বিএনপির ডাকা হরতাল প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। হরতাল কর্মসূচির নামে বিএনপি নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে তৎপর। এর বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের রাজপথে সতর্ক পাহারায় থাকার আহ্বান জানান দলের নেতারা। তারা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত। তাদের হরতালের ভয় দেখিয়ে কাবু করা যাবে না। বিএনপি হরতালের নামে অশান্তি সৃষ্টি করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। বরং তাদের প্রতিহত করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।
শনিবার বিকালে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে নেতারা এসব কথা বলেন। এ সময় বিএনপি মহাসমাবেশের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি পালন করেছে অভিযোগ করে নেতারা বলেন, আমরা শান্তি সমাবেশ করেছি। আর বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য করছে। তাদের মোকাবিলা করা হবে। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, বিএনপি নিজেরা নিজেরা মারামারি করে, পুলিশের ওপর হামলা করে; ১৫ মিনিটে নয়াপল্টন সাফ। এই ধরনের নেতাকর্মী নিয়ে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। ছাত্রলীগ ছেড়ে দিলেই তো তারা পালানোর পথ পাবে না। বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, বিএনপি নিজেরাই মারামারি করে অনুষ্ঠান থেকে পালিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, তারা হরতালের ভয় দেখিয়ে আমাদের কাবু করার চেষ্টা করছে। এই হরতাল আমরা মানি না। এ সময় নেতাকর্মীদের হরতালের বিরুদ্ধে রাজপথে থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, আজকের হামলার মধ্য দিয়ে বিএনপি প্রমাণ করেছে, তারা আবার সন্ত্রাসী চরিত্রে ফিরে গেছে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতকে মোকাবিলা করতে হবে। সেজন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
সমাবেশে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, যাদের পায়ের তলায় মাটি নেই, তারাই সকালে-বিকালে বলে ‘ঈদের পরে, রোজার পরে, বৃষ্টির পরে, শীতের পরে সরকার পতনের আন্দোলন হবে।’ আজ পর্যন্ত তারা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে পারেনি এবং পারবেও না।
বিএনপি ঘোষিত হরতাল প্রত্যাখ্যান করে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে। সমাবেশ শেষে বাসায় যাওয়ার সময় কর্মীরা ‘হরতাল মানি না, মানব না’ স্লোগান দিতে থাকে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, বিএনপি পরবর্তী কর্মসূচি আনার জন্য আমেরিকার ক্লাবে ঢুকেছে, ‘ডিম পাড়ে হাঁসে খায় বাগডাসে।’ এ হাঁস শুধু ধান খায় না, শামুকও খায়। ওরা যাদের বন্ধু হয়, তাদের শত্রু প্রয়োজন নেই।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আপনারা খবর পেয়েছেন- বিএনপি পালিয়ে গেছে। জামায়াত পালিয়ে গেছে। তারা প্রধান বিচারপতির বাড়ি ও পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়েছিল। পুলিশের ওপর হামলা করে একজনকে হত্যা করেছে। এরপর পুলিশ এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছিল। এখন সেখানে শুধু কাক আছে কাক। আর আকাশে কিছু চিল উড়ছে, আর কিছু নেই।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি আবারও প্রমাণ করেছে তারা সন্ত্রাসী দল। এরা কখনো শান্তি চায় না। আজকে পরিষ্কারভাবেই ঘোষণা করতে চাই- তারা দেশের শান্তি নষ্ট করে অশান্তি করতে চায়, তাদের রাজপথেই মোকাবিলা করা হবে।
নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপি হরতাল দিয়েছে। সেটি শান্তিপূর্ণ হলে আপত্তি নেই। কিন্তু অশান্তি সৃষ্টি করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা তাদের প্রতিহত করব। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকব। সেজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, বিএনপি-জামায়াত আজ আমাদের আঘাত করেছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকরা রাজপথে নেমেছে। আমরা রোববার পাড়া-মহলায় দুর্গ গড়ে তুলব। হরতাল প্রতিহত করা হবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, গত ১৫ বছরে আজকের মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি আমরা পালন করিনি। আজকে বিএনপি ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি পালন করেছে। আমরা শান্তি সমাবেশ করছি।
সংঘাত করলে যুবলীগ ঘরে বসে থাকবে না মন্তব্য করে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, বাংলাদেশের যুব সমাজ কোনো অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় বসতে দেবে না। তরুণ সমাজ কোনো অনির্বাচিত সরকার চায় না। তাই বিএনপিকে আহ্বান করব নির্বাচনে আসুন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচির পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম, কেন্দ্রীয় সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, আনিসুর রহমান, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, গোলাম কবির রাব্বানী চিনু, তারানা হালিম, সানজিদা খানম, মোহাম্মদ এ আরাফাত, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্র, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম পারভীন শিলা, যুব মহিলা লীগের সভাপতি ডেইজী সরোয়ার, সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের নেতাদের মধ্যে নুরুল আমিন রুহুল এমপি, ডা. দিলীপ রায়, হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন, আবদুস সাত্তার মাসুদ, মিরাজ হোসেন, আক্তার হোসেন, হাবিব হাসান এমপি, মিজানুর রহমান মিজান, খসরু চৌধুরী প্রমুখ।