আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রাজনৈতিক আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এখন সড়ক দুর্ঘটনা নিয়েও রাজনীতি করছে। নেতিবাচক রাজনীতি করতে করতে এবং মিথ্যা কথা বলতে বলতে বিএনপির অবস্থা এখন এমন হয়েছে যে, বজ্রপাতে মৃত্যু হলেও তার দায় সরকারের ওপর চাপানোর অপরাজনীতিতে লিপ্ত হয়।
শিবচরে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সোমবার (২০ মার্চ) এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির শাসনামলে সড়ক যোগাযোগ খাত ছিল সবচেয়ে অবহেলিত। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর যোগাযোগ খাতকে অগ্রাধিকার দেন এবং তার সুদক্ষ নেতৃত্বে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়েছে। এ সত্য স্বীকার করতেও বিএনপি লজ্জা পায়।
তিনি বলেন, প্রতিটি মৃত্যুই বেদনার। আমরা সড়কে একটি মৃত্যুও চাই না। গতকাল সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কুতুবপুরে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটা সড়কের জন্য নয়।
মন্ত্রী বলেন, সড়ক ও পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং দুর্ঘটনা রোধে শেখ হাসিনার সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’-এর অধীনে প্রণীত বিধিমালাও কার্যকর করা হয়েছে। দেশব্যাপী জাতীয় মহাসড়কসমূহ পর্যায়ক্রমে সার্ভিসলেনসহ ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে।
তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি জাতীয় মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ শেষ হয়েছে। একটি প্রকল্পের মাধ্যমে দুর্ঘটনাপ্রবণ স্পট ঝুঁকিমুক্ত করা হয়েছে। অন্যান্য স্পট ঝুঁকিমুক্ত করার কাজও হাতে নেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনাপ্রবণ সড়ক মোহনাসমূহ চিহ্নিত করে প্রকৌশলগত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থাপন করা হচ্ছে প্রয়োজনীয় সাইন-সিগনাল। পণ্য পরিবহন চালকদের বিশ্রামের জন্য সিরাজগঞ্জের পাঁচিলায়, কুমিল্লার নিমসারে, হবিগঞ্জের জগদীশপুরে এবং মাগুরার লক্ষীকান্দরে চারটি বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের আগে বাধ্যতামূলকভাবে পেশাজীবী গাড়িচালকদের দক্ষতা ও সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক রিফ্রেশার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৬২ হাজার ৯০০ পেশাজীবী গাড়িচালককে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নকল্পে ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি থেকে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নকালে বাধ্যতামূলকভাবে প্রার্থীদের ডোপটেস্ট সনদ বা রিপোর্ট নেওয়া হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় নিরাপদ সড়ক করিডোর বাস্তবায়ন, পাঁচ হাজার কিলোমিটার সড়কে নিরাপত্তা কার্যক্রম গ্রহণ, পেশাদার ড্রাইভারদের জন্য ট্রেনিং, ভেহিকল পরিদর্শন কার্যক্রমের আধুনিকীকরণ, তিনটি হাসপাতাল (মুগদা, টাঙ্গাইল এবং বগুড়া) ট্রমা সেন্টারের আধুনিকীকরণ, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ, ক্রাশ ডাটাবেস সিস্টেম আধুনিকীকরণ করার লক্ষ্যে বহুমাত্রিক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি একনেক সভায় উপস্থাপনের জন্য প্রক্রিয়াধীন।
তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সড়কে চালক, পরিবহন শ্রমিক ও পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গৃহীত সব পদক্ষেপের জন্য সরকারকে সাধুবাদ না জানিয়ে হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে সরকারের সমালোচনা করে যাচ্ছে বিএনপি।