর্মকর্তারা নিশ্চিত হতে পেরেছেন, জেলেনস্কি নিরাপদে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীর পথে রয়েছেন। সফর নিয়ে কয়েক মাস ধরে আলাপ-আলোচনা হচ্ছিল।
১১ ডিসেম্বর দুই প্রেসিডেন্ট কথা বলেন। তিন দিন পর জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়। রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হুমকির ফলে ইউক্রেনের আকাশসীমায় উড়োজাহাজে যাত্রা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই জেলেনস্কি ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ডে গোপনে ট্রেনে যাত্রা করেছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
বুধবার ভোরে তাকে পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী শহর প্রজেমিসলের একটি রেলস্টেশনে দেখা যায়। সেখানে অপেক্ষমাণ একটি গাড়িবহরে গিয়ে ওঠেন।