মুহাম্মদ আলী,স্টাফ রিপোর্টার:
বান্দরবান পার্বত্য জেলার ঐতিহ্যবাহী রাজকর আদায়ের উৎসব, রাজ পূন্যাহ মেলা প্রতিবছর ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে আয়োজন করা হলেও গত ৩ বছরসহ এবারও ১৪৪তম রাজপূন্যাহ’র আয়োজন হবেনা, গত ২৫ নভেম্বর পাহাড়বার্তায় একটি সংবাদ প্রকাশ করার পর বিষয়টি জানাজানি হলে এবার রাজপূণ্যাহ আয়োজনের দাবী জানালেন বোমাং সার্কেলের ২১৯জন হেডম্যান ও কারবারি।
গত ১৯ ডিসেম্বর বোমাং রাজা উ: উচপ্রু এর কাছে প্রেরিত হেডম্যান ও কারবারিদের স্বাক্ষরিত এক পত্রে বলা হয়, বোমাং সার্কেলের হেডম্যান, কারবারি ও প্রজারা মহামারি করোনা ও নানা প্রতিকূলতায় বেশ কয়েকবছর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশস্বরুপ দক্ষিণ এশিয়ার নৃ-তাত্বিক অধিবাসী অধ্যুষিত ১৩টি জাতিসত্বার বোমাং সার্কেলে বাৎসরিক খাজনা আদায় উৎসব রাজ পূণ্যাহ অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় রাজদর্শনে পূর্নপ্রত্যাশি আপামর প্রজাদের মতো আমরাও মর্মাহত। রাজপূণ্যাহর এই ছন্দপতন অনভ্রিপ্রেত ও অপ্রত্যাশিত, আমরা রাজপূণ্যাহ’র আয়োজনের দাবী জানায়।
পত্রে আরো বলা হয়, রাজপূণ্যাহ’কে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বারক ঘোষনার জন্য জাতিসংঘের নিকট আবেদন জানায়।
২০১৯ সালে অজ্ঞাত কারনে বান্দরবানের বোমাং রাজ পরিবার জেলার ঐতিহ্যবাহী রাজ পূন্যাহ মেলার আয়োজন না করলেও রাজকর আদায় করে এবং ২০২০ সালে রাজপূন্যার আয়োজন করা হয়নি, এবারও রাজপূন্যাহ’র আয়োজন না থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে অনেকে।
প্রতিবছর মেলাকে ঘিরে জেলার ১১টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য মন্ডিত মনোজ্ঞ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এ সময় পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মিলন মেলা পরিণত হয়, পর্যটকসহ দেশি-বিদেশী লক্ষাধিক মানুষ ভীর জমায় পর্যটন শহর বান্দরবানে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রবীণ নেতা হিসাবে বোমাং রাজার আর্শিবাদ পাওয়ার জন্য তিন পার্বত্য জেলার দুর্গম পাহাড়ী এলাকা থেকে পাহাড়ীরা রাজ দরবারে এসে ভীর জমান।
বোমাং সার্কেলের ৩৪০ তারাছা মৌজার হেডম্যান উনিহ্লা বলেন, অন্তত একদিন হলেও রাজপূণ্যাহর আয়োজন করা হোক, রাজপূণ্যাহ না হলে আমাদের পাহাড়ের ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে।
বোমাং রাজ পরিবার সূত্র আরো জানায়, ১৮৭৫-১৯০১ সালের নবম বোমাগ্রী উ: সাক হ্নাই ঞো এর আমল থেকে সম্প্রিতির মধ্যে দিয়ে বোমাং সার্কেলে রাজপূণ্যাহ উদযাপন হয়ে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি ৩ জেলাকে তিনটি সার্কেলে বিভক্ত করে খাজনা আদায় করা হতো। ১৮৬৬ সাল পর্যন্ত চাকমা রাজা পার্বত্য এলাকা শাসন করতো। ১৮৬৭ সালে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ অঞ্চলের মারমা অধ্যুষিত এলাকাকে বোমাং সার্কেল, ১৮৭০ সালে রামগড় ও মাইনি উপত্যকার এলাকাকে নিয়ে মং সার্কেল গঠিত হয়।
বোমাং সার্কেলের ৩৩০ হ্নারা মৌজার হেডম্যান রাজু মং মার্মা বলেন, এভাবে টানা রাজপূণ্যাহ না হওয়া মানে পাহাড়ের ঐতিহ্য বিলুপ্তি হয়ে যাওয়া, তাই আমরা রাজ পূণ্যাহর আয়োজনের জন্য বোমাংরাজার কাছে আবেদন করেছি।
প্রায় ১৭৬৪ বর্গমাইল এলাকার বান্দরবানের ৯৫টি, রাঙামাটির রাজস্থলি ও কাপ্তাই উপজেলার ১৪টি মৌজা নিয়ে বান্দরবান বোমাং সার্কেল। দুইশত বছরের ঐতিহ্য অনুসারে বছরে একবার এই মেলা আয়োজন করা হয় বোমাং সার্কেলের পক্ষ থেকে। বান্দরবান বোমাং সার্কেলে ১০৯ জন হেডম্যান ও ১৩০০ কারবারি রয়েছে।
বান্দরবানের বোমাং রাজা উ চ প্রু চৌধুরী’র সহকারী অং ঝাই খ্যায়াং বলেন, করোনা পরিস্থিতি ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারনে বোমাং রাজা রাজপূণ্যাহ করবেনা, তবে হেডম্যান ও কারবারিরা নিজ নিজ মৌজায় রাজপূণ্যাহর আয়োজন করতে পারে, তাতে বাধা নেই।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ নভেম্বর পাহাড়বার্তা’য় ”বান্দরবানে এবারও হচ্ছেনা রাজপূণ্যাহ” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হলে রাজপূণ্যাহ আয়োজন না হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পেলে বান্দরবানের বোমাং সার্কেলের হেডম্যান, কারবারি ও প্রজারা হতাশা প্রকাশ করেন।