বিশ্ব পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, বাংলাদেশে তেলের সরবরাহ স্থিতিশীল থাকবে বলে জানিয়েছেন সফররত সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ।
বুধবার (১৬ মার্চ) সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে রাজাধানীর সোনারগাঁও হোটেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা জানান তিনি।
বৈঠক শেষে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে প্রথম রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সংলাপের পর দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুল্ক খাতে সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি সই করেন। এ ছাড়া দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের পর সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সল বিন ফারহান সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে আসতে পারাটা আনন্দের। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সকালে দেখা করেছি। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সৌদি আরব গর্বিত। সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা বেশ আশাবাদী। রাজনৈতিক সংলাপে চমৎকার আলোচনা হয়েছে। সেখানে অনেক বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দুই দেশের ভবিষ্যৎ রূপকল্প নিয়ে আমাদের মধ্যে সাযুজ্য রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, নিজেদের অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বৈশ্বিক ক্ষেত্রেও আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক সংলাপের প্রসঙ্গ টেনে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের অংশীদারত্ব কীভাবে বিস্তৃত করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশের ২৫ লাখ কর্মী আমাদের উন্নয়নের পথযাত্রায় অবদান রাখছেন। সৌদি আরবের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে বাংলাদেশে কয়েক শ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। আমরা শক্তিশালী ভিত্তির ওপর আরও ব্যাপকতর অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। বাংলাদেশে অবস্থিত সৌদি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেও আমরা বাংলাদেশ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করছি। আমাদের আরও অনেক কিছু করার আছে। আমাদের অংশীদারদের নিয়ে আমরা সেই সম্ভাবনাকে আরও বিস্তৃত করার জন্য কাজ করতে চাই।
ফয়সল বিন ফারহান বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আমি এ বিষয়ে একমত হয়েছি, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের ভিত্তিতে দুই পক্ষের কর্মকর্তারা সহযোগিতা এগিয়ে নিতে কাজ করবেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, প্রথমবারের মতো দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপ হলো। সৌদি আরব নিজের দেশের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে পরিবেশবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য পাঁচ হাজার গাছের চারা লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার সৌদি আরবে লাগানো হবে, বাকিটা মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোতে। এখানে আমরা তাদের সঙ্গে অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী। আমরা গাছও দিতে চাই। গাছের পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করতে আমরা আগ্রহী।
দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের প্রসঙ্গ টেনে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে সৌদি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলেছি। এর মধ্যেই ২০টি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। শিগগিরই এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
হজযাত্রীদের হয়রানি বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ থেকে এবার যাঁরা হজে যাবেন, তাঁরা যেন এ দেশ থেকেই ভিসার অনুমোদন পান, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সুখের বিষয় হচ্ছে, এবার যাঁরা হজে যাবেন, তাঁদের শতভাগেরই ভিসার অনুমোদন হবে এখানে, যাতে কোনো হয়রানি না হয়।
আব্দুল মোমেন আরও বলেন, সৌদি আরব বাংলাদেশের ২৬৫ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়েছিল। কিন্তু মাত্র ৮৫ শিক্ষার্থী সৌদি আরবে গেছেন। বাকিরা কেন গেলেন না, সেজন্য আমাদের কাজ করতে হবে।
সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসেন। আজই তিনি ঢাকা ছাড়েন।