প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে তার সরকার ‘ডেল্টা প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করছে। এক্ষেত্রে অর্থায়ন থেকে শুরু করে জ্ঞান, প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ে বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ এবং উন্নয়ন অংশীদারদের সহযোগিতা অথবা অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন।
ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে সুরক্ষিত করতে আমরা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারে। আর আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ আন্তর্জাতিক সম্মেলন : সমস্যা ও বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক দুইদিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। এতে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা না থাকা সত্ত্বেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ একটি ব-দ্বীপ। এখানে ৭০০ নদী এবং বিস্তীর্ণ নিচু জমি ও জলাভূমি রয়েছে। তিনি বলেন, এ কারণে বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারে। আর আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা হলো তথ্যপ্রযুক্তি ও জ্ঞানভিত্তিক টেকনো-ইকোনমিক মহাপরিকল্পনা। এর পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়নে ২০২৫ সাল নাগাদ জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থের প্রয়োজন হবে। ফলে অর্থায়ন থেকে শুরু করে জ্ঞান, প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। তিনি এজন্য বিভিন্ন বন্ধুপ্রতিম দেশ এবং উন্নয়ন সহযোগীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এ ব্যাপারে সর্বপ্রথম নেদারল্যান্ডস এগিয়ে আসায় শেখ হাসিনা দেশটির নেতাদের ধন্যবাদ জানান এবং এ ব্যাপারে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উল্লেখ করেন।
সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কথা চিন্তা করেই তার সরকার কিছু স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করছে। তিনি বলেন, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, যাতে বাংলাদেশকে আমরা সুরক্ষিত করতে পারি। শুধু আজকের জন্য নয়, আগামী প্রজন্মের জন্যও বাংলাদেশ যাতে টেকসই হয়, এর অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যাতে অর্জন করা সম্ভব হয়। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা এ ব-দ্বীপের সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন, লবণাক্ততা, পাহাড়ধস প্রভৃতি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে চলতে হয়। এজন্য আমরা ডেল্টা প্ল্যান গ্রহণ করেছি। জলবায়ু অভিঘাত থেকে দেশের জনগণকে বাঁচানোর পাশাপাশি তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ মৌলিক চাহিদাগুলো বাস্তবায়নেও আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।
তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি সুপেয় পানীয়জলের ব্যবস্থা এবং খাদ্য পুষ্টির নিশ্চয়তার ব্যবস্থা করা একান্ত অপরিহার্য। দিনদিন জনসংখ্যা বাড়লেও ভৌগোলিক সীমারেখা বাড়বে না, সেটি মাথায় রেখেই আমরা গবেষণা করছি। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতিও তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের জনগণ পিছিয়ে থাকবে না। বরং এগিয়ে যাবে এবং সেটা সরকার প্রমাণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অন্যদিকে কোভিড-১৯-এর আঘাত। আবার এদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। এর মাঝেও দেশের মানুষের যাতে কোনো রকম কষ্ট না হয়, সেজন্য সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এক্ষেত্রে তার সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন প্রণোদনার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। দেশের প্রত্যেক মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি, গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দিয়েছি। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি এবং সর্বোপরি ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনীতির গতিকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ পরিকল্পনার অনেকগুলো কর্মসূচি বাস্তবায়ন সরকার করে যাচ্ছে উলেখ করে তিনি বলেন, ডেল্টা প্ল্যান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এটির বাস্তবায়নের পথ আরও সুগম হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগ এবং নেদারল্যান্ডসের দূতাবাস যৌথভাবে ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ আন্তর্জাতিক সম্মেলন : সমস্যা ও বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত অ্যনি গেরাড ভান লিউয়েন বক্তব্য দেন।