নাহিদুল ইসলাম হৃদয়, স্টাফ রিপোর্টার
বিশ্বাসভঙ্গ এবং প্রতারণার এক মামলার শুনানিতে অমিতাভ দেউরীর প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছেন আদালত। মামলার বাদীকে ক্লিনহ্যান্ডে আদালতে আসা উচিত ছিলো বলে মন্তব্য করেছেন বিচারক। চুক্তির শর্ত পূরণ না করেই তথ্য গোপন করে মামলা দায়ের করা উচিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আদালত। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বই নিয়ে আদালতের দারস্থ হওয়ার বিষয়টি দু:খজনক বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আদালত।
“বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা” গ্রন্থের কপিরাইট এবং বাণিজ্যিক চুক্তি নিয়ে বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা অভিযোগ এনে গত ২৫ জুলাই সিএমএম কোর্টে মামলা দায়ের করেন বইটির সম্পাদক অমিতাভ দেউরী (সিআর মামলা নং: ৩৪৮/২০২৩)। পেনাল কোর্টে ৪০৬, ৪২০ ও ১০৯ ধারায় মামলায় বিচারক মোহাম্মদ আতাউল্লাহ আসামী নাজমুল হোসেন এবং শারমিন সুলতানার বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। ৩ অক্টোবর জামিনের জন্য আসামিরা আত্মসমর্পন করলে আদালত তাদের জামিন দেন ।
মামলার আরজিতে বাদী অমিতাভ দেউরী অভিযোগ করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে “বঙ্গবন্ধু বুক কর্ণার” প্রকল্পে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য একটি করে মোট ৬৫,৭০০ কপি বই ক্রয়ের নিমিত্তে বইটি নির্বাচন করেন। বইগুলোর মূল্য ১১,০২,৯৩,৮৭৫ টাকা নির্ধারিত হয়। আসামীগণ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগসাজশে বইটি বিক্রি করে বইটির রচয়িতাকে বঞ্চিত করে।
পরবর্তীতে বিষয়টি বাদীর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি প্রতিবাদ করায় আসামি এবং তার মধ্যকার একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি মোতাবেক আসামীগণ বাদীকে দুইটি চেকের মাধ্যমে ৬৬,১৭,৬৩২ টাকা প্রদান করলে তিনি লিভ টু আপিল তুলে নিবেন। কিন্তু আসামিগণ সেই টাকা পরিশোধ না করায় মামলা দায়ের করা হয়।
ইতোমধ্যে মামলার বাদী অমিতাভ দেউরী ৩০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করলেও সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল তুলে নেননি। চুক্তির শর্ত পূরণ ছাড়া বাকী টাকা নগদায়ন করতে চাইলে নাজমুল হোসেন আপত্তি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অমিতাভ দেউরী দুইটি পৃথক মামলা করেন। দুই মামলায় নাজমুল হোসেন এবং তাঁর সহধর্মিনী শারমিন সুলতানাকে আসামি করা হয়েছে। তারা এখন জামিনে রয়েছেন।
ইতোমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে নাজমুল হোসেনের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। নিয়ম মেনেই এবং কপিরাইট যাচাই করে ৬৫ হাজার বই ক্রয় করা হয়েছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ ওমর ফারুক আসিফ জানান, জনাব অমিতাভ দেউরী কপিরাইট অফিসে এবং মহামান্য হাইকোর্টে রিটে হেরে যাওয়ার পর অসৎ উদ্দেশ্যে লিভ টু আপিল করেন। নতুন মামলার শুনানিতে আদালত বাদীপক্ষের আইনজীবী এবং অমিতাভ দেউরীকে ইতোপূর্বে ৩০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে দুইজনেই টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। কিন্তু মামলার অভিযোগে সেই বিষয়টি গোপন করা হয়েছে। এসময় বিজ্ঞ আদালত উষ্মা প্রকাশ করে অমিতাভ দেউরীকে বলেন, “আপনার ক্লিনহ্যান্ডে আসা উচিত ছিলো। আপনি প্রকৃত তথ্যটি গোপন করেছেন তা উচিত হয়নি। সঠিক তথ্য আদালতের সামনে উপস্থাপন করা উচিত ছিলো ‘
বাদীপক্ষের আইনজীবী মো: লতিফুর রহমান স্বীকার করেছেন, ৩০ লক্ষ টাকা উত্তোলনের বিষয়টি পূর্বে আদালতকে জানানো হয়নি। বঙ্গবন্ধুর বই নিয়ে আদালতের দারস্থ হওয়ার বিষয়টি দু:খজনক বলেছেন আদালত।
এবিষয়ে অমিতাভ দেউরী কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি সার্টিফাইড কপি হাতে পেলেই গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন।
এই বিষয়ে নাজমুল হোসেন জানান, ‘জনাব অমিতাভ দেউরী বরাবরই মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে আমি আর আমার সহধর্মিনীর চরিত্র হনন করে মিডিয়া ট্রায়াল করেছেন। তিনবছর পূর্বেই জনাব দেউরী “বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা” গ্রন্থের কপিরাইট দাবি করলে কপিরাইট অফিস যাচাই-বাছাইয়ের পর তা খারিজ হয়। এরপর মহামান্য হাইকোর্টে তিনি পক্ষভুক্ত হয়ে রিট দায়ের করলে গ্রন্থের কপিরাইট আমার পক্ষে রায় দেন আদালত। কিন্তু জনাব দেউরী শিশুদের জন্য কেনা বঙ্গবন্ধুর বইগুলো বিদ্যালয়ে পাঠাতে সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল করেন। এতে বাধ্য হয়ে আমি তার সাথে ৬% বাণিজ্যিক চুক্তি করতে বাধ্য হই। সরল বিশ্বাসে তাকে ৩০ লক্ষ টাকা দেয়ার পর তিনি লিভ টু আপিল তুলতে গড়িমসি করেন। পরে আরেকটি চেক নগদায়ন করতে চাইলে আমি বাধা দিই এবং পূর্বের চুক্তির বাতিল করি।’
মামলার পরবর্তীর তারিখ আগামী ৮ নভেম্বর। দুইটি মামলায় আসামীরা স্থায়ী জামিনে রয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বইয়ের জটিলতা নিরসনে বিচারক মোহাম্মদ আতাউল্লাহ চুক্তি অনুযায়ী অমিতাভ দেউরী সকল মামলা এবং অভিযোগ তুলে নিলে বাকী ৩৬ লক্ষ টাকা নগদায়ন করতে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ ওমর ফারুক আসিফকে দায়িত্ব দিয়েছেন। যদিও আদালতের এই সিদ্ধান্তের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন মামলার বাদী অমিতাভ দেউরী।