মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) সঙ্গে বৈঠকের সময় সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। খবর বিবিসি।
চার দিনের মধ্যপ্রাচ্য সফরের তৃতীয়দিন শুক্রবার সৌদি আরবে পৌঁছান বাইডেন। সফরের প্রথম দিনে গত বুধবার ইসরায়েল যান তিনি।
এর আগে মানবাধিকার রেকর্ডের কারণে ‘অস্পশ্য রাষ্ট্রে’ পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য সৌদি আরবে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, ২০১৮ সালের হত্যাকাণ্ডটি ‘আমার ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’। আরও বলেন, দুই দেশ অন্যান্য বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে।
বৈঠক শেষে বাইডেন জানান, সৌদি যুবরাজ খাশোগি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন ও দায়ীদের জবাবদিহির জন্য আটক করেছেন বলে উল্লেখ করেন।
বাইডেন ও এমবিএস সাক্ষাতে পরষ্পরের মুষ্টিতে মুষ্টি স্পর্শ করেন আর বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজের সঙ্গে করমর্দন করেন।
সাংবাদিকদের বাইডেন বলেন, ‘বৈঠকের শুরুতেই আমি খাশোগি হত্যাকাণ্ডের কথা তুলেছি, ওই সময় এ বিষয়ে আমি কী ভাবতাম আর এখন কী ভাবি তা পরিষ্কার করেছি।’
আরও বলেন, ‘আমি সোজাসাপটা ও সরাসরি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি আমার দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার করে দিয়েছি। আমি অত্যন্ত সোজাসাপটাভাবে বলেছি, মানবাধিকারের একটি ইস্যুতে একজন আমেরিকান প্রেসিডেন্টের নিশ্চুপ থাকাটা অসংগতিপূর্ণ।’
২০১৮ সালের ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে সৌদি আরবের এজেন্টদের হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন জামাল খাশোগি। নিজের বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তুলতে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। ৫৯ বছর বয়সী এই সাংবাদিক ছিলেন সৌদি সরকারের বিভিন্ন নীতি ও রাজপরিবারের কঠোর সমালোচক।
সৌদি কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে দাবি করেছিলেন, খাশোগি সৌদি কনস্যুলেট ভবন ছেড়ে গেছেন, কিন্তু চাপের মুখে পরে হত্যার কথা স্বীকার করে দেশটি। ২০১৯ সালে জাতিসংঘের একটি তদন্তে বলা হয়, খাশোগির হত্যা একটি ‘পূর্বপরিকল্পিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’।
বলা হচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বাস্তবতায় সৌদি আরবকে অস্পৃশ্য রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসে দেশটির সঙ্গে, তথা মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতেই এখন বেশি মনোযোগী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আর এ কারণেই বিশ্বজুড়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে বাইডেনের এই মধ্যপ্রাচ্য সফর।
বাইডেনের এই সফরে সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কের উন্নয়নও একটি বিষয়।
সৌদি আরব সবসময় বলে এসেছে, স্বাধীন, সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের পথে যাবে না। কিন্তু গত কয়েক বছরে ইসরায়েল প্রশ্নে সৌদি আরবের কঠোরতা খানিকটা কমেছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।
এ পরিস্থিতিতে দুই দেশের সম্পর্কে আরো পরিবর্তন দেখার আশা নিয়েই মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু করছেন জো বাইডেন। গত শনিবার দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এ প্রকাশিত লেখায়ও সে কথাই বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
সৌদি আরবও সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। শুক্রবার ‘সব ধরনের উড়োজাহাজের জন্য’ নিজেদের আকাশসীমা থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। দৃশ্যত ইসরায়েলের প্রতি উদার মনোভাবের অংশ হিসেবেই এ ঘোষণা দেওয়া হলো। ইসরায়েলকে সুবিধা দিতেই ‘সব উড়োজাহাজের জন্য’ সৌদির আকাশসীমা উন্মুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সৌদি আরব সফরের আগমুহূর্তে এ ঘোষণা এল।
ইসরায়েলের সঙ্গে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই সৌদি আরবের। এত দিন দেশটির আকাশসীমা ব্যবহার করে ইসরায়েলে চলাচলের ক্ষেত্রে উড়োজাহাজগুলোর ওপর বিধিনিষেধ ছিল।