মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সত্যতা মেলার পর নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করেছে মাউশি।
বৃহস্পতিবার পরীক্ষা কমিটির প্রধান মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক জরুরী বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ধরপাকড়ের মধ্যেই বাতিল করা হলো পরীক্ষাটি।
তবে পরীক্ষা বাতিলের বিজ্ঞপ্তিতে কারণ হিসেবে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
মাউশির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পরীক্ষা বাতিলের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের জনবল নিয়োগের লক্ষ্যে গত ১৩ মে বেলা ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদের এমসিকিউ পরীক্ষা অনিবার্য কারণে বাতিল করা হলো।
মাউশি মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তীতে এই পরীক্ষার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।
এদিকে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার ও মাউশির কর্মচারীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) হারুন অর রশিদ (সদ্য ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়া) দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার পর আমরা অনুসন্ধান করে কারা কারা জড়িত, কীভাবে প্রশ্নটি ফাঁস করেছে সে সব বিষয়ে যথাযথ কতৃপক্ষের মাধ্যমে আমরা শিক্ষা সচিব মহদয় এবং ডিজি মাউশিকে আমরা অবহিত করেছি। সেই প্রেক্ষিতে তারা তদন্ত করে পরীক্ষা বাতিল করেছে।
শুক্রবার রাজধানীর ৬১টি কেন্দ্রে মাউশির অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক (গ্রেড-১৬) পদে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা (এমসিকিউ) অনুষ্ঠিত হয়। এদিন ৫১৩টি পদের জন্য পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ৮৩ হাজার। পরীক্ষা চলাকালে ইডেন মহিলা কলেজ কেন্দ্র থেকে সুমন জমাদ্দার (৩০) নামে এক পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
এরপরই বেরিয়ে আসতে থাকে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সুমনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন গ্রেপ্তার করা হয় পটুয়াখালীর খেপুপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলামকে। প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজধানীর ওয়ারী থানাধীন কে এম দাস লেন এলাকা থেকে মাউশির উচ্চমান সহকারী আহসান হাবীব (৪৫) ও মাউশির অফিস সহকারী মো. নওশাদুল ইসলামকে (৩৭) গ্রেপ্তার করে ডিবি।
সর্বশেষ মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয় পটুয়াখালী সরকারি কলেজের শিক্ষক রাশেদুল ইসলামকে (৩৪)।
ডিবি জানিয়েছে, শিক্ষক রাশেদুলের মাধ্যমে পরীক্ষার ৪২ মিনিট আগেই মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর পান সুমন জমাদ্দার।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মাউশিতে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। সেই সিন্ডিকেট প্রশ্নপত্র ফাঁস থেকে নিয়োগ-বদলির নিয়ন্ত্রণ করে। চক্রের অন্যতম হোতা মাউশির স্কুল শাখার একজন শিক্ষা কর্মকর্তা। তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁস থেকে নিয়োগের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। তার মোবাইল থেকেই চক্রের সদস্যদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে চক্রের সদস্যদের কাছে পৌছে গেছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।