কয়েক মাস অপেক্ষা, বিতর্ক এবং টেকসই প্রচারণার পর, প্রিন্স হ্যারির আত্মজীবনী ‘স্পেয়ার’ অবশেষে মঙ্গলবার তার জন্মস্থান যুক্তরাজ্যে প্রকাশ ও বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। যদিও একটি প্রথম সারির ব্রিটিশ দৈনিক-সহ ইউরোপের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়েছিল বইয়ের বেশ কিছু তথ্য। তবুও বইটি নিয়ে ঔৎসুক্য যথেষ্ট রয়েছে।
প্রকাশক সংস্থা পেঙ্গুইন জানিয়েছে, প্রিন্স হ্যারির লিখিত স্মৃতিকথা ‘স্পেয়ার’ মোট ১৬টি ভাষায় পাওয়া যাবে। এছাড়াও ইংরেজি ভাষার একটি অডিওবুক হিসাবেও পাওয়া যাবে। তবে ভুলবশত বইটির কিছু কপি স্পেনে বিক্রি হয়েছে, যার ফলে ব্যাপকভাবে বইয়ের তথ্য ফাঁস হওয়ার জন্য ক্ষমা চেয়েছে সংস্থাটি।
বইটি প্রকাশিত হওয়ার পরে প্রিন্স হ্যারি ও ব্রিটেনের রাজপরিবার ছাড়াও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে আর একটি নাম জে আর মোরিঙ্গার। তিনি হ্যারির বইয়ের ‘গোস্ট রাইটার’ অর্থাৎ নেপথ্য লেখক। যার মানে, হ্যারির জবানিতে হলেও বইটি মোরিঙ্গারেরই লেখা। বিখ্যাত ব্যক্তিদের আত্মজীবনীর নেপথ্য লেখক হিসেবে যথেষ্ট নাম রয়েছে পুলিৎজার-জয়ী সাংবাদিক মোরিঙ্গারের।
সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারে মোরিঙ্গা জানিয়েছেন, কারও আত্মজীবনী লেখার আগে সেই মানুষটার ‘মাথার ভিতর ঢুকে পড়ার’ চেষ্টা করেন তিনি। তাই মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড এবং কার্ল ইয়ুংয়ের লেখা পড়ে নিজেকে তৈরি করেন তিনি।
ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি মেইল জানিয়েছে, হলিউড তারকা জর্জ ক্লুনি মোরিঙ্গারের সঙ্গে আলাপ করে দিয়েছিলেন হ্যারির। এই বইটি লেখার জন্য ১০ লক্ষ ডলার (১০ কোটি টাকা) পারিশ্রমিক নিয়েছেন মোরিঙ্গার।
পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিক এবং লেখক মোহরিঙ্গার স্মৃতিকথা বা আত্মজীবনী লেখাতে নতুন নন। ২০৫৫ সালে ‘দ্য টেন্ডার বার’ নামে নিজের স্মৃতিকথা লিখেছিলেন। বইটি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে এটি জর্জ ক্লুনি পরিচালিত এবং বেন অ্যাফ্লেক অভিনীত ২০২১ সালে একটি চলচ্চিত্রে পরিণত হয়েছিল।
এছাড়াও ২০০৯ সালে জনপ্রিয় টেনিস তারকা আন্দ্রে আগাসিকে তার স্মৃতিকথা ‘ওপেন’ লিখতে সাহায্য করেছেন এবং সম্প্রতি নাইকির প্রতিষ্ঠাতা ফিল নাইটকে তার স্মৃতিকথা ‘শু ডগ’-এর কাজ করতে সাহায্য করেছেন।
উল্লেখ্য, প্রিন্স হ্যারির আত্মজীবনী ‘স্পেয়ার’ মঙ্গলবার প্রকাশ হলেও এটি নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিতর্ক হচ্ছে। এছাড়াও বই প্রকাশের আগে বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারে রাজপরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক নিয়েও মুখ খুলেছেন প্রিন্স হ্যারি। যেখানে বাবা চার্লস ও ভাই প্রিন্স উইলিয়াম সর্ম্পকে আরও ভয়াবহ অভিযোগ করেন প্রিন্স হ্যারি।
নিজের আত্মজীবনীতে প্রিন্স হ্যারি লিখেছেন, তার বাবা কিং চার্লস তাকে ঠাট্টা করে বলেছিলেন, কে বলতে পারে আমি তোমার সত্য়িকারের বাবা কিনা।
বইটিতে হ্যারি দাবি করেন, তার ভাই প্রিন্স উইলিয়াম তাকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করেছিলেন, যখন তারা হ্যারির স্ত্রী মেঘান সম্পর্কে তর্ক করেছিলেন।
স্পেয়ারে হ্যারির কাছ থেকে আরও একটি দাবি রয়েছে, যেখানে ১৯৯৭ সালে তার মা ডায়ানার প্রিন্সেস অফ ওয়েলসের মৃত্যুতে শুধুমাত্র একবার কেঁদেছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রিন্স হ্যারি। হ্যারি জানান, যখন তার মাকে কবর দেয়া হচ্ছিল শুধুমাত্র সেসময়ই কেঁদেছিলেন তিনি।
আইটিভির সাক্ষাত্কারের প্রিন্স হ্যারি সেই দিনের কথা বর্ণনা করেছেন, কীভাবে তিনি এবং প্রিন্স উইলিয়াম জনসমক্ষে শোককারীদের সাথে দেখা করার সময় কোনও আবেগ দেখাতে অক্ষম ছিলেন।
এছাড়াও বইটিতে হ্যারি তার কুমারত্ব হারানোর বিবরণ, কিশোর বয়সে মাদক সেবনের স্বীকারোক্তি এবং আফগানিস্তানে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাথে কাজ করার সময় ২৫ জনকে হত্যা করেছিলেন বলে দাবি করেন।