পেনাল্টি মিসের খেসারত বেশ ভালো ভাবেই দিতে হলো চলতি বিশ্বকাপের তাক লাগানো এশিয়ান ফুটবল পরাশক্তি সৌদি আরবকে। আজ দোহার এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পোল্যান্ডের কাছে ২-০ গোলে পরাজিত হয়েছে প্রথম ম্যাচে লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনাকে হারানো দলটি। পোল্যান্ডের হয়ে গোল দুটি করেছেন যথাক্রমে পিওতর জিয়েলিনিস্কি ও রবার্ট লিওয়ানদোস্কি।
এই পরাজয়ে ১৯৯৪ সালের পর প্রথম নক আউট পর্বে খেলার স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেল গ্রীন ফ্যালকনদের।
শুরুতে ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়া সৌদি আরব প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতায় ফেরার সুযোগ পেলেও স্পট কিক থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন সালেম আল-ডসারি। ফলে নক আউট পর্বে খেলার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে হলে বিভিন্ন সমীকরনের পাশাপাশি গ্রুপের শেষ ম্যাচে তাদের হারাতে হবে উত্তর আমেরিকার ফুটবল পরাশক্তি মেক্সিকোকে। আগামী ৩০ নভেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি।
ম্যাচের শুরুতে অবশ্য খুব একটা আক্রমনাত্মক দেখা যায়নি কোন পক্ষকেই। এই সময় উল্লেখযোগ্য কোন আক্রমনও চালাতে পারেনি কোন দল। আর্জেন্টিনাকে প্রথম ম্যাচে হারানো সৌদি আরবকে কিছুটা আক্রমনাত্মক মনে হলেও মেক্সিকোর বিপক্ষে গোলশুন্য ড্র করা পোল্যান্ড ছিল রক্ষনাত্মক। তারা প্রতিআক্রমনের দিকেই বেশী মনোযোগী ছিল।
ম্যাচের ১৩ মিনিটে প্রথম আক্রমনটি রচনা করে সৌদি আরব। ডি বক্সের বাইরে থেকে ডিফেন্ডার সৌদ আব্দুলহামিদের পাস থেকে চলন্ত বলে শট নেন মোহাম্মদ কানো। তবে বলটি ফিস্ট করেন পোল্যান্ডের গোল রক্ষক ওজিনে সিজিসনি।
১৫তম মিনিটে সৌদি আরবের সালেম আল-ডসারিকে ফাউল করায় ফ্রি কিক পায় সৌদি আরব। ডি বক্সের বাইরে থেকে তারই নেয়া শটের বল সারসরি আশ্রয় নেয় পোলিশ গোল রক্ষক সিজিসনির হাতে।
ইতোমধ্যে অতিমাত্রায় ফাউল করতে দেখা যায় রক্ষনাত্মক খোলসে থাকা পোলিশদের। ১৮ মিনিটের মধ্যেই তাদেরকে তিনটি হলুদ কার্ড দেখান কর্তব্যরত ব্রাজিলীয় রেফারি। ম্যাচের ২৫ মিনিটে পোল্যান্ড প্রতি আক্রমনে গেলে কর্নারের বিনিময়ে তাদের প্রতিহত করে সৌদির রক্ষন। কর্নার থেকে পিওতর জিয়েলিনিস্কির ক্রসের বলে দর্শনীয় এক হেড দেন সৌদির ডি বক্সে অপেক্ষমান পোলিশ মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান বিয়েলিক। তবে বলটি ক্রস বারের পাশ দিয়ে মাঠের বাইরে চলে যায়।
৩২ মিনিটে গোলের সেরা সুযোগটি পেয়েছিল সৌদি আরব। তবে সালেহ আল-শেহরির ক্রসে মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন মোহাম্মদ আল-বেরিত। এই সময় একেবারেই অরক্ষিত ছিল পোলিশ গোলপোস্ট। এর মাসুল শেষ পর্যন্ত দিতে হলো গ্রীন ফ্যালকনদের। ৩৯ মিনিটে রবার্ট লিওয়ানদোস্কির বানিয়ে দেয়া বল জালে জড়ান পিওটর জিয়েলিনিস্কি। প্রতি আক্রমন থেকে মধ্য মাঠেই বল পেয়ে যান পোলিশ সুপার স্টার। দ্রুত তিনি ঢুকে পড়ে সৌদি বক্সে। এ সময় গোল রক্ষক তাকে প্রতিহত করতে এগিয়ে এলে পোস্টের ডান কানায় চলে যান লিওয়ানদোস্কি। সেখান থেকেই তার ব্যাক পাসের বল ডান পায়ের জোড়ালো শটে জালে জড়ান সতীর্থ জিয়েলিনিস্কি (১-০)।
গোল হজাম করে আরো তেতে উঠে গ্রুপের প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী আর্জিন্টিনাকে ২-১ গোলে হারানো সৌদি আরব। মুহুর্তেই প্রতিআক্রমনে যায় তারা। ম্যাচের ৪৩ মিনিটে গ্রীন ফ্যালকনদের সালেহ আল-শেহরি বল নিয়ে পোলিশ ডি বক্সে ঢুকে গেলে সেখানে তাকে ফাউল করেন মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান বিয়েলিক। পরে ভিএরআর দেখে পেনাল্টির নিদের্শ দেন রেফারি। কিন্তু ৪৫ মিনিটে সালেম আল-ডসারির নেয়া শটের বলটি ডান দিকে ঝাপিয়ে পড়ে প্রতিহত করেন পোলিশ গোল রক্ষক সিজিসনি। ফলে ১-০ গোলে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় বিশ্বকাপে সর্বশেষ ১৯৯৪ সালে শেষ ষোলতে পৌঁছানো সৌদি আরব।
বিরতি থেকে ফিরে গোল পরিশোধে মরিয়া হয়ে উঠে গ্রীন ফ্যালকনরা। একের পর এক আক্রমন রচনা করতে তাকে তারা। তবে সেরা সুযোগটি সৃস্টি হয় ৫৫ মিনিটে। পোলিশ বক্সে জটলা থেকে পোস্টে শট নেন আল-ডসারি। এই দফায়ও তার সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়ান সিজিসনি। হাঁটু গেড়ে এটিও ফিরিয়ে দেন তিনি। ৬০ মিনিটে মোহাম্মদ কানোর পোস্টের একেবারে সামনে থেকে নেয়া শটটিও বারের উপর দিয়ে চলে যায়। এতে অবশ্য দমে না গিয়ে হাততালির মাধ্যমে সৌদি আরবকে সমর্থন যোগাতে থাকে স্টেডিয়াম ভর্তি সমর্থকরা।
ম্যাচের ৬২ তম মিনিটে ব্যাবধান দ্বিগুন করার দারুন এক সুযোগ পায় পোল্যান্ড। ডান প্রান্ত থেকে প্রিজিমিসল ফ্রাঙ্কোভস্কির ক্রসের বলে দর্শনীয় হেড করেছিলেন আরকাডিয়াস মিলিক। কিন্তু বলটি সৌদির ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে।
এ পর্যায়ে গোল পরিশোধে মরিয়া সৌদি আরব অল আউট খেলতে থাকে। অপরদিকে প্রতিআক্রমনে জোর দেয় পোল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত নিজেদের রক্ষনের ভুলে আরো একটি গোল হজম করতে হয় সৌদি আরবকে। ম্যাচের ৮১ তম মিনিটে রক্ষনে বল আদান প্রদানের সময় আব্দুলেল্লাহ আল-মালকির পা থেকে বল ফস্কে গেলে দ্রুত সেটি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেন সুযোগ সন্ধানী অভিজ্ঞ বার্সেলোনা তারকা লিওয়ানদোস্কি। বেশ দ্রুতই তিনি একা থাকা সৌদি গোল রক্ষক মোহাম্মদ আল-ওয়েসিসকে পরাজিত করেন (২-০)।
বিশ্বকাপে সর্বশেষ ১৯৯৪ সালে শেষ ষোলতে খেলেছিল সৌদি আরব। সেটি ছিল এখনো পর্যন্ত বিশ্ব মঞ্চে দলটির সেরা সাফল্য। পরবর্তী আরো তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছে তারা। কিন্তু সেই সফলতা আর অর্জন করতে পারেনি গ্রীন ফ্যালকনরা। বরং টুর্নামেন্টের একটি ম্যাচেও জয়লাভ করতে পারেনি পরবর্তী প্রজন্মের খেলোয়াড়রা। ২০১০ ও ২০১৪ বিশ্বকাপের মুল আসরেই উঠতে পারেনি তারা। সর্বশেষ ২০১৮ বিশ্বকাপের মুল পর্বে খেলার সুযোগ পায় তারা। তবে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ওই আসরে একটি ম্যাচেও জয়লাভ করতে পারেনি মধ্যপ্রাচ্যের দলটি।