শফিকুল ইসলাম সোহেল ,শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে, প্রধানমন্ত্রী আগামী প্রজন্মের জন্য চিন্তা করছেন। যারা অবৈধপথে বিদেশ যেতে চায়, তাদের নিরুৎসাহিত করুন। অবৈধ পথে বিদেশ গেলে এর কী ভয়াবহতা তুলে ধরুন। প্রয়োজনে স্থানীয়ভাবে সেমিনার করে তাদের সচেতন করুন।’
শরীয়তপুরে মানবপাচার প্রতিরোধ ও নিরাপদ অভিবাসন উৎসাহিত করার লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২২ জুলাই) সকাল ১০টায় শরীয়তপুর পৌরসভার অডিটোরিয়ামে মানবপাচার প্রতিরোধ ও নিরাপদ অভিবাসনে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ও ইতালির সরকার একটি চুক্তির ওপর কাজ করছে। এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের শ্রমিকরা কাজের জন্য ইতালিতে যেতে পারবেন। বাংলাদেশ সংরক্ষিত তিন হাজার জনের কোটার সুবিধা লাভ করবে। এ সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া চুক্তির ফলে ছাত্র, গবেষকরা যাতায়াত করতে পারবেন।’
জেলার বিভিন্ন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, মসজিদের ইমাম, ইতালি ফেরত ও সাংবাদিকদের নিয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা বলেন, ‘গত ৩০ জুন বাংলাদেশ ও ইতালির পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই চুক্তির ওপর প্রথম আলোচনায় বসে। চুক্তিতে ইতালি যাওয়ার আগে প্রশিক্ষণ, মানবপাচারকারীদের দমনসহ মানুষের চাহিদা ও জোগানের মাধ্যমে ভারসাম্য বজায় রেখে এবং ফেরত আনা বাংলাদেশিদের সমাজে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। আমরা চাই বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে কেউ যেন ইতালি পাড়ি না জমায়। তারা যেন নিজেদের স্বনির্ভর করে ইতালিতে যাওয়ার জন্য সরকারিভাবে চেষ্টা করে। যারা বর্তমানে বৈধ পথে ইতালি যায় তাদের আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করছি।’
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘অবৈধ পথে যারা বিদেশে গমন করে তাদের সরকারিভাবে কোনও সহযোগিতা করা যায় না। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় হয়রানি হয়ে থাকে। বিশেষ করে তারা যখন অবৈধ পথে লিবিয়া থেকে নৌকা বা ট্রলারযোগে ইতালি প্রবেশ করে, তখন সমুদ্রের বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। এই পরিবারগুলো শেষ হয়ে যায়।’
এই প্রথমবারের মতো মানবপাচার প্রতিরোধ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রথম সভার স্থান হিসেবে শরীয়তপুরকে বেছে নেওয়ার কারণ, ওই অঞ্চল থেকেই অবৈধ পথে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা চলে বেশি।
বেনজীর আহমেদ বলেন, শরীয়তপুর থেকে অনেকে অবৈধ পথে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, এটি একটি ভয়ানক মরণযাত্রা। এটা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে।
বাংলাদেশিরা অবৈধ পথে গিয়ে হত্যার শিকার হোক এটি সরকার চায় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেন ১৫-২০ লাখ টাকা খরচ করে এভাবে যেতে হবে? ইউরোপে তো কেউ প্রাসাদ বানিয়ে বসে নেই। ছোট একটি ঘরে ১৫-২০ জন গাদাগাদি করে বাংলাদেশি থাকে।’
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নতির বিষয়ে তিনি বলেন, এখন হাজার হাজার আফ্রিকান এখানে এসে পাসপোর্ট ফেলে দিয়ে অবৈধভাবে অবস্থান করছে। আমরা কেন এখন বিদেশে যাবো।
জননিরাপত্তা সচিব মো. আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে এক লাখ বিদেশি বৈধভাবে কর্মরত। যখন আমরা উন্নত হচ্ছি তখন অবৈধ অভিবাসন গ্রহণযোগ্য নয়।
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে জুলাই পর্যন্ত ১৩৭০ জন বাংলাদেশিকে লিবিয়া থেকে ফেরত আনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, শরীয়তপুর থেকে অনেকে ইতালি যেতে চান এবং অবৈধ পথে যেতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা যান।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক এমপি।
সম্মানিত অতিথি ছিলেন ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নুনজিয়াতা। বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র) মাসুদ বিন মোমেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন।
উল্লেখ্য, এই প্রথমবারের মতো ‘মানবপাচার প্রতিরোধ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রথম সভার স্থান শরীয়তপুর বেছে নেওয়া হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, ওই অঞ্চল থেকে বেশি সংখ্যক মানুষ অবৈধ পথে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করে।