বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী আধুনিকায়নে এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ সংক্রান্ত দুটি চুক্তি জিসোমিয়া (জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট) এবং আকসা (অ্যাকুজিশান অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট) নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।
এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী। বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নিরাপত্তা সংলাপের ৮ম রাউন্ড ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি বনি ডেনিস জেনকিন্স নিজ নিজ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
বৈঠকের উদ্বোধনী বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার অংশীদারিত্বকে গভীরভাবে মূল্য দেয়। মার্কিন প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্কের প্রশংসা করেছে, যা উভয় পক্ষের মধ্যে নিয়মিত সংলাপের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে।
দিনব্যাপী বৈঠকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা, বাংলাদেশ ইউএস সিকিউরিটি কো-অপারেশনসহ সামরিক প্রশিক্ষণ, সমুদ্র নিরাপত্তা, প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তি, প্রতিরক্ষা ক্রয় ও সক্ষমতা উন্নয়ন, আঞ্চলিক সমস্যা যেমন রোহিঙ্গা, ইন্দো-প্যাসিফিক এবং সন্ত্রাস দমন ও বেসামরিক নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে আলোচনা করা হয়।
বৈঠকে জিসোমিয়া ও আকসার মতো প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে দুই পক্ষ গঠনমূলক আলোচনা করেছে। মার্কিন পক্ষ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সাফল্য ও নেতৃত্বের প্রশংসা করেছে। তারা বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে সহায়তা করতে ইচ্ছুক।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য সমর্থন অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার স্বীকৃতিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ। বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সমর্থন প্রকাশ করেছে ।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে মার্কিন পক্ষকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সন্ত্রাস, সহিংস চরমপন্থা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে র্যাবের অগ্রণী ভূমিকা তুলে ধরেছে। র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা যে অযৌক্তিক তাও বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ বিষয়ে দুই পক্ষ আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে।
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক গোলাম সারওয়ার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের প্রতিনিধিরা।
বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধি দলে ছিলেন সহকারী সচিব জেসিকা লুইস এবং ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি কেলি কিডারলিং। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন।