চাঞ্চল্যকর ফরিদপুর জেলার আটঘর ইউপি চেয়ারম্যান মলয় বোসকে নৃশংসভাবে হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি মনির ও সত্তার মোল্লাকে দীর্ঘ ১১ বছর পর গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০।
১। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের সাবির্ক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরণের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। জঙ্গী, সন্ত্রাসী, সংঘবদ্ধ অপরাধী, ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী এবং অপহরন, ধর্ষণ ও হত্যাসহ, বিভিন্ন মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতারে র্যাব নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আসছে। গোয়েন্দা নজরদারী ও আভিযানিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে র্যাব ইতিমধ্যেই জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
২। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গতকাল ৩১ আগস্ট ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক রাত ২০:৩০ ঘটিকা ও অদ্য ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক রাত ০১:০০ ঘটিকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর ফরিদপুর জেলার আটঘর ইউপি চেয়ারম্যান মলয় বোসকে নৃশংসভাবে হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত সাজা ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি মনিরুজ্জামান শেখ ওরফে মনির (৩৯), পিতা-সামচু শেখ, সাং-গোয়াল পাড়া, থানা-সালথা, জেলা-ফরিদপুর ও একই মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত সাজা ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি সত্তার মোল্লা (৩৬), পিতা-কাশেম মোল্লা, সাং-খাগৈর, থানা-সালথা, জেলা-ফরিদপুর’দের গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামিরা উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে তাদের সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
৩। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মলয় বোস এর সাথে মনির ও সত্তারসহ তাদের দলের বেশ কয়েকজনের বিবাধের সৃষ্টি হয়। উক্ত বিবাধকে কেন্দ্র করে মনির ও সত্তারসহ তাদের দলের আরো ২০-২৫ মিলে মলয় বোসকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে গত ০৭/০২/২০১২ খ্রিঃ তারিখ মলয় বোস নিজস্ব মোটরসাইকেলযোগে ইউনিয়নে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তার বাসা থেকে বের হয়। তার কিছুক্ষণ পর আনুমানিক সকাল ১১:৩০ ঘটিকায় ফরিদপুর জেলার কোতয়ালী থানাধীন রনকাইল গ্রামের নিটকস্থ একটি পাকা রাস্তার উপর পৌছাইলে পূর্ব হতে ওৎ পেতে থাকা মনির ও সত্তারসহ তাদের দলের আরো ২০-২৫ জন লোক পূর্ব শত্রæতার জের ধরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র (রাম দা, ছ্যান দা, চাপাতি, লোহার রড, লাঠি ইত্যাদি) নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মলয় বোস এর উপর আক্রমন করে। অতঃপর মলয় বোস এর মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে দা, চাপাতি ইত্যাদি দিয়ে এলোপাতারি কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে সংবাদ দিলে কোতয়ালী থানা পুলিশ মলয় বোস এর মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করতঃ লাশ ময়না তদন্তের জন্য স্থানীয় হাসপাতলের মর্গে প্রেরণ করে। নৃশংস এই হত্যাকান্ড বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও ইলেকট্রনিক প্রিন্ট মিডিয়ায় গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করায় দেশব্যপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
৪। উক্ত হত্যাকান্ডের পর মৃত ইউপি চেয়ারম্যান মলয় বোস এর স্ত্রী ববিতা বোস বাদি হয়ে ফরিদপুর জেলার কোতয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-০৯, তারিখ-০৯/০২/২০১২ খ্রিঃ, ধারা-১৪৩/ ৩৪১/ ৩২৩/৩ ২৬/ ৩০৭/৩০২/১১৪/৩৪ দন্ড বিধি। পরবর্তীতে ঢাকার ৪ নম্বর দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় ৯ জন আসামীকে মৃত্যুদন্ড ও ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ প্রদান করে।
৫। গ্রেফতারকৃত মনির ও সত্তার উক্ত হত্যাকান্ডের পর থেকে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে আত্মগোপন করে ছিল। উক্ত আসামীদের আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১০ (ফরিদপুর ক্যাম্প) কাজ শুরু করে ও দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর আসামী মনিরুজ্জামান ও সাত্তার মোল্ল্যাকে নারায়ণগঞ্জ এর রুপগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
৬। গ্রেফতারকৃত আসামিদেরকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।