জাহাঙ্গীর আলম,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বিগত ১৫ মাসে মাদকবিরোধী অভিযানে ২ কোটি টাকার মূল্যের মাদকদ্রব্য জব্দ, ১৭৪ জনের নামে মাদক মামলাসহ ১১০ মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মাদকবিরোধী অভিযান ২৪ ঘণ্টা চলমান থাকলেও কোনো ক্রমেই থামছে না মাদক ব্যবসা। ফলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে তরুণ ও যুব সমাজ। চরম উদ্বিগ্নতায় অভিভাবকসহ সচেতন মহল।
উপজেলার ৩৬ কিলোমিটার ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় খুব সহজেই চোরাকারবারীরা এই মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন। এজন্য স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসা ও সেবনে যাতে স্কুল-কলেজের তরুণ-যুব সমাজ জড়িয়ে না পড়ে সে লক্ষ্যে হাজারেরও অধিক জনসচেতনমূলক উঠান বৈঠক করেছেন ফুলবাড়ী থানা পুলিশ।
জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলা জুড়ে প্রায় দুই শতাধিক স্পটে প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচা ও সেবন করে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এই সব স্পটে ফুলবাড়ী থানার পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করে ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১৩ মে পর্যন্ত প্রায় পনের মাসে মাদক তথা গাঁজা ৬৪৯ কেজি ৮৭৫ গ্রাম, ফেন্সিডিল ১ হাজার ৬৮৩ পিস, ইয়াবা ট্যাবলেট ৬ হাজার ২০১ পিস, বিয়ার মদ ১৬ বোতল ও স্ক্যাপ সিরাপ ৯৫২ পিস জব্দ করা হয়। এসব মাদকসহ ১১০ জন মাদক চোরাকারবারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ বাদী হয়ে ১৭৪ জনের নামে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছে পুলিশ। এ সব জব্দকৃত মাদকের সরকারি মূল্য ৯১ লাখ ১৬ হাজার ৭০০ টাকা।
এ ছাড়াও জিডিতে পরিত্যাক্ত অবস্থায় গাঁজা ২০ কেজি ৩০০ গ্রাম, ফেনসিডিল ৮৭ বোতল, স্ক্যাপ সিরাপ ২৭০ বোতল ও ইয়াবা ২২০ পিস উদ্ধার করা হয়েছে। পলাতক আসামি রয়েছে ৬৪ জন। এ সব জব্দকৃত মাদকের সরকারি মূল্য ২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৫০ টাকা। জব্দকৃত মাদক বেসরকারিভাবে এগুলোর মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা বলে জানা গেছে।
মাদক মামলায় উদ্ধারকৃত গাড়ির সংখ্যা কুড়িয়ার সার্ভিস লেখা কাভার্ড ভ্যান ১ টি, মূল্য ১৫ লাখ টাকা, মাইক্রোবাস ২ টি, মূল্য ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, পিকআপ ভ্যান ২ টি, যার মূল্য ২২ লাখ টাকা, অটো চার্জার গাড়ি ২টি, মূল্য ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, মোটরসাইকেল ২০টি, যার মূল্য ২৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা, বাইসাইকেল ৫টি, মূল্য ২৩ হাজার ৫০০ টাকা, শ্যালো মেশিন ১টি, মূল্য ৩০ হাজার টাকা, নৌকা ১ টি, মূল্য ৮০ হাজার টাকা ও নগদ টাকা ৮ হাজার ৫০০ টাকা। এ সব গাড়ির মোট মূল্য ৮৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।
ফুলবাড়ী থানার ওসি ফজলুর রহমানের নের্তৃত্বে পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান টিম কোটি কোটি টাকার মাদক উদ্ধার করায় অনেকেই পুলিশ ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ আলী পোদ্দার রতন জানান, উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা। এসব সীমান্তের বিভিন্ন স্পটে মাদকের রমরমা ব্যবসা সেটা সবার জানা। বিশেষ করে সারাদিন মোটরসাইকেল যোগে দুর দুরান্তের মাদকসেবীদের ঢল নামে সীমান্ত ঘেঁষা বিভিন্ন হাটবাজারে। বর্তমান ওসি যোগদান করার পর থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণসহ মাদকসেবীদের সংখ্যা অনেকাংশে কমে গেছে। এতে সীমান্ত এলাকার সাধারণ মানুষও কিছুটা স্বস্তিতে আছে। তবে পুলিশের একটি করে টিম সীমান্ত ঘেঁষা হাটবাজার গুলোতে অবস্থান করলে মাদকসেবীদের আনাগোনা আরো কমে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী থানার ওসি ফজলুর রহমান গত ১ বছর ২ মাস ২২ দিনে প্রায় ২ কোটি টাকার মাদক উদ্ধার ও ১৭৪ জনের বিরুদ্ধে মামলাসহ ১১০ মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি আরও জানান, প্রতিদিনই পুলিশ বাহিনী অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাদকবিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে।