প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশের শিশুদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য উপযুক্ত করে বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আগামী বছর থেকে একটি নতুন জাতীয় পাঠ্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের শিশুদের সত্যিকারের বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমরা আগামী বছর থেকে একটি নতুন জাতীয় পাঠ্যক্রম চালু করছি।
সোমবার (নিউইয়র্ক স্থানীয় সময়) জাতিসংঘ মহাসচিবের ট্রান্সফর্মিং এডুকেশন সামিটে সম্প্রচারিত একটি ভিডিও রেকর্ডিংয়ে জাতীয় বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন পাঠ্যক্রম আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করবে।
তিনি আরো বলেন, এ প্রয়াস তাদেরকে জলবায়ু সহনশীল হওয়ার বিষয়ে সচেতন করবে এবং দেশকে একটি উন্নত, জ্ঞান-ভিত্তিক অর্থনীতিতে পরিণত করতে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাদেরকে সত্যিকারের এজেন্ট হিসেবে গড়ে তুলবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা গবেষণা ও উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। কারিগরি শিক্ষার জন্য, আমাদের লক্ষ্য হলো আরও ভালো সংযোগ শিল্প স্থাপন করা।
তিনি বলেন, আমাদের সন্তানদের এমন দক্ষতা থাকা উচিৎ যা তারা বিশ্বের যে কোনও স্থানে ব্যবহার করতে পারে।
তিনি বলেন, যোগ্যতার পারস্পরিক স্বীকৃতির জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা বুনিয়াদী এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ উন্নত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বহুভাষিক শিক্ষার প্রসারের জন্য দেশে আমাদের কিছু নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা রাখাইন প্রদেশ থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া এবং আমাদের ভূখন্ডে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ শিশুকে মিয়ানমারের পাঠ্যসূচিতে শিক্ষা দিচ্ছি।
তিনি বলেন, মানসম্পন্ন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার জন্য তার সরকারকে অবশ্যই শিক্ষকদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং প্রণোদনার জন্য বিনিয়োগ করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের জিডিপির অনুপাতে শিক্ষার জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের এসডিজি-৪ অর্জনের জন্য তাদের আর্থিক প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে। বিশ্বব্যাপী অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ব্যয় করা সম্পদকে শিক্ষার জন্য একটি সুষ্ঠু অংশীদারিত্বের জন্য প্রদান করা উচিৎ।
তিনি বলেন, আমরা স্থানীয় থেকে জাতীয় পর্যায়ে এসডিজি-৪ সূচকগুলো পর্যবেক্ষণ করা অব্যাহত রাখবো। শিক্ষা হচ্ছে জাতির মেরুদন্ড। আমাদেরকে অবশ্যই জিডিপিতে একটি সমতা এবং অধিকার ভিত্তিক আনুপাতিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী ট্রান্সফর্মিং এডুকেশন সামিট আয়োজনের জন্য মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই শীর্ষ সম্মেলন কাজের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের পরিবর্তনের সঙ্গে শিক্ষা সম্পর্কে নতুন চিন্তা-ধারার প্রতিফলন।
তিনি আরো বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারী সারা বিশ্বে শিক্ষা লাভের ক্ষতি করেছে। বাংলাদেশে আমরা ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ছয় লাখ স্কুল শিক্ষার্থীকে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষায় তালিকাভূক্ত করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ৫ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের টিকা দেওয়া শুরু করেছি। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থী উপবৃত্তি এবং বৃত্তি পাচ্ছে।’
তিনি বলেন, সরকার কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন পরিবারগুলোকে মোবাইল গেটওয়ের মাধ্যমে নগদ প্রণোদনা প্রদান অব্যাহত রাখবে।
তিনি বলেন, উপবৃত্তি, দুপুরের খাবার এবং বিনামূল্যে পাঠ্য বই বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আমাদের সফল কর্মসূচিগুলো অব্যাহত রাখা হবে।
মহামারী পরিস্থিতি দূরশিক্ষণ ব্যবস্থা উদ্ভাবনের সুযোগ খুলে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে তারা একটি মিশ্র শিক্ষা ব্যবস্থা মহাপরিকল্পনা তৈরি করেছেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা আগামী বছরের মধ্যে প্রায় ৫৯,৭৮০টি মাল্টি-মিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করবো। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডিজিটাল বিভাজন কমানোর দিকে মনোনিবেশ করবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর অনুপাতে সমতা অর্জনে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করেছে।
তিনি বলেন, আমরা উচ্চ ও কারিগরি শিক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীর অনুপাতে ব্যবধান কমাতে কাজ চালিয়ে যাব। আমাদের মেয়েদের শিক্ষিত করা সবসময়ই আমার প্রধান অগ্রাধিকারের অন্যতম।বাসস