বাবার প্রভাব খাটিয়ে চাকরি নেওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। তাকে এ যাবৎ দেওয়া সমস্ত বেতনও ফেরত দিতে হবে। আদালত বলেছে, দুটি কিস্তিতে ওই টাকা ফেরত দিতে হবে অঙ্কিতাকে।
অঙ্কিতার বিরুদ্ধে বাবার প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ ভাবে শিক্ষকতার চাকরি নেওয়ার অভিযোগ ছিল। অভিযোগ করেছিলেন ববিতা সরকার নামের এক পরীক্ষার্থী। অঙ্কিতাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়ে আদালত জানিয়েছে, নিজেকে শিক্ষক হিসাবেও পরিচয় দিতে পারবেন না অঙ্কিতা। আদালতের নির্দেশ, তিনি আর ওই স্কুলে ঢুকতেই পারবেন না।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রায় ৪১ মাসের বেতন দুই কিস্তিতে ফেরত দিতে হবে অঙ্কিতাকে। প্রথম কিস্তি দিতে হবে ৭ জুন। দ্বিতীয় কিস্তির তারিখ ৭ জুলাই।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের নভেম্বরে নিয়োগ পরীক্ষার দ্বিতীয় মেধাতালিকায় অঙ্কিতার নাম ওঠে। কিন্তু পরে প্রথম মেধাতালিকায় প্রথম ২০-এ নাম না থাকা অঙ্কিতাকে দ্বিতীয় তালিকায় একেবারে প্রথমে নিয়ে আসা হয় ‘অবৈধ’ ভাবে।
ওই মেধাতালিকার ২০ নম্বরে যে পরীক্ষার্থীর নাম ছিল, তার থেকেও ১৬ নম্বর কম পেয়েছিলেন অঙ্কিতা। তার প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৬১। যেখানে ২০ নম্বরে থাকা পরীক্ষার্থী ববিতার নম্বর ছিল ৭৭। অঙ্কিতার নাম মেধাতালিকায় ঢোকানোয় ববিতা চাকরির সুযোগ হারান। কারণ তার নাম ২১ নম্বরে চলে যায়।
সম্প্রতি ঘটনাটির কথা আদালতকে জানিয়েছিলেন সদ্য ইস্তফা দেওয়া নিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার। এর পরেই অঙ্কিতার বাবা রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশকে সিবিআইয়ের সামনে হাজির হতে বলে কলকাতা হাই কোর্ট।
বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতায় এসে নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের দপ্তরে হাজির হন মন্ত্রী পরেশ। শুক্রবার সকালে তাকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। অঙ্কিতাকে নিয়ে হাই কোর্টের নির্দেশ আসে পরেশের জেরা চলাকালীনই।
কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ ইন্দিরা বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন মেখলিগঞ্জের বিধায়ক তথা রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারী। তিনি ৪১ মাস চাকরি করছেন।
তবে সম্প্রতি নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্ত শুরু হওয়ার পর অঙ্কিতার নিয়োগ বেআইনি বলে অভিযোগ ওঠে। বাবার সুপারিশেই অঙ্কিতা যোগ্য নম্বর না পেলেও চাকরিতে যোগ দেন বলে অভিযোগ। মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অঙ্কিতাকেও ডেকে পাঠায় সিবিআই। কিন্তু তিনি হাজিরা এড়ান।
মামলার শুনানি শেষ হয়েছে আজ শুক্রবার। শুক্রবার এই সংক্রান্ত শুনানিতে আদালতের নির্দেশের পরেও মন্ত্রীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হল না কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছে হাইকোর্ট। আদালত জানতে চায় অঙ্কিতা অধিকারীকে নিয়ে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? সে কি এখনও চাকরিতে আছে? স্কুলে কাজ করছে? এখনও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি কেন? এরপরই আদালত নির্দেশ দেয় অঙ্কিতা অধিকারীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার।
১৭ মে মামলাটি ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (সিবিআই) মাধ্যমে তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বিচারপতি আরেক নির্দেশে এ ঘটনার জন্য রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পরেশচন্দ্র অধিকারীকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছে সুপারিশ করেছেন।সূত্র-দেশ রূপান্তর